অর্থ-বাণিজ্য
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার তাগিদ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(৩ সপ্তাহ আগে) ২২ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৮:০৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৩৬ অপরাহ্ন
উদার বাণিজ্যনীতির কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা গিলে খাচ্ছে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এভাবে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৭৮ লাখের বেশি এসএমই প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সরকারি নীতিসহায়তা প্রয়োজন।
বুধবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনোমিক রিপোটার্স ফোরাম, ইআরএফ মিলনায়তনে ‘এসএমই নীতিমালা ২০২৫: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ: গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় সরকারি পর্যায়ে থেকে নীতিসহায়তা চাইলেন এসএমই খাতের বিশেজ্ঞরা।
সেমিনারে এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা বলেন, বড় শিল্প গ্রুপের আগ্রাসী আচরণে ছোট উদ্যোক্তারা চ্যালেঞ্জের মুখে। নীতিমালায় তাদের সুরক্ষা দেয়া জরুরি। দেশে প্রায় ৮০ লাখ কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তা ব্যবসা করছে। তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কমপক্ষে আড়াই কোটি শ্রমিক। জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২৫ শতাংশের বেশি। শিল্পখাতের ৮০ ভাগের বেশি এসএমইর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সিংহভাগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণসুবিধা বঞ্চিত। তাদের ৩১ ধরনের কাগজ জমা দেয়ার সক্ষমতা না থাকায় ব্যাংক ঋণের সুযোগ নিচ্ছে মাঝারি উদ্যোক্তারাই।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, বড় অংশের টাকা কিন্তু মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ নিয়ে গেছে। আমাদের কুটির ও ক্ষুদ্র এন্টারপ্রাইজরা কাঠামোগত এবং ডকুমেন্টেশনের জন্য কিন্তু পিছিয়ে পড়ছেন। আমাদের যে আপডেটের নীতিমালা হবে, আমরা দাবি জানাব সিএমএসকে আলাদা করে ডিফাইন করা উচিত।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মুশফিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে বিভিন্ন জিনিস যদি শোকেজ করা যায়। যেমন আমাদের হস্তশিল্প বা জামদানি শাড়ি বা বেনারসি, যদি আমরা প্রদর্শন করতে পারি বিভিন্ন দেশে এবং এক্সপোর্ট করতে পারি তাহলে ওদের জন্য আরও অনুকূল হবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘করপোরেট হাউজগুলোর সাথে এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের যে সম্পর্ক এটি খুব হেলদি, আমি বলব না। করপোরেট হাউজ তারা বড়, তারা চায় বেশি বেশি লাভ করতে।’
সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় চলতি অর্থবছর ২৩ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন।
কর্মশালায় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন এসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসা দিন দিন ‘গিলে খাচ্ছে’ করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তাদের রক্ষার কৌশল কি হতে পারে। এর উত্তরে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান বলেন, উদার বাণিজ্য নীতির কারণে সারা বিশ্বেই তাই হচ্ছে। আমাদের দেশেও তার বাইরে নয়। চানাচুর, বিস্কুট, পাউরুটি ও মুড়ির মতো পণ্য করপোরেটরা বানাচ্ছে। এসব পণ্য এসএমই খাতে সীমিত রাখতে সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন। এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট চালগুলো করপোরেটদের চাপে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন চালের বাজার করপোরেটদের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে।
অর্থনীতির মোট কর্মসংস্থানের অন্তত ৫০ শতাংশ এসএমই খাত থেকে তৈরি হয়। আর মোট দেশজ উৎপাদনের অন্তত ২৫ শতাংশ ভূমিকা রাখছে খাতটি। এ খাতে ৭৮ লাখের বেশি এসএমই প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই পরিসংখ্যান গত ২০১৫ সালের। এরপর নতুন করে অর্থনৈতিক শুমারি হয়নি। বর্তমানে অর্থনৈতিক শুমারি তথ্য সংগ্রহ চলছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিবিএস তা প্রকাশ করতে আরো বছর খানেক সময় নিবে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব বিবরণী সংরক্ষণ করার মতো সামর্থ নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডার ও বিশেষ মোবাইল এপস সেবা দেয়ার প্রস্তাব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। এর উত্তরে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, এসএমই ফাইন্ডেশন মূলত উদ্যোক্তা তৈরি ও নীতিসহায়তা নিয়ে কাজ করে। এ বিষয়ে আগামীতে প্রস্তাবনা দেয়া থাকবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত অর্ধশতাধিক সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মশালাটির সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।