দেশ বিদেশ
সাইবার প্রতারণায় সব হারিয়ে আত্মহত্যা দম্পতির
মানবজমিন ডেস্ক
৩০ মার্চ ২০২৫, রবিবার
সাইবার প্রতারণার শিকার হয়ে ৫০ লাখ রুপি হারিয়েছেন কর্ণাটকের এক প্রবীণ দম্পতি। নিঃসন্তান ওই দম্পতি শেষ পর্যন্ত সব হারিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। এতে বলা হয়, ডিওগজেরোন সান্তান নাজারেথ (৮২) ও তার স্ত্রী ফ্লাভিয়ানার (৭৯) বসবাস ছিল খানাপুরের বেডি গ্রামে। তাদের কোনো সন্তান নেই। তারা আত্মহত্যার আগে দুই পৃষ্ঠার একটি হ্যান্ডনোট রেখে গেছেন। তাতেই বর্ণনা করেছেন আত্মহত্যার কারণ। এজন্য অন্য কাউকে দায়ী না করতে অনুরোধ করেছেন। বলেছেন, কারও দয়ার ওপর তারা বেঁচে থাকতে চাননি। বৃহস্পতিবার প্রতিবেশীরা তাদেরকে না দেখে, ঘরে যান ডাকতে। গিয়ে দেখেন ফ্লাভিয়ানা মৃত পড়ে আছেন বিছানায়। অন্যদিকে তাদের বাসার নিচে পানির ট্যাংকে উদ্ধার করা হয় সান্তান নাজারেথের মৃতদেহ। তিনি সরকারি একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। নিজের গলায় চুরি চালিয়েছেন তিনি। কব্জিতে পাওয়া গেছে ক্ষত। ধারণা করা হচ্ছে তার স্ত্রী ফ্লাভিয়ানা বিষাক্ত কিছু ব্যবহার করেছেন। তবে এ নিয়ে তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানা যাবে। ডেথনোটে সান্তান নাজারেথ দু’জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন- সুমিত বিরা এবং অনীল যাদব। তিনি লিখেছেন, এর মধ্যে বিরা হলেন- নয়া দিল্লির একটি টেলিকম ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা। তিনি সান্তান নাজারেথকে জানান যে, তার নামে প্রতারণার মাধ্যমে একটি সিম কার্ড তোলা হয়েছে।
সেটা ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হয়রান করা হচ্ছে। অবৈধ বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরে ওই ফোনকলে যাদবকে ধরিয়ে দেন বিরা। বলা হয়, যাদব হলেন ক্রাইম ব্রাঞ্চের একজন কর্মকর্তা। সান্তান নাজারেথের সহায়-সম্পত্তির বিস্তারিত জানতে চান। বলেন, সিম কার্ডের কারণে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই ফাঁদে পা দিয়ে তাদেরকে ৫০ লাখ রুপি তুলে দেন সান্তান নাজারেথ। কিন্তু তারা আরও অর্থ দাবি করতে থাকে। নাজারেথ সুইসাইড নোটে আরও লিখেছেন, তিনি এজন্য সোয়া সাত লাখ রুপি গোল্ড লোন নিয়েছেন। এর সুদ দেয়ার কথা ৪ঠা জুন। এই অর্থ দিতে গেলে স্বর্ণ বিক্রি করতে হবে। এছাড়া তিনি বন্ধুদের কাছ থেকেও অর্থ ধার করেছেন। স্বর্ণ, কানের রিং বিক্রি করে লোন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। সান্তান নাজারেথ লিখেছেন- এখন আমার বয়স ৮২ বছর। আমার স্ত্রীর ৭৯। আমাদেরকে দেখাশোনা করার মতো কেউই নেই। তাই কারও অনুগ্রহের ওপর আমরা বেঁচে থাকতে চাই না। এজন্যই আমাদের জীবন শেষ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, তাদের দেহ যেন একটি মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দান করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা তা নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। ওদিকে তার বাড়ি থেকে তার ফোন, ছুরি, আত্মহত্যার নোট আলামত হিসেবে জব্দ করেছে পুলিশ। বেলাগাভির এসপি ভীমাশঙ্কর গুলেড বলেন, প্রাথমিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটি আত্মহত্যার মামলা করেছি। তারা যে দু’জনের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাকি তদন্ত চলছে।