অর্থ-বাণিজ্য
ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে ব্যাংক খাত
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৮:২১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ২:১৫ অপরাহ্ন

রাজনৈতিক পালাবদলের পর নানামুখী সংকটের মাঝেও ব্যাংক খাত কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। অতীতের অনিয়ম ও লুটপাটে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার সুদের হার সমন্বয়, রিজার্ভ সুরক্ষা ও আমদানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যে দৃশ্যমান। আমানত বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ হ্রাস এবং বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা ব্যাংকিং খাতের পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব সংস্কার কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে খাতটি পুরোপুরি স্থিতিশীল হবে।
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে ৮ই আগস্ট। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর সম্পদের প্রকৃত মান নির্ধারণ, ফরেনসিক নিরীক্ষা পরিচালনা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে এই টাস্কফোর্স।
এসব উদ্যোগের ফলে কিছু কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যে ১২টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়, তার মধ্যে ইউসিবি অন্যতম। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো প্রণোদনা সহায়তা গ্রহণ না করেই ব্যাংকটি শক্তিশালী অবস্থানে ফিরেছে।
ইউসিবি সূত্রে জানা গেছে, মাত্র দেড় মাসে ইউসিবির সকল শাখা, উপশাখা, এজেন্ট আউটলেট ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এক লক্ষেরও বেশি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থারই প্রতিফলন। উল্লেখ্য, ইউসিবিতে ব্যক্তি শ্রেণি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হিসাব খোলার পরিমাণ বেড়েছে। এই শ্রেণির মধ্যে ব্যাংকের প্রতি আস্থা বাড়ছে।
এ ব্যাপারে ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর উদ্যোগের ফলে মানুষ আবার ব্যাংকের ওপর ভরসা করতে শুরু করেছে। আমানত ও ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা ইতিবাচক। সংস্কার ও সুশাসনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই ব্যাংকিং খাত আরও শক্তিশালী ও স্থিতিশীল হবে।’ শুধু ইউসিবি নয়, অন্যান্য ব্যাংকেও আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে বিধ্বস্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকেও স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। আমানতকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২৪ সালে পরিচালন মুনাফায় শীর্ষে ছিল ব্যাংকটি।
জানা গেছে, হল-মার্কের ঘটনার পর সোনালী ব্যাংক বড় কোনো অর্থায়ন করেনি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং রপ্তানি পণ্য উৎপাদন করে এমন ব্যবসায় বেশি ঋণ দিয়েছে। এই কৌশলেই ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে পুরোনো কিছু খেলাপি গ্রাহক, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির দায় এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে ব্যাংকটিকে। এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে ফিরে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর বলেছেন, ‘সংস্কার উদ্যোগের ফলে ব্যাংকিং খাত দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যে ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে ছিল, সেগুলোও এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
পাঠকের মতামত
সুদ এত বাড়লো কেন, আইডিএলসি ফিনান্স লিমিটেড, আমরা পাগল হয়ে, লুন নিয়ে