অর্থ-বাণিজ্য
হিমাগারে ১ কেজি আলু রাখতে ৮ টাকা নির্ধারণ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৬:৩৯ অপরাহ্ন
চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণের কথা জানিয়েছে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন (বিসিএসএ)। এ ছাড়া হিমাগারের ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে আনতে একে কৃষিভিত্তিক শিল্প ঘোষণা করাসহ পাঁচ দাবি তুলে ধরা হয়। শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে বিসিএসএর কার্যালয়ে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া ও হিমাগার ব্যবস্থাপনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ২০২৫ সালে খরচ বিবেচনায় নিয়ে কেজি প্রতি ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ৮ টাকা কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণের যৌক্তিকতা যাচাই করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের খরচ হিসাব করলে ৭ টাকা তো চলে যায়।
ভাড়া বাড়ানোর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ১০ হাজার টনের একটি হিমাগারের অনুকূলে গৃহীত ব্যাংক ঋণের উপর যে সুদ আসে, তা কেজিপ্রতি আলু সংরক্ষণে রূপান্তর করলে খরচ দাঁড়ায় ৫.৮৬ টাকা এবং এর সঙ্গে বিদ্যুৎ খরচ ১.১০ টাকা যোগ করলে দাঁড়ায় ৬.৯৬ টাকা। অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী সময় মতো আলু বের না করায় ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে হিমাগার মালিকরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েন বলে দাবি করেন মোস্তফা আজাদ। সেই লোকসান এখনো অনেকে টানছেন দাবি করে তিনি বলেন, ঋণের কিস্তি নিয়ম মাফিক পরিশোধ করতে না পারায় বিভিন্ন আর্থিক চাপ ও সমস্যা নিয়ে হিমাগার পরিচালনা করছেন, যা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
এবার ভাড়া বাড়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মোস্তফা আজাদ বলেন, অনেকে কোল্ড স্টোরের সামনে বাধা দিচ্ছে, ঢুকতে দিচ্ছে না। এভাবে করলে তো কোল্ড স্টোর বন্ধ করে দিত হবে। ২০২৪ সালে হিমাগারে প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৪ টাকা ছিল বলে কৃষকরা যে দাবি করছেন, সেই বিষয়ে মোস্তফা আজাদ বলেন, ভাড়া ঠিক করা হয়েছিল ৭টাকা। কিছু মধ্যস্বত্বভোগী ও সুবিধাভোগী মানুষ সত্য গোপন করে বলছেন, ২০২৪ সালে কেজি প্রতি ভাড়া ছিল ৪ টাকা।
হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয় মার্চ মাসে, আর বাজারে তোলা শুরু হয় জুলাই মাস থেকে। হিমাগার একটি মৌসুমভিত্তিক শিল্প উল্লেখ করে আজাদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ৩ মাস পর পর ব্যাংক ঋণের কিস্তি প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঋণের কিস্তি দিতে না পারলে অনেক উদ্যোক্তা খেলাপি হতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু হিমাগারের ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে আনতে একে কৃষিভিত্তিক শিল্প ঘোষণা করাসহ পাঁচ দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- বর্তমানে প্রচলিত দণ্ড-সুদ সহ ব্যাংক ঋণের সুদ শতকরা ১৭ ভাগ থেকে কমিয়ে শতকরা ৭ ভাগ করতে হবে। বিদ্যুৎ বিলের ইউনিট প্রতি রেট পিক আওয়ারে ১৩.৬২ টাকা ও অফপিক আওয়ারে ৯.৬২ টাকার স্থলে ৫ টাকা করতে হবে। ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। উৎসে কর কর্তন (টিডিএস) প্রত্যাহার করতে হবে। ত্রৈমাসিক ঋণের কিস্তির পরিবর্তে ঋণের কিস্তি বাৎসরিক করতে হবে।
এ সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে বর্তমানে ধার্যকৃত কেজি প্রতি আলু সংরক্ষণ ভাড়া ৮ টাকা থেকে কমে আসবে বলেও জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, হিমাগারে আলু সংরক্ষণে যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারিত কেজি প্রতি ৮ টাকা ভাড়ায় হিমাগার পরিচালনায় সহায়তা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইশতিয়াক আহমেদ, পরিচালক হাসেন আলী, কাজী মেহাম্মদ ইদ্রিস, চন্দন কুমার সাহা, মো. তারিকুল ইসলাম খান, গোলাম সরোয়ার রবিন, মাইনুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম বাবু, ফরহাদ হোসেন আকন্দ, মো. কামরুল ইসলাম।