বিশ্বজমিন
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা
মানবজমিন ডেস্ক
(১ সপ্তাহ আগে) ২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:০৫ অপরাহ্ন

ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম হার্ভার্ডকে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন, এই প্রশাসন হার্ভার্ডকে জবাবদিহির আওতায় আনছে। কারণ এটি সহিংসতা, ইহুদিবিদ্বেষ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য দায়ী। তিনি আরও বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানো কোনো অধিকার নয়, এটি একটি সুবিধা। এই শিক্ষার্থীদের উচ্চ হারে টিউশন ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু বিলিয়ন ডলারের তহবিলকে সমৃদ্ধ করছে। এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, হার্ভার্ড যদি আসন্ন শিক্ষাবর্ষের আগে ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (এসইভিপি)-এর সার্টিফিকেশন ফিরে পেতে চায়, তবে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিতে হবে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বর্তমানে হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা হয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হবেন, নয়তো তাদের বৈধ অভিবাসন অবস্থান হারাতে হবে বলে জানানো হয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পক্ষ থেকে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিবৃতিতে এই পদক্ষেপকে ‘বেআইনি’ এবং ‘প্রতিহিংসামূলক’ বলে উল্লেখ করেছে। তারা বলেছে, এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে গভীর ক্ষতির মুখে ফেলছে। ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থী ও গবেষকরা হার্ভার্ডকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রকেও।
বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের উপস্থিতি অব্যাহত রাখার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হার্ভার্ডকে ‘একটি রসিকতা’ বলে মন্তব্য করেন এবং দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সরকারি গবেষণা চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া উচিত’।
তিনি বলেন, হার্ভার্ডকে আর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় রাখা উচিত নয়। এরপর থেকেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প, যা এবার বাস্তবায়ন করা হলো। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৬,৮০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হন, যা মোট শিক্ষার্থীর শতকরা ২৭ ভাগ। এর মধ্যে ভারতের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৮৮। এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ওপর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে এবং অনেকের উচ্চশিক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই কঠোর পদক্ষেপ শুধু হার্ভার্ডের জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে যদি বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হারায়, তবে এর নেতিবাচক প্রভাব শুধু শিক্ষার্থী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থান এবং শিক্ষা-অভিবাসন ব্যবস্থার ওপরও পড়বে।