দেশ বিদেশ
ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও নানারূপে ফিরে আসছে: ডা. শফিকুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার
২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবারজামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদী সরকার ভেবেছিল কেউ তাদের ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না। কিন্তু অবশেষে তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। তারা আজও আমাদের শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না, নানারূপে ফিরে আসছে। বৃহ¯পতিবার রাজধানীর মিরপুরের কাফরুলে ঢাকা উত্তর জামায়াত কর্তৃক আয়োজিত গণসংযোগ ও সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে এসব কথা বলেন তিনি। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের সন্তানরা জীবনবাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, আমরাও তাদের সঙ্গে ছিলাম। তারা ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিয়েছে। এক বছর আগেও মানুষ চিন্তা করতে পারেনি যে তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু আজ সারা দেশের জনগণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং ইচ্ছামতো কেড়েও নেন। তিনিই মহান সত্তা যিনি যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন; আবার বেইজ্জতিও করেন। তা আমরা জুলাই বিপ্লবে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি। তারা ক্ষমতার দম্ভে মানুষের ওপর লাগামহীন জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা না করে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জেল-জুলম, গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তারা মনে করেছিল যে, তাদের এমন অপশাসন ও দুঃশাসন কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কিন্তু আল্লাহ জালেমদের ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না। তিনি বলেন, যারা হাত-পা হারিয়েছে, যারা নির্যাতিত হয়েছে, তারা কখনোই এসব খুনিদের ক্ষমা করবে না। খুনিদের বিচার করতে হবে এবং সকল স্তরে সংস্কার করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে, যেখানে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব থাকবে না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণই তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। যারা নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তির ব্যাবহার করতে চাইবে জনগণ তাদের প্রতিহত করবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে, বেকারত্ব ও চাঁদাবাজি থাকবে না। যেখানে মা-বোনেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। আমরা সাম্যের ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। যুবসমাজের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুবকরাই সমাজ পরিবর্তনের মূলশক্তি। মহানবী (সা.)-এর বিপ্লবেও যুবসমাজ ছিল প্রধান হাতিয়ার। যুবকরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চায়।
জামায়াতের আমীর বলেন, জামায়াত দেশ ও জাতির মুক্তি ও কল্যাণের জন্য দীর্ঘ পরিসরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা দেশে একটি ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। আমরা কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে মানবিক বাংলাদেশ গড়বো। আমরা দেশ, দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসী। মানুষের কল্যাণ ও মুক্তিই হচ্ছে জামায়াতের রাজনীতি মূলনীতি। মূলত, আল্লাহ আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বিধান করা। কোরআন-সুন্নাহর আদর্শের দিকে ফিরে আসতে হবে। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সকল সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ বাব্বুল আলামীন আমাদের সকলের ওপর দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানোকে অত্যাবশ্যকীয় করে দিয়েছেন। যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ একই দায়িত্ব নিয়ে দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছিলেন। বিশ্বনবী (সা.) একই মিশনে নিয়ে দুনিয়াতে প্রেরিত হয়ে একটি সফল বিপ্লব সাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি এ কাজ সুসম্পন্ন করেছিলেন তার ওপর অবতীর্ণ অহীর বিধানের মাধ্যমে। কিন্তু তিনি শেষনবী হওয়ায় দুনিয়াতে নতুন করে আর কোনো অহী আসবে না। কিন্তু বিশ্বনবী (সা.)-এর ওপর নাজিলকৃত কালামে হাকিমে মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান দেয়া হয়েছে।
তাই আমাদের প্রত্যেককেই বাস্তবজীবনে কোরআনের আদর্শের অনুসারী হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।
এলাকা প্রসঙ্গে ড. শফিক বলেন, এই এলাকায় একসময় অসংখ্য সন্ত্রাসী ছিল। কিন্তু আজ আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশে আর কোনো সন্ত্রাসীকে মাথা তুলতে দেবো না।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিকসহ প্রমুখ