বাংলারজমিন
নোয়াখালীর যুবদল নেতা নয়ন বহিষ্কার
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে
৪ জুন ২০২৫, বুধবারনোয়াখালীতে আনোয়ার হোসেন নয়ন নামে এক যুবদল নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নয়ন জেলা যুবদলের সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং কবিরহাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং পেশিশক্তি প্রদর্শন করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ নানা অনাচারে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে বিষিয়টি নিশ্চিত করেন জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন। এর আগে, একই দিন সকালে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চাঁদাবাজি এবং পেশিশক্তি প্রদর্শন করে জনমনে আতঙ্ক সৃস্টিসহ নানা অনাচারে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে জেলা যুবদলের সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং কবিরহাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন নয়নকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোন ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নিবে না। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ২টি চাঁদাবাজির ঘটনায় তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, নোয়াখালীতে প্রকাশ্যে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদাবাজির পর এবার প্রবাসীর স্ত্রী রহিমা আক্তারকে ধর্ষণের হুমকি দেয়ার অভিযোগে কবিরহাট থানায় মালা হয়েছে। বুধবার (২১ মে) রাতে নয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে সিসিটিভি এবং মোবাইলে ধারণ করা বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ থানার ওসির হাতে এসেছে। জানা যায়, অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন নয়ন কবিরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেহজঙ্গপুর গ্রামের মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে। একটি ভিডিওতে নয়নকে দেশীয় অস্ত্র হাতে ওই প্রবাসী নারীর বাড়ির সামনে হামলা করতে দেখা যায়। এ সময় ভিডিওতে নয়নকে বলতে শোনা যায়, টাকা না পেলে ধর্ষণ করে সেটার উসুল নেয়া হবে। আরেকটি ভিডিওতে নয়নকে আপত্তিকর বিভিন্ন কথা বলতে শোনা যায়, যা প্রচারযোগ্য নয়। ভুক্তভোগী নারী (৩৬) কবিরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেহজঙ্গপুর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী নুরুজ্জামানের স্ত্রী। তিনি ৬ তলা একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ করছেন। ভুক্তভোগী ওই নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৫ই আগস্টের আগে পরিবার নিয়ে ওমরা করতে সৌদি আরব যাই। আওয়ামী লীগের পতন হওয়ার পর থেকে যুবদল নেতা নয়ন আমাকে বিদেশে থাকা অবস্থায় হোয়াটসঅ্যাপে কল দিতে থাকেন। বাড়িতে আসার পর তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আমার কাছে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তিনি প্রতিনিয়ত আমার বাড়িতে আক্রমণ করেন। আত্মীয়-স্বজনসহ মিস্ত্রিদেরকে হুমকিসহ মারধর করতে আসেন। ছোট ৩টি ছেলে নিয়ে আমি বাড়িতে একা থাকি। কখন কী হয়ে যায় আমি জানি না। নয়নের অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। বিএনপি নেতা ও সমাজের লোকজনকে বলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমার ছেলেরা স্কুল-মাদরাসায় যেতে গেলে সে তাদেরও পর্যন্ত ভয় দেখায়। আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
এর আগে আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারীকে মোবাইলে যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন নয়ন ২ লাখ টাকা চেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। সেই কল রেকর্ড নিয়ে গত ১৫ মার্চ দৈনিক মানবজমিনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়। এ বিষয়ে জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজীম সুমন বলেন, আগের বার অভিযোগ পেয়ে নয়নকে কঠোর সতর্কতা ও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল। পরে সে ফেসবুকে পদ থেকে অব্যাহতির ঘোষণাও দেয়। এবারের বিষয়টি তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কবিরহাট থানার ওসি শাহীন মিয়া মানবজমিনকে বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে বুধবার রাতে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবো।