বিশ্বজমিন
বিতর্কের মধ্য দিয়ে বিদায় নিচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
মানবজমিন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ২৮ নভেম্বর ২০২২, সোমবার, ৫:৪৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৪৯ অপরাহ্ন
সেনাবাহিনী অরাজনৈতিক থাকবে। এমন প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান এবং সেনাবাহিনী নিয়ে বার বার বিতর্ক হয়েছে। রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে এসেছে তারা। আগে থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর বিরাট রকম প্রভাব আছে- এটা সর্বজন স্বীকৃত। তার ওপর সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় এনেছিল বলে অভিযোগ আছে। এটা যে সত্য, সম্প্রতি ডন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে। আবার সেই সেনাবাহিনীই নাকি ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেয়ার পথ করে দিয়েছে। এ অভিযোগ ইমরান খান ও তার দলের। বিভিন্ন মিডিয়ায় সেনাপ্রধানের পরিবারের সদস্যদের অসম আয়ের রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। এ নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে চলছে চাপানউতোর।
তিনি বলেন, কিছু সমালোচনা এবং ব্যাপকভাবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা এবং সতর্কতার সঙ্গে মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে অবমাননা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনী থাকবে অরাজনৈতিক। সেনাবাহিনী রাজনৈতিক কোয়ারেন্টিনে থাকার মাধ্যমে দেশে রাজননৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে। জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বন্ধন হবে আরও শক্তিশালী।
পাকিস্তানের অনলাইন ডন লিখেছে, কয়েক মাসে সেনাবাহিনী অরাজনৈতিক অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বার বার বলেছেন জেনারেল বাজওয়া। তিনি বিদায়ের আগে দেয়া সাক্ষাৎকারে সে কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেনাদের হস্তক্ষেপের অভিযোগ, এক রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অন্য রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ আছে। ২৩শে নভেম্বর তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে সর্বশেষ সরকারি ভাষণ দিয়েছেন। এ সময় তিনি স্বীকার করেছেন, ৭০ বছর ধরে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছে সেনাবাহিনী। একে তিনি অসাংবিধানিক বলে চিহ্নিত করেছেন। তিনি মনে করেন এসব কারণে জনগণ সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে। জেনারেল বাজওয়া বলেন, এ জন্যই গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা আর কখনোই কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, আমরা কঠোরভাবে এটা মেনে চলবো এবং অনুসরণ করবো। ডিফেন্স অ্যান্ড মার্টিরস ডে উদযাপন উপলক্ষে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
এসব নিয়েই তিনি গালফ নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত বলেছেন। জেনারেল বাজওয়া বলেছেন, সব সময়ই জাতীয় সিদ্ধান্ত তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। দেশের রাজনীতিতে এই বাহিনীর ঐতিহাসিক ভূমিকা থাকার কারণে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণ এবং রাজনীতিকরা ভয়াবহ সমালোচনা করেছেন। সেনাবাহিনী শুধু তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে এবং তারা রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং বিধিবিধান করেছি।
পাকিস্তান এখন যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে সে প্রসঙ্গে জেনারেল বাজওয়া প্রথমেই আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের অবস্থান। ঐতিহাসিক যুদ্ধ, অনিষ্পণ্ন বিরোধের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা সুদূরপরাহত। পারস্পরিক লড়াই এবং অস্থিতিশীলতার কারণে বিশ্বের ন্যূনতম একক একটি অঞ্চল হিসেবে বিশ্বে আবির্ভূত হয়েছে এই এলাকা। অথচ এখানে আছে পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং বিশাল জনগোষ্ঠী। ‘কৌশলগত এক দাবারকোট’ হিসেবে বর্ণনা করা হয় এই অঞ্চলকে। কারণ, অতীতে এদের মধ্যে বড় শক্তির বিরোধ ছিল। বর্তমানে এখানে আছে দুই দশকের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আফগানিস্তানে যুদ্ধের কারণে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চীয় সীমান্তকে দেখা হয় অনেক বেশি অস্থিতিশীল হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেছে এবং কমেছে কিছু সহিংসতা। তবে পরিস্থিতি এখনও ঘোলাটে।
ইসলামাবাদ এখন একই সঙ্গে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কে সমতা আনার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান সব সময় তার মুসলিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। একই সঙ্গে তাদের সঙ্গে ইতিবাচক কাজের সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।