বাংলারজমিন
নোয়াখালীর ৯ উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা দেড় লাখ, উদ্বৃত্ত ১৬ হাজার
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে
(১ দিন আগে) ৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৭:০১ অপরাহ্ন
আর কয়েক দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। জমতে শুরু করেছে কুরবানির বিভিন্ন পশুর হাট। এ বছর নোয়াখালী জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা দেড় লাখ, এর মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার উদ্বৃত্ত থাকবে।
গত বছরের বন্যার ধকল কাটিয়ে ঈদ সামনে রেখে বাজার ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নোয়াখালীর খামারিরা। শেষ সময়ে তারা পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত। এদিকে দাম নিয়ে খামারি ও ক্রেতা উভয়ই শঙ্কায় রয়েছেন।
সরেজমিন জেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাক, পিকআপ ভরে আসছে কুরবানির পশু। জেলার বিভিন্ন সড়কে যেমন তৎপর ট্রাফিক পুলিশ, তেমনি হাটগুলোতেও তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ভলান্টিয়াররা। জেলার প্রধান সড়কে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না কুরবানির পশুবাহী কোনো যানবাহন।
অন্যদিকে কুরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন হাটের প্রধান ফটক সাজানো হয়েছে। হাসিল ঘরও প্রস্তুত করা হয়েছে। এবার বড় গরুর চেয়ে মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা একটু বেশি। বড় ও দামি গরুর সামনে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও ছোট গরুর ক্ষেত্রে ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন গরু ব্যবসায়ীরা।
খামারিদের দাবি, পশু খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়বে। তাছাড়া ইতোমধ্যে জেলার কয়েকটি স্থানে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। এতে খামারিরা দারুণ চিন্তায় রয়েছেন। এ কারণে অতিরিক্ত লোকবল রাখতে হচ্ছে বিধায় খামারি ও গরু ব্যবসায়ীদের খরচ আরও বেড়ে গেছে। জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪টি, গবাদি পশুর (প্রাপ্যতা) ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৭২টি। কুরবানির পশুর উদ্বৃত্ত আছে ১৫ হাজার ৫৮৮টি।
জেলায় মোট তালিকাভুক্ত খামারের সংখ্যা ৬ হাজার ৭২৬টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ১২৮৭ টি, বেগমগঞ্জে ৪৫০, চাটখিলে ৭০০, সেনবাগে ১০৬৮, কোম্পানিগঞ্জে ৯৭৪, হাতিয়ায় ৭৬৫, সোনাইমুড়ীতে ৫১১, সুবর্ণচরে ৫৪৭ এবং কবিরহাট উপজেলায় ৪২৪ টি খামার রয়েছে। এ সব খামারে এ বছর মোট ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৭২টি পশু উৎপাদন হয়েছে।
নোয়াখালী জেলার ৯টি উপজেলায় ষাঁড় রয়েছে ৫৩ হাজার ৯১৫টি, বলদ ৩৩ হাজার ৪৬৪, গাভী ১৩ হাজার ৮৮৪টি, মহিষ ৬ হাজার ৮৬৩, ছাগল ৪১ হাজর ৯২৪টি ও ভেড়া ১৩হাজার ৬২০টি।
এ বছর জেলায় কুরবানি পশুর চাহিদা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪টি, গবাদি পশুর (প্রাপ্যতা) ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৭২টি। কুরবানির পশুর উদ্বৃত্ত আছে ১৫ হাজার ৫৮৮টি।
সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের বাহাদুর পুরের খামারি ফয়সাল বলেন, গত ৮ বছর ধরে আমাদের খামারে কুরবানির জন্য পশু পালন করা হয়। এ বছর খামারে প্রায় ৩০টি ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। দাম ভালো পেলে লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো। কারণ এ বছর পশু খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের খামারি গিয়াস উদ্দিন বলেন, গত তিন বছরে গরুর খাদ্যের দাম বেড়েছে অনেক গুণ। যে কারণে খামারে এখন গরুর সংখ্যা কম। বিক্রি করলে খরচ উঠে আসে না। এমন দামের কারণে অনেকে পশু পালনে আগ্রহ হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, গেল বছরের বন্যার কারণে খড়কুটার দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার খাদ্যের দাম বেশি। দাম ঠিক মত না পেলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
বেগমগঞ্জের সেলিম এগ্রো খামারের মালিক মো. সেলিম বলেন, এবার গো-খাদ্যের দাম একটু বেশি হলেও তা মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে হবে বলে আশা করি। এরমধ্যে কয়েকটি স্থানে গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে খামারিরা দারুণ চিন্তায় রয়েছেন।
বেগমগঞ্জে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মলয় কুমার শুর বলেন, এ উপজেলার কুরবানির জন্য ২৫ হাজার পশুর প্রয়োজন। তবে খামারি, মৌসুমী ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিগতভাবে উৎপাদিত প্রায় ৩০ হাজার গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মজুদ রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে মানুষ কুরবানি দিতে কোনো অসুবিধা হবে না। তবে সম্প্রতি কয়েকটি স্থানে গরু-ছাগল চুরির ঘটনা ঘটেছে। গরু চুরির ঘটনা ঘটলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমরা মানুষকে নানাভাবে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করছি।
সুধারাম মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নোয়াখালীর কয়েকটি স্থানে গরু ছাগল চুরির ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে পুলিশি অভিযানে কয়েকটি স্থানে চুরির সময় ব্যবহৃত পিকআপ ও গরু উদ্ধার করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম মানবজমিনকে বলেন, জেলায় দুই শতাধিক কুরবানির পশুর হাট বসবে। এবার নোয়াখালীর চাহিদার চেয়েও সব মিলিয়ে প্রায় ১৬ হাজার কুরবানি পশু বেশি রয়েছে। জেলায় মোট তালিকাভুক্ত খামারের সংখ্যা ৬ হাজার ৭২৬টি। পশুগুলো প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বড় হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে। কুরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করতে আমরা সবসময় সার্বিক তত্ত্বাবধান করছি