ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

‘কেমন বাজেট চাই’ অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয়

দেশের অর্থনীতি ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে জটিল হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার

(১ বছর আগে) ১৪ মে ২০২২, শনিবার, ১০:১১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:০৩ অপরাহ্ন

mzamin

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এবারের বাজেট যখন প্রণীত হচ্ছে, তখন পূর্ণভাবে দেশ করোনাত্তর পুনরুজ্জীবন এখনো হয়নি। ২০১৯ সাল সবচেয়ে শেষ স্বাভাবিক অর্থবছর ছিল, সেই স্বাভাবিক অর্থবছরে আমরা এখনো ফিরে যেতে পারিনি। এখন বিশ্বের পরিস্থিতি সম্বন্ধে আপনারা অবহিত। গত ১৫ বছরের ভেতর ২০০৮-৯ বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরে এত জটিল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের দেশে কখনো ছিল না। তাই আসছে বাজেটে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। 

শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর যৌথ উদ্যোগে ‘কেমন বাজেট চাই’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয়। এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলমের সঞ্চালনায় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলোচনায় অংশ নেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে জটিল হয়েছে আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। এই সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভঙ্গুরতা বা চ্যালেঞ্জগুলো সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় আমাদের মূল্যস্ফীতির ভেতর দিয়ে। আমাদের টাকার বিনিময় হারের ভেতর দিয়ে। খুব দ্রুত যেটা আসবে আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি সুদের হার উপরের দিকে যাবে। এবং এর সঙ্গে বড় ধরনের ঘাটতি বা যে ধরনের অর্থনৈতিক সংহতি দরকার সেটার জন্য বাজেটে বার্ষিক আমাদের যে রাজস্ব বাজেট আছে তার ভেতরে ভর্তুকির পরিমাণ প্রভূত পরিমাণে বাড়বে।

বিজ্ঞাপন
এবং সেটা ৫৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ৮০-৯০ হাজার কোটি টাকায় যেতে পারে এবং ভর্তুকি প্রয়োজনীয়তা আরও খুব দ্রুততার সঙ্গে বাড়বে। 

দ্বিতীয়ত, আর্থিক সামাজিক বাস্তবতায় সরকারের দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন আরও বেশি হবে। এই মুহূর্তে প্রায় এক-চতুর্থাংশ অর্থ সরকারের রাজস্ব বাজেটের এখন বৈদেশিক এবং অভ্যন্তরীণ অনেক বেশি। এবং সেই জন্য সাধারণ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির বিগত সময়ে সবচেয়ে শক্তির জায়গাটা ছিল বৈদেশিক খাত। অনেকে আপনারা আমরা উৎসাহ বোধ করি যে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। আমরা ভুলে যাই এই রপ্তানি হলো আমাদের আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার কারণে এটা হচ্ছে এবং বাণিজ্য ঘাটতি আমার ধারণা ৩২০০ কোটি টাকায় গিয়ে পরবর্তীতে ঠেকবে। অর্থাৎ টাকার মূল্যমান-এর উপরে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এখনই আপনারা বাজারে দেখছেন যে ৯৪-৯৫ টাকায় এলসি খোলা হচ্ছে। আর সরকারি হিসাবে থাকে সেটা ৮৭ টাকা। এই পার্থক্যটা হচ্ছে এটাকে কতদিন সরকার টিকিয়ে রাখতে পারবে এটার ব্যাপারে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে। কারণ হলো- আপনার যে মজুত আছে মজুতের ৪৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে এখন আমরা অর্থনীতির ভাষায় স্টেরিলাইজেশন করা, অর্থাৎ টাকাকে শক্তিশালী রাখা জটিল হবে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এ বছর খুবই জটিলভাবে আছে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে মূল্যস্ফীতি নাকি টাকার বিনিময় হার, নাকি সুদের হার- কোথায় আমরা করবো এঙ্কার করবো, কোনটাকে স্থিতিশীল রেখে অন্যগুলোকে নাড়াবো- এই সিদ্ধান্তে আমাদের আসতে হবে।

তৃতীয়ত, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থানে আপনার খুব ভালো করে জানেন যে ৩১ শতাংশ জিডিপি তার ভেতরে ২৩ শতাংশ আমাদের ব্যক্তি খাতের- এইটা আমার ২০১৮-১৯ সালের পর থেকে আদৌ বাড়েনি। এর ফলে অবধারিতভাবে কর্মসংস্থানের বিষয়টি সামনে চলে আসে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি প্রকাশ্য এবং প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব কর্মহীনতা যেটা করোনাকালে শুরু হয়েছিল এবং করোনা আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করেছি এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগের পরে তৃতীয় যে অগ্রাধিকারের কথা বলবো সেটা হল- সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে। অবশ্যই এই মুহূর্তে সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের মানুষদের করযোগ্য সীমা অবশ্যই সাড়ে তিন লাখ টাকাতে নিয়ে যাওয়া উচিত। এবং এটাকে বাড়ানো উচিত। একইরকমভাবে আমাদের দেখা উচিত যে এর বাইরে আর কোন কোন দুর্গত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে পারি কিনা।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, করোনার কারণে আমাদের উৎপাদন ক্যাপাসিটি কমে গেছে। সঙ্গে ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। এত দিন সরকার অবকাঠামোগত খাতে বিনিয়োগ করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছে। এখন প্রাইভেট বিনিয়োগ দরকার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে কিছুদিন আগে আমেরিকার ৪৩ সদস্যের প্রতিনিধি বাংলাদেশ ঘুরে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, সবাই বলে বেকার বেড়ে গেছে। কিন্তু আমরা যখন দক্ষ শ্রমিক খুঁজি পাই না। বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে। আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করতে হবে। এনবিআর করনেটের আওতা বৃদ্ধি করতে পারছে না। আসলে কর ব্যবস্থা ব্যবসাবান্ধব করতে হবে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানি খাত বড় হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যে পরিমাণ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, চলতি বছরে পোশাক খাতে তা ৪২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। কিন্তু আমি বলতে চাই বাংলাদেশের ট্যাক্স সিস্টেম ব্যবসাবান্ধব নয়। ব্যবসায়ীদের জন্য যেটা জুলুম। আইন করেই এটা করা হয়েছে। এটা বিনিয়োগের জন্য বড় বাধা। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
 

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status