ঢাকা, ৩১ মে ২০২৫, শনিবার, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলা

আসামি জামায়াত নেতা, বাদী বললেন ‘ভুলবশত’

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে
২৬ মে ২০২৫, সোমবার
mzamin

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট নোয়াখালীর চাটখিল থানা থেকে লুট করা অস্ত্রে প্রাণ হারানো মো. ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজের মৃত্যুর ৯ মাস পর আদালতে দায়েরকৃত মামলায় আসামির তালিকায় নাম উঠে এসেছে এক স্থানীয় জামায়াত নেতার। এ নিয়ে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন জামায়াত নেতা। মামলার বাদী ইমতিয়াজের বাবা হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, এটি একটি ‘ভুলবশত’ ঘটনা। নিহত ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ চাটখিল উপজেলার হাটপুকুরিয়া ঘাটলাবাগ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ওয়ারী মিয়া বেপারী বাড়ির মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে। জানা যায়, গত ২১শে মে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন হাবিবুর রহমান। আমলি আদালত ৭-এর বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি গ্রহণ করেন। মামলায় সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিমসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিচারক, এরপর চাটখিল থানায় পূর্বে এ সংক্রান্ত কোনো মামলা হয়েছে কি না তা আগামী ৭ দিনের ভেতর রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। মামলার আবেদন সূত্রে জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম, সাবেক পৌর মেয়র মোহাম্মদ উল্যা, ভিপি নিজাম উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৫৭ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮ নম্বর আসামি হিসেবে রয়েছেন জামায়াতের পরকোট ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সেক্রেটারি মো. সাইফুল্লাহ মানিক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে ২৭শে মার্চ ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজকে শহীদের স্বীকৃতি ও ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র দেয়ায় ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গেজেটভুক্ত শহীদের তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। ফের মামলা বাণিজ্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরের অভিযোগ তুলে জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে মামলা নিয়ে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চাটখিল উপজেলার প্রতিনিধি গোলাপ হোসেন ও তাহা ইয়াসিন বলেন, আমরা দিন দিন অবাক হচ্ছি। গেজেট বাতিলের জন্য আমরা আবেদন করেছি কিন্তু সেই গেজেট দিয়ে মৃত্যুর ৯ মাস পর মামলা করেছে। আমরা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যসহ নানান অভিযোগ পেয়েছি। আমরা অবাক হয়েছি কীভাবে একজন আত্মঘাতী ব্যক্তি শহীদ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়। আবার জেলা প্রশাসক ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র তুলে দেন। আমরা বিষয়টির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ইমতিয়াজের নাম কোথাও ছিল না। তারপরও কীভাবে এতদূর গড়িয়েছে তার জন্য তদন্ত করা দরকার। এখনো আহত যোদ্ধারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কিন্তু এভাবে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা ইমতিয়াজের পরিবারকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। জামায়াত নেতা মো. সাইফুল্লাহ মানিক বলেন, আমরা ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম স্টেকহোল্ডার। দীর্ঘদিন আমরা জুলুমের শিকার হয়েছি। আজ আবার মিথ্যা মামলার শিকার হলাম। ইমতিয়াজের মৃত্যু নিয়ে নানান কথা প্রসিদ্ধ আছে। থানার লুটকৃত অস্ত্র  দিয়ে সে আত্মঘাতীভাবে নিহত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস পর আমাকে পরিকল্পিতভাবে জড়িয়ে মামলার আসামি করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার এবং জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে গাদ্দারি। আমি ন্যায়বিচার কামনা করছি এবং মিথ্যা এ মামলার আবেদনের জন্য বাদীর শাস্তি দাবি করছি। যেনো কেউ জুলাই আন্দোলন নিয়ে গাদ্দারি না করতে পারে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মামলার বাদী হাবিবুর রহমান আসামির তথ্য ও ছবি বিস্তারিত বলতে পারেননি। তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবার দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলাম। জামায়াত নেতা সাইফুল্লাহকে আমি ভালোভাবে চিনি না। সম্ভবত আমার ভুল হয়েছে। আমি আদালতে বিষয়টি জানাবো। জামায়াত নেতাকে আসামি করায় আমি দুঃখিত। এ মামলার শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়বেন বলে জানান চাটখিল উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মহিউদ্দিন হাসান। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন করলাম আবার আমরাই আসামি হলাম এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এটার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই মামলার কুশীলব কারা তা বের করা হবে। আমরা এ মামলার শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়বো।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status