ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা শহীদ জিয়াউর রহমান

আসাদুল করিম শাহীন
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার

১৯শে জানুয়ারি ১৯৩৬, শীতকাল, রোদ্দুরে তেমন উত্তাপ ছিল না, প্রকৃতি ঢাকা পড়েছিল সঞ্চরণশীল মেঘ আর কুয়াশায়। হালকা স্নিগ্ধ বাতাস বইছিল ধীরলয়ে। বাড়ির সামনে বিশাল দীঘি, পানি স্ফটিক-স্বচ্ছ। মাঝে বয়ে চলছে তরঙ্গময় নির্ঝর। আশপাশে ঝোপঝাড় লতাগুল্মে ভরা, মাঝে ফুটে আছে বিচিত্র বর্ণের রঙিন ফুল। সেদিন আকাশে জ্বলজ্বল করছিল ধ্রুবতারা, বাতাসে মুগ্ধতার আবেশ। প্রকৃতিতে দৃশ্যমান সুন্দরের, হরেক রকম খেলা। এমনি মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বগুড়ার বাগবাড়িতে জন্ম নিলো একটি শিশু। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান, ‘জিয়াউর রহমান।’ ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের রূপকার, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ দর্শনের প্রবক্তা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ইতিহাস দ্রষ্টা মহান এই নেতার আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। জাতি আজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে ও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে তার ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় অবদানকে। মহান স্বাধীনতার ঘোষক বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দক্ষ ও জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতির ইতিহাসে ও আমাদের জাতীয় জীবনে যে অনন্য সাধারণ ভূমিকা ও অবদান রেখে গেছেন তা-ই তাকে জনগণের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। স্বদেশ প্রেম, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের প্রতি সুগভীর শ্রদ্ধা দেশের উন্নয়ন, জনকল্যাণে ঐকান্তিক আগ্রহ এবং ব্যক্তি সততার সুনাম তাকে বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ও জননন্দিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। শহীদ জিয়ার ছেলেবেলা কেটেছে কলকাতায়। তার বাবা মনসুর রহমান তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। কলকাতার হেয়ার স্কুলে শহীদ জিয়া ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে শিশু জিয়া করাচি চলে যান। সেখানে কেটেছে তার স্কুল ও কলেজ জীবন। করাচির স্কুল-কলেজে অধ্যয়নকালে শহীদ জিয়া একজন ভালো হকি খেলোয়াড় ছিলেন। স্কুলে তিনি ইংরেজিতে ভালো বক্তৃতা দিতে পারতেন। কৈশোরে নির্মেদ দেহের অধিকারী এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। এই জন্য সকলেই তাকে সমীহ করে চলতো। বই পড়া ছিল তার বিশেষ শখ। তিনি প্রায়ই স্কুল লাইব্রেরিতে বই নিয়ে পড়াশোনা করতেন। জিয়াউর রহমানের ডাক নাম ছিল কমল। ছেলেবেলায় কমল ছিল লাজুক স্বভাবের এবং অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলতেন শিশু কমল। মিথ্যা বলতেন না। কেউ মিথ্যা বললে অপছন্দ করতেন। করাচির ডি জে কলেজে পড়ার সময় ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে একজন অফিসার ক্যাডেট হিসেবে জিয়া যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে শহীদ জিয়া কমান্ডো ট্রেনিং লাভ করেন। ১৯৬৭ সালের এপ্রিল মাসে জিয়াউর রহমান ঢাকার অদূরে জয়দেবপুর সাব-ক্যান্টনমেন্টে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাচে লিয়নে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানি যান। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। তার ঘাঁটি ছিল ষোলশহর বাজারে। এখান থেকেই শহীদ জিয়া দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালে জাতির সবচেয়ে বড় বিপদের দিনে মুক্তিপাগল দিশাহারা জনগণের কাছে, একটি ‘অবিস্মরণীয় কণ্ঠস্বর’ তাদের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করেছিল। ‘১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে জাতির সেই ক্রান্তিলগ্নে ভেসে এসেছিল একটি কণ্ঠস্বর ‘আমি মেজর জিয়া বলছি।’ ‘সেই কণ্ঠ সেদিন অযুত প্রাণে নতুন সঞ্জীবনী মন্ত্র এনে দিয়েছিল।’ 

১৯৭৫ সালে কয়েকবার ক্ষমতার রদবদল হয়। কিন্তু জিয়াউর রহমান তার ওপর অর্পিত রাষ্ট্রীয় পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কারও অনৈতিক প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হননি। তিনি বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৭৫ এর ৩রা নভেম্বর আধিপত্যবাদীদের এদেশীয় চরেরা ষড়যন্ত্র করে তাকে বন্দি করে। কিন্তু ৭ই নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে সিপাহি জনতা তাকে মুক্ত করে পুনরায় তার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে এবং ক্রমে তিনি দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ব্রতী হন। পূর্ণ ক্ষমতা লাভের পর বাংলাদেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পতাকা সমুন্নত রাখার, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় এবং দেশ গঠন ও জনকল্যাণের শপথ নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রমনা ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং অর্জিত স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র যা আজ ভুলণ্ঠিত। গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধে এবং এদেশের মানুষের স্বতন্ত্র-জাতিসত্তা ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতালাভের পর দেশের শাসনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে সেই বিশ্বাসেরই প্রতিফলন ঘটান, বৃহত্তর জনগণের স্বতন্ত্র আত্মপরিচয় ও আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেন এবং জনগণের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়া জগদ্দল পাথর তথাকথিত বাকশাল বিলুপ্ত করে বাংলাদেশে বহু দলীয় গণতন্ত্রের জানালা খুলে দেন। যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য। শহীদ জিয়া ক্ষমতা গ্রহণের পর একাধারে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নিজস্ব স্বকীয়তা ও আত্মশক্তির বিকাশ, দেশ গঠন, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে উদ্যোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরার এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নেন। তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন যে, বর্তমান বিশ্বে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া অস্তিত্ব রক্ষা ও উন্নয়ন কঠিন। বাংলাদেশের মতো একটি নব্য স্বাধীন, জনবহুল ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশের পক্ষে তা যে আরও কঠিন সে সত্য ও বাস্তবতা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। অত্যন্ত বাস্তব কারণে প্রেসিডেন্ট জিয়া সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে প্রতিবেশী দেশসমূহ ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জিয়ার বিশেষ উদ্যোগ ও তৎপরতার ফলেই মুসলিম বিশ্বের বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর মৈত্রীবন্ধন ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওআইসি তথা ইসলামী সম্মেলন সংস্থার তৎপরতায় প্রেসিডেন্ট জিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং উন্নয়নে সহযোগিতার নীতিতে বিশ্বাসী প্রেসিডেন্ট জিয়া সার্ক ধারণার পথদ্রষ্টা এবং এই সংগঠনের বড় প্রেরণার উৎস। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সম্মানজনক অবস্থানের পেছনে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ভূমিকা ও অবদান অবিস্মরণীয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্মান ও স্বীকৃতি এবং বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে জিয়া স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির পথেও অগ্রসর হতে পেরেছিলেন। রাজনীতিতে জিয়াউর রহমান ছিলেন নিঃসন্দেহে একজন ব্যতিক্রমী পুরুষ। রাজনীতির নিস্তরঙ্গ সমুদ্রে তিনি প্রচণ্ড বেগ সৃষ্টি করেছিলেন। রাজনীতি তাকে পরিণত করেছিল জনগণের শক্তিতে বলীয়ান শ্রেষ্ঠ জাতীয় ব্যক্তিতে। জনগণের বিশ্বাস আর প্রত্যাশার কাছে তিনি ছিলেন আশা জাগানিয়া মানুষ। সত্তর ও আশির দশকের ক্রান্তিকালে বিশ্বে যে ক’জন নেতা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শহীদ জিয়া ছিলেন তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে। শহীদ জিয়া রাজনীতি সম্পর্কে ছিলেন সচেতন ব্যক্তিত্ব সবদিকে ছিল তার সমান দৃষ্টি। তিনি সংবাদপত্রে ‘আমাদের পথ’ নামে একটি রাজনৈতিক প্রবন্ধ লেখেন তাতে শহীদ জিয়া লিখলেন ‘মানুষের কর্মে, চিন্তা-ভাবনা, রাজনীতি-এসব কিছুই নির্ণীত ও পরিচালিত হয় একটা বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে এ জীবনদর্শনের তারতম্য ঘটতে পারে। তাই কোনো কোনো মানুষের রাজনীতি ও জীবনদর্শন ভীতির উদ্রেক করলেও সবসময় তা বিপজ্জনক বা অকল্যাণজনক নাও হতে পারে। বস্তুত: কোনো কিছুকে অবলম্বন না করে কোনো রাজনীতি কোনো দর্শনের উন্মেষ এবং বিকাশ ঘটতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ মার্কস ‘ইজম’-এর কথা বলা যেতে পারে। যদি আমরা মার্কস-ইজম নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করি তাহলে দেখা যাবে এর একটা আদর্শ এবং লক্ষ্য আছে। এ আদর্শ ও লক্ষ্যকে ভিত্তি করেই রাশিয়ায় মার্কস-ইজম কায়েম হয়েছিল। একথা আজ বিনাদ্বিধায় বলা যেতে পারে যে ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় মার্কস-ইজম এর প্রভাব না ঘটলে হয়তো রুশ জাতি এতটা উন্নত অবস্থায় উপনীত হতে পারতো না। হয়তো বা সেখানকার সাধারণ মানুষের অবস্থার আরও অবনতি ঘটতো। এই যে আমরা সবাই রাতের বেলায় আলো জ্বালাই এর পেছনেও যুক্তি আছে, ভিত্তি আছে। রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার পেছনেও রয়েছে একটা ভিত্তি আছে একটা যুক্তি আছে। এ ভিত্তিটা কি? অপরাপর বিরোধী রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক দর্শনকে যথাযথভাবে যুক্তি ও কর্মসূচিসহ মোকাবিলা করে স্বীয় জীবনবোধের আলোকে সমাজ ও জাতিকে গড়ে তোলা এবং কখনো কখনো পথভ্রষ্ট স্বেচ্ছাচারের কাছ থেকে বাঁচার তাগিদই হচ্ছে একটি রাজনৈতিক মতের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার মৌল কারণ। এর অর্থ এই দাঁড়াচ্ছে যে-রাজনীতি, রাজনৈতিক দর্শন ও বিশ্বাস মানুষের একটা সুষ্ঠু সুন্দর চেতনাবোধ।’ বাংলাদেশি জাতিসত্তার রূপকার ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোর সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি। তিনিই ছিলেন এই জাতির শ্রেষ্ঠ নেতা। স্বল্প সময় তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। তার এই স্বল্পকালীন সময়ই বাংলাদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময় জাতির জন্য তার উপহার তার কালজয়ী দর্শন ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’। এটি একটি চেতনার নাম। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে আমাদের জাতির অস্তিত্বের, ভৌগোলিক অবস্থান, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক উন্মেষ এবং তার ঐতিহাসিক পটভূমি আমাদের জাতীয় চেতনার রূপরেখা নির্ধারণ করেছে। এই জাতীয় চেতনার উদ্বোধন পর্যায় ক্রমিকভাবে উপনিবেশবাদ বিরোধী সংগ্রাম জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং পরবর্তীকালে সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্যদিয়ে অগ্রসর হয়েছে। ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সেই পর্যায়ক্রমিক ইতিহাস ও সংগ্রামের প্রক্রিয়ার ফল। আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব নির্ধারিত হয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এর নির্যাস হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল নিয়ে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্র তাকে রক্ষা করা, প্রাণ দিয়ে ভালোবাসার মধ্যেই নিহিত রয়েছে আমাদের জাতীয়তাবাদের মূল শক্তি। আমাদের স্বাজাত্যবোধ একান্তভাবেই আমাদের রাজনৈতিক চেতনার প্রতিফলন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূল প্রেরণা জাতীয় স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব এবং আত্মনির্ভরশীল জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলা যা ছিল শহীদ জিয়ার স্বপ্ন। তিনি মনে করতেন দেশীয় ও বৈদেশিক শক্তিকে আমাদের আত্মশক্তির দ্বারা আমরা পরাস্ত করবো। সেই আত্মশক্তির মূল চেতনা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।
শহীদ জিয়ার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা। তিনি বাংলাদেশকে স্বনির্ভর ও আত্মপ্রত্যয়ী করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন। তার আমলে বাংলাদেশের অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে ঈর্ষান্বিত উন্নতি সাধিত হয়। এ ছাড়া দেশের অগণিত মানুষের জীবনের দুঃস্বপ্ন কেটে গিয়ে এক সোনালি ভবিষ্যতের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছিল। তার সময়েই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ উপাধি প্রাপ্ত দেশ উন্নতি আর সমৃদ্ধির নতুন দিগন্তের পথে বিরামহীন যাত্রা শুরু করেছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি, শিল্প ও রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে তিনি বিপ্লবের সূচনা করেন। তিনিই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের গোড়াপত্তন করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে ইপিজেড এর শুভ সূচনা করেন এবং তা গণচীনের আগেই। তার কর্মসূচির মধ্যে তার রাজনৈতিক দর্শন নিহিত রয়েছে যা হলো- উৎপাদনমুখী রাজনীতি, বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, ন্যায়ভিত্তিক শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা। এই বিষয়গুলো ছিল তার রাজনীতির মূল লক্ষ্য। তার রাজনীতির আর একটি লক্ষ্য ছিল বিপ্লব সেই বিপ্লব হলো, শিক্ষা বিপ্লব, কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব আর জনসংখ্যার বিস্ফোরণকে প্রাণান্তকরভাবে ঠেকিয়ে রাখা। আজ এই সকল কর্মসূচি থেকে দেশ অনেক দূরে সরে গেছে, এটাই হচ্ছে সুষম উন্নয়নের অন্তরায়। শহীদ জিয়ার অসমাপ্ত বিপ্লবকে এগিয়ে নেয়া এবং সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব তারই স্বপ্ন ও আদর্শে উজ্জীবিত রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের সকল নেতাকর্মীরা, যদি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আত্মনিয়োগ করে তবে সেটাই হবে শহীদ জিয়ার প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের রাজনীতির চরম অধঃপতনের সময়ে মহান দেশপ্রেমের আলোকবর্তিকা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। পার্থিব লোভ-লালসা ও ক্ষমতার মোহ তাকে ন্যায় ও সত্যের আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত করতে পারেনি। অন্যায় ও অসত্যের নিকট তিনি কোনোদিন মাথানত করেন নি। আজ জাতির শ্রেষ্ঠ নায়ক শহীদ জিয়ার পবিত্র জন্মদিনে মহান আল্লাহর নিকট তার আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি।
লেখক: সহ-প্রচার সম্পাদক, বিএনপি।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status