চট্টগ্রাম থেকে রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর সরানো নিয়ে অসন্তোষ

রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এতে দপ্তরটির চট্টগ্রামে কর্মরত প্রায় ৪ শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে অসন্তোষ চলছে। চট্টগ্রামে দপ্তরটিতে কর্মরতদের অভিযোগ, দপ্তর ঢাকায় স্থানান্তর হলে বিপুলসংখ্যক জনশক্তি আবাসন সংকটে পড়বে। এ ছাড়া রেলওয়ের প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ ও মালামাল বিদেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়। এতে আমদানির যন্ত্রাংশ ও মালামাল পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে।  
দপ্তরটি বৃটিশ আমল থেকে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকা থেকে পরিচালিত হচ্ছে। আমবাগান থেকে পাহাড়তলী পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরটির ব্যাপ্তি। পাহাড়তলী রেলওয়ে ওয়ার্কসপের ভেতরে রয়েছে প্রধান ডিপো। আর পাহাড়তলী ক্যান্টিন গেট এলাকায় বড় পরিসরে আরেকটি  ডিপো রয়েছে। তা হলো নিউ স্টোর ডিপো। ডিপো দুটি নিয়ন্ত্রণ করে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর।  এ দপ্তরের আওতায় প্রায় ৭ শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। এরমধ্যে চট্টগ্রামে কাজ করেন প্রায় ৪ শতাধিক। অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামের বাইরের কিছু ঠিকাদার প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরটি রাজধানীতে স্থানান্তর করতে ষড়যন্ত্র শুরু করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে। সে সময়কার রেলমন্ত্রী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত পশ্চিম ও পূর্ব জোনের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম থেকে দপ্তরটি স্থানান্তরের চক্রান্তে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের সুবিধা বাস্তবায়নে সমপ্রতি দপ্তরটি চট্টগ্রাম থেকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, দপ্তর নয় একটি ক্যাম্প অফিস স্থানান্তরিত হচ্ছে।
চট্টগ্রামে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, রেলওয়েতে লুটপাট করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার আমলের দুষ্কৃতকারীরা এখন আবার সক্রিয় হয়ে ‘ক্যাম্প অফিস’ নামে ঢাকায় স্থানান্তর প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। তারা জানান, রেলওয়ের প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ ও মালামাল বিদেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করতে হয়। ফলে তৎসংশ্লিষ্ট ডিসিওস শিপিং ডিপো, পরিদর্শন ও ইনভেন্টরি কন্ট্রোল সেলসহ প্রয়োজনীয় সকল অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা চট্টগ্রামে বিদ্যমান। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর অফিস ভবন ও আবাসনসহ সকল সুযোগ-সুবিধা বৃটিশ আমল থেকে চট্টগ্রামে বিদ্যমান রয়েছে। প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপকরণ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত মহাপরিচালকের উপদেষ্টা/সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া রাজস্ব বিভাগে প্রয়োজনীয় রেলওয়ের উপকরণের ক্রয় চাহিদা মূল্যায়ন এবং তা ক্রয়ের ব্যবস্থা করা, দরপত্র গ্রহণ এবং চুক্তি সম্পাদন,  ক্রয়কৃত উপকরণ পরিদর্শন ও গ্রহণের ব্যবস্থা, বিদেশ থেকে আমদানি করা রিলেজিং উপকরণের ব্যবস্থা করা, ডিজেলের খুচরা যন্ত্রাংশ সংরক্ষণ এবং ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী তা প্রদান করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রেলওয়ে টিকিট, মানি ভ্যালু ফরম এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য ফরম মুদ্রণ, সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং গ্রাহকদের কাছে সরবরাহের ব্যবস্থা করা। সর্বনিম্ন স্তরে সর্বোচ্চ পরিষেবা ধারণকারী ইনভেন্টরি প্রদানের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো,  বিদেশি উৎস থেকে আমদানি করা সামগ্রীর জন্য লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা।
দপ্তরটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, কুচক্রী মহলের স্বার্থে এ দপ্তরটিকে ঢাকায় কেন্দ্রীভূত করা হলে অবকাঠামো ও আনুমানিক ৭০০ জনবল ঢাকায় পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আবাসনসহ চলমান সকল সুযোগ-সুবিধা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে কমপক্ষে ১০০ একর ভূমি ও বিপুল অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। চট্টগ্রামে সরঞ্জাম ডিপোসহ সকল দপ্তর অরক্ষিত ও পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। এ সকল কারণে অফিসটি স্থানান্তর করা রেলওয়ের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চট্টগ্রামের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ হিসেবে গণ্য হবে। রেলওয়ে স্পেয়ার্স অ্যান্ড এঙোসোরিজ সাপ্লাইয়ার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, সরকার যেখানে প্রশাসনিক কাঠামোকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে কাজ করছে সেখানে বৃহদাকার একটি দপ্তরকে রাজধানীতে স্থানান্তর করা হলে সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। রেলের অর্থ লোপাটের জন্য এ প্রক্রিয়া। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের এডিজি আহমদ মাহবুব চৌধুরী বলেন, বিগত সরকার আমলে রাজধানীতে একটি ক্যাম্প অফিস স্থাপনের কাজ শুরু হয়। এখনো চলমান রয়েছে।