দেশ বিদেশ
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবারআসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী। প্রার্থী তালিকায় আছেন সাবেক হুইপ, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী থেকে শুরু করে দলটির দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে চমক হিসেবে আছেন ৩ জন জনপ্রিয় চিকিৎসক নেতা। গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম জামায়াতের কয়েকটি সূত্র দৈনিক মানবজমিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
প্রার্থীরা হলেন- চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) এডভোকেট সাইফুর রহমান, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) অধ্যক্ষ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আলাউদ্দিন শিকদার, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আনোয়ারুল সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) শাহজাহান মঞ্জুর, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) ডা. আবু নাসের, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) ডা. ফজলুল হক, চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) শফিউল আলম, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) ইঞ্জিনিয়ার লোকমান, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ডা. শাহাদৎ হোসাইন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মাওলানা জহিরুল ইসলাম। জানা যায়, এডভোকেট সাইফুর রহমান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক। জামায়াতের এই আইনজীবী নেতা ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সভাপতি। অধ্যক্ষ নুরুল আমিন মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি। আলোচিত সাবেক এই ছাত্রনেতা শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ছিলেন। আলাউদ্দিন শিকদার উত্তর জেলা জামায়াতের আমীর। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি। আনোয়ারুল সিদ্দিকী উত্তর জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক। পেশায় ব্যবসায়ী এই জামায়াত নেতা আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলামকে। তিনি হাটহাজারী উপজেলা জামায়াতের আমীর। শাহজাহান মঞ্জুর পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি রাউজান উপজেলা জামায়াতের আমীর। অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান উত্তর জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েয়ের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রির সদস্য। ডা. আবু নাসের প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতা। তিনি ডাক্তারদের সংগঠন বিএমএ’র টানা তিনবার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হসপিটালের সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ডা. একেএম ফজলুল হক নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হসপিটালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। পাশাপাশি তিনি চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হসপিটালের চেয়ারম্যান। অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী চসিকের সাবেক কাউন্সিলর। তিনি বর্তমানে নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক। প্রার্থী শফিউল আলম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। তিনি ৫ বছর সিটি করপোরেশনের অর্থনৈতিক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার লোকমান এপিক গ্রুপের চেয়ারম্যান। ইঞ্জিনিয়ার লোকমান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি পতেঙ্গা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। ডা. শাহাদৎ হোসাইন শেভরন আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর। বিশিষ্ট এই চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ চন্দনাইশ সমিতি-চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি। শাহজাহান চৌধুরী দুইবারের সাবেক এমপি ও হুইপ। একইসঙ্গে তিনি মহানগর জামায়াতের আমীর। মাওলানা জহিরুল ইসলাম। বাঁশখালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। জানা যায়, মোট ১৬টি আসনে প্রার্থী দিলেও অন্তত ১০টি আসনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী জামায়াত। আসনগুলো হলো সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, খুলশি- পাহাড়তলী-হালিশহর, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই,সন্দ্বীপ। আরও রয়েছে জনপ্রিয় ৩ চিকিৎসক নেতার জন্য বরাদ্দকৃত কোতোয়ালি- বাকলিয়া, চান্দগাঁও- বোয়ালখালী ও চন্দনাইশ- সাতকানিয়া (আংশিক)। এই তিন চিকিৎসক নেতাকেই জামায়াতের এবারের প্রার্থী বাছাইয়ে সবচেয়ে বড় চমক বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। রাজনীতির বাইরেও তারা সামাজিকভাবে খুব জনপ্রিয়। এরমধ্যে চান্দগাঁও- বোয়ালখালী আসনের প্রার্থী ডা. আবু নাসের গরিবের ডাক্তার বলে পরিচিত।শহরে চিকিৎসা নিতে আসা নিজের উপজেলা বোয়ালখালীর লোকজনের কাছ থেকে তিনি কোনো ‘ফি’ নেন না বলে কথিত আছে। এবারের নির্বাচনে জামায়াতের আরেক চমক পটিয়া আসনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার লোকমান। সাধারণত জামায়াতের এমপি প্রার্থী হওয়ার জন্য দলটির রোকন (শপথের কর্মী) হওয়া আবশ্যক। তবে ইঞ্জিনিয়ার লোকমানের জামায়াতের কোনো পদপদবি নেই। তবে তিনি ছাত্রজীবনে শিবিরের তৃণমূলের কর্মী ছিলেন। জামায়াত ঘরনার বাইরেও সামাজিকভাবে বেশ গ্রহণযোগ্য এই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিন ১৬টি আসনের সবগুলোতে প্রার্থী চূড়ান্ত করার এই বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সব প্রার্থী মোটামুটি চূড়ান্ত। তবে এই মুহূর্তে নাম প্রকাশ করার সুযোগ নেই। আমাদের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল কয়েক দিনের মধ্যে চট্টগ্রামে আসবেন। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাদেরকে জানানো হবে। দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণার আগে এই মুহূর্তে নাম প্রকাশ করতে পারছি না। যদিও আমরা ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে নেমেছি। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের আমীর ও সন্দ্বীপ আসনের প্রার্থী আলাউদ্দিন শিকদার বলেন, আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে উত্তর জেলার প্রার্থীদের নাম গতকাল অভ্যন্তরীণ বৈঠকে জানানো হয়েছে।