বাংলারজমিন
মহেশপুর সীমান্তে অবৈধ অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম্য
আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে চোরাচালান ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রুপ। এই গ্রুপগুলো নিজেদের স্বার্থের দ্বন্দ্বে নিজেরা নিজেরাই খুনোখুনি করছে। ফলে মহেশপুর সীমান্ত এখন আর শুধু সীমান্ত নয়, অপরাধ জগতের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। জানা যায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মহেশপুর দিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে অবৈধ অনুপ্রবেশ, গরু পাচার, সোনা ও মানব চোরাচালান এবং জমজমাট মাদক ব্যবসা। এই চোরাচালানের সঙ্গে চিহ্নিত শতাধিক অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত, কতিপয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, বিজিবি ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জড়িত। এ কারণে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে মাদক, গরু, সোনা, অস্ত্র ও মানব চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, মহেশপুর সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এমন ৮৪ জন অবৈধ অস্ত্রধারী বাংলাদেশি দালাল ও ১১ জন ভারতীয় চোরাকারবারি রয়েছে। এদের ভিন্ন ভিন্ন অস্ত্রধারী গ্রুপ রয়েছে। স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে এই গ্রুপের হাতেই ২০২৪ সালের ১৭ই জানুয়ারি খুন হয়েছিল বাঘাডাঙ্গা গ্রামের শামিম ও মন্টু। সম্পর্কে তারা চাচা-ভাতিজা। দু’জনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ আকালে ও ইব্রাহীম। এদিকে ২০১৮ সালে গরু চোরালানকে কেন্দ্র করে গলাকেটে হত্যা করা হয় মহেশপুর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের ইদু ফকিরের ছেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্স ওয়াসিমকে। সে সময় ওয়াসিম হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে গরু চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য শ্যামকুড় গ্রামের মোমিন, মনি মেম্বার ও সাইদুরের নাম উঠে আসে। সেই মামলাও এখন হিমাগারে। সীমান্ত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বাঘাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে যেসব অবৈধ জিনিস পাচার হয় তার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আবুল কাশেমের ছেলে তরিকুল ইসলাম ওরফে আকালে, টেনার ছেলে ইব্রাহীম ওরফে ইব্রা, আব্দুল জলিলের ছেলে চঞ্চল ও শহিদুলের ছেলে মোমিন। অস্ত্র পরিচালানায় ভারতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আকালে ডাবল মার্ডার করে ভারতে পালিয়ে যায়। সেখানে সে গ্রেপ্তারও হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আকালে। এদেশে এসেও সে গ্রেপ্তার হয়। উচ্চ আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে আবারো নিজ পেশায় ফিরে গেছে আকালে।
জানা গেছে, ঈদুল আজহা সামনে রেখে মহেশপুরের খোসালপুর, বাঘাডাঙ্গা, কুমিল্লাপাড়া ও নেপা দিয়ে এখন গরু পাচার হচ্ছে। সলেমানপুরের আব্দুস সোবাহান, বাঘাডাঙ্গার রবিউল ও জামাল এই সিন্ডিকেট পরিচালানা করছে। সঙ্গে আছে সীমান্তের ৬টি ইউনিয়নের কতিপয় ইউপি মেম্বর। অভিযোগ উঠেছে, তেলটুপি বরণবেড়ে এলাকার চিহ্নিত দালাল সালাহউদ্দীন সীমান্তের চোরাচালান ঘাটগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এবং প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের দৈনিক চুক্তি ভিত্তিতে টাকা দিচ্ছেন। মহেশপুরের সাবেক এক ওসিকে তিনি মাসিক টাকা দিয়ে চোরাচালান ঘাটগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। গোয়েন্দাদের এমন তথ্যের ভিত্তিত্তে সেই ওসিকে বদলিও করা হয়েছে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, ভারতের নদীয়া জেলার ধানতলা থানার সিলবাড়ি গ্রামের ইয়ারুল, একই গ্রামের জিয়ারুল, হাঁসখালী থানার রামনগর গ্রামের ওয়াসিম, সাহেব আলী, জাকির, আজগার মন্ডল, মুজাফ্ফর, মতিবুল, খোসালপুর বর্ডার এলাকার আলী হোসেন, কুমারি গ্রামের মান্য বিশ্বাস ও পাপস বিশ্বাস বাংলাদেশি চোরাকারবারিদের সর্বক্ষণ যাতায়াত, বাসস্থান ও বিএসএফ’র সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের সহায়তা দিচ্ছেন। এ বিষয়ে মহেশপুর বিজিবি’র অধিনায়ক জানিয়েছিলেন, সীমান্তে আমাদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে বিজিবি অভিযান পরিচালনা করছি। এ কারণে অতীতের চেয়েও এখান বেশি বেশি মাদক ধরা পড়ছে। সেই সঙ্গে ধুড় পাচার প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। মহেশপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, বাঘাডাঙ্গা গ্রামে গোলাগুলির ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সচেষ্ট রয়েছে। অস্ত্রধারী গ্রুপটি পলাতক থেকে একাধিকবার স্থান পরিবর্তন করায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি সন্ত্রাসী তরিকুল ওরফে আকালের সন্ধান দিতে সীমান্তের মানুষের সহায়তা কামনা করেছেন।