দেশ বিদেশ
বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহের উদ্বোধন
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার কারণ জানালেন গভর্নর
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৪ অক্টোবর ২০২২, মঙ্গলবারবাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, কিছুদিন আগে কিছু পত্রিকার খবরে দেখলাম খুব সুন্দর করে লিখেছে ‘সঞ্চয়পত্রের বাজারে ধস’। এটা আসলে ধস নয়। আমরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগসীমা কমিয়ে দিয়েছি যেন মানুষ সেই টাকাটা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসেন। গতকাল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের হলরুমে আয়োজিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ-২০২২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসি’র কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ।
বন্ড মার্কেটের বিকাশে বড় সমস্যা ছিল সঞ্চয়পত্র উল্লেখ করে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, সঞ্চয়পত্রে খুব হাই ইন্টারেস্ট ছিল। এ কারণে বিনিয়োগের একটা বিরাট অংশ সঞ্চয়পত্রে ঢুকে যেত। এর মাধ্যমে গরিবের টাকা আমরা বড় লোকদের দিয়ে দিতাম। আমি অর্থ সচিবের দায়িত্ব নিয়ে সঞ্চয়পত্র যাতে একজন লোক ৫০ লাখ টাকার বেশি না কিনতে পারে সেই আইন করেছি। এখন কোনো ব্যাংকে ৫০ লাখের বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। আমরা চাই মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করুক।
গভর্নর বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের দুইটা পার্ট। এর মধ্যে একটা ইক্যুইটি মার্কেট আর একটা ডেপথ মার্কেট। ইক্যুইটি মার্কেটই হলো শেয়ার মার্কেট। বাংলাদেশে এই শেয়ার মার্কেটই ডেভেলপ করেছে। শেয়ার মার্কেটের আরেকটা অংশ যেটা আসলে বড় হওয়া উচিত সেটা হলো বন্ড মার্কেট। সেটা কিন্তু খুব বেশি গড়ে উঠেনি। সেটার সেকেন্ডারি মার্কেট আসলে ততটা ভালো কাজ করছে না। বন্ড মার্কেটকে বড় করতে যে সাপোর্ট দরকার সেটা গভর্নর হওয়ার পর বেশি অনুভব করলাম। গভর্নর বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতে উদ্যোক্তা ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে পুঁজি তুলে। অন্য প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে লোন নেয়। আর আমাদের দেশে হচ্ছে ঠিক এর উল্টো। সবাই ব্যাংক থেকেই লোন নিচ্ছে। কাজেই এখানে যদি লোন পরিশোধে কোয়ার্টার মিস করেন তাহলেই তিনি ডিফল্টার হয়ে যাচ্ছেন। কাজেই আমি মনে করি বন্ড মার্কেটকে যদি ডেভেলপ করতে পারি। আরও ভালো করতে পারি তাহলে সবাই বন্ড মার্কেটে যাবে। সেখান থেকে তারা টাকা তুলবে। আর ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করবে। গভর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক ফল্ট করেনি। আগামী ৫০ বছরেও ফল্ট করবে না বলে আমি মনে করি। তাহলে সব তো সিকিউরড বন্ড। তারা কেন মার্কেটে আসবে না। সেটা কেন সাধারণ লোক কিনবে না। আমার কাছে এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬টি ব্যাংক এসেছে। সবাইকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি যে, ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড ক্যাপিটাল মার্কেটে ইস্যু করতে হবে। আমরা ক্যাপিটাল মার্কেটে বন্ডগুলোকে বড় করার চেষ্টা করছি। এদিকে প্রতিবারের মতো এ বছরও ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ পালন করবে দেশের পুঁজিবাজার। তাই চলতি বছর বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসসি)। কমিশনের হলরুমে ‘বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ-২০২২’-এর উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। এ সময় বিএসইসি’র কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য বীমা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ সময় ডিএসসি, সিএসসি, এনবিআর, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবগুলো প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ সপ্তাহ পালন করছে বলেও জানান তিনি।