ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ রজব ১৪৪৬ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

গার্মেন্টস শিল্পের হাবে পরিণত হচ্ছে উত্তরা ইপিজেড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবারmzamin

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলাধীন সংগলশী ইউনিয়নে অবস্থিত উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (উত্তরা ইপিজেড) আঞ্চলিক অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কয়েক বছর আগেও নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো অবস্থা ছিল যাদের। সহায়-সম্বল কিছুই ছিল না। তারা এখন স্বাবলম্বী। শুধু মৌসুমভিত্তিক কাজের সুযোগ থাকায় এ অঞ্চলে আগে স্থানীয়দের বেকারত্ব ছিল বেশি। বর্তমানে ৩৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এই ইপিজেডে, যার মধ্যে ৯৫ শতাংশই স্থানীয় বাসিন্দা। এর মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে উত্তরা ইপিজেড। এ ছাড়া আগামীতে আরও কারখানা চালু হলে গার্মেন্টস হাব হবে উত্তরা ইপিজেড।

জানা গেছে, দিনে প্রায় ২২ হাজারের বেশি মোটরবাইক ইপিজেডের গেট দিয়ে প্রবেশ করে। মূল ফটক থেকে একটু আগালেই হাতের বাম পাশে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের কারখানা। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায় আরও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। গেট দিয়ে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করছেন নারী-পুরুষ কর্মীরা। প্রবেশ করেই যার যার কাজের জায়গাতে যুক্ত হচ্ছেন। সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার নারী-পুরুষ কর্মী প্রবেশ করেন। ঘড়িতে ৭টা ৫৫ মিনিট বাজার সঙ্গে সঙ্গেই থেমে গেল কোরআন তেলাওয়াত। বাজতে থাকে জাতীয় সংগীত। উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। এ সময় কারখানার ভেতর-বাইরে যে যেখানে, যেভাবে ছিলেন, সবাই স্টাচু হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, এ দৃশ্য নতুন নয়, এটা প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্কের মতো। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় মূলকাজ। চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এরপর দেয়া হয় নামাজ ও খাবারের বিরতি। কারখানার নিজস্ব ক্যান্টিনে ২ হাজার ৫০০ জন কর্মী দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। তাদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়। ১২ হাজার ৮০০ টাকা শুরু করে দক্ষতা অনুসারে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাচ্ছেন কর্মীরা। আঁখি নামে এক সুইংয়ের কর্মী দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসে চাকরি নেন। মাত্র কয়েক বছরে তিনি এখন স্বাবলম্বী। বর্তমানে তারা দুজনেই উত্তরা ইপিজেডের এই গ্রুপে চাকরি করেন। নিজেদের উপার্জনে বানিয়েছেন পাকা বাড়ি, কিনেছেন মোটরসাইকেল। জমি বন্ধক নিয়ে ধান ছাড়াও বিভিন্ন ফসল আবাদ করছেন। তিনি বলেন, আগে ঢাকার সাভারে কাজ করতেন। সেখানে ওভারটাইম সহ যে বেতন পেতেন, তা দিয়ে ঘরভাড়া ও খাওয়া-দাওয়ার পর হাতে বেশি টাকা থাকতো না। কিন্তু এখানে ওভারটাইম ছাড়াই সংসার ভালো চলছে। পাশেই নিজের বাড়ি। ফলে পুরো টাকাই হাতে থাকে। আর নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারছি। সাইফুল নামে ফিনিশিংয়ের কর্মী বলেন, তিন বছর ধরে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসে কাজ করছেন। তিনি এর আগে গাজীপুরের একটি কারখানায় কাজ করতেন। বর্তমানে তার বেতন ১৯ হাজারের একটু বেশি। নিজের এলাকায় নিজের পেশার কাজে ভালো বেতনে কাজ পাওয়ায় মহাখুশি সাইফুল। মা-বাবা, ভাইবোন ও স্ত্রী-সন্তান সবাইকে নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি ইপিজেড কারখানা প্রাঙ্গণে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের জেনারেল ম্যানেজার (প্রডাকশন) ইসুরু উমেশ সাংবাদিকদের জানান, উত্তরবঙ্গে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। এটিই বর্তমানে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় পোশাক কারখানা। এখানে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। চায়না-বাংলা যৌথ ব্যবস্থাপনায় কারখানার উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। উত্তরা ইপিজেডের ২৩টি কোম্পানি বিনিয়োগ করে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক কথায় আদর্শ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বলতে যা বুঝায় দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস তার বাস্তব উদাহরণ। দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) মো. ইব্রাহিম আকন জানান, কারখানায় বেশ কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। অটো সেটআপ মেশিন স্থান পেয়েছে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলে; যা দেশের হাতেগোনা কয়েকটি কারখানায় ব্যবহৃত হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের হেড অব এইচ আর, এডমিন অ্যান্ড কমপ্লাইন্স মো. আশরাফ উল্লাহ বলেন, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের কর্মসংস্থান ব্যাপকহারে সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের দরিদ্র দূর করতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে উত্তরা ইপিজেড। বর্তমানে ২৬০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে ইপিজেডটি। বর্তমানে ২৩টি কারখানায় প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন। এখানে আরও কয়েকটি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হলে উত্তরবঙ্গের চেহারা পাল্টে যাবে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি কারখানা চালু হলে গার্মেন্টস হাব হবে উত্তরা ইপিজেড।
দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলের মাশ্চেনডাইজিং ম্যানেজার এফ এম শফিউল আজম জানান, উত্তরা ইপিজেডে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে বর্তমানে আড়াই হাজার কর্মী কাজ করছেন। 
কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস শতভাগ রপ্তানিবান্ধব প্রতিষ্ঠান। যাতে এমব্রয়ডারি, ডেনিম গার্মেন্টস, ওয়াশিং ইউনিট এবং প্রিন্ট সুবিধা রয়েছে। প্রতিবছর এখান থেকে এক কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার পিস ডেনিম/চিনো/কার্গো প্যান্ট, আউটওয়্যার, ফেন্সি অ্যাপারেলস উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে। এতে ইটিপি প্ল্যান্ট ও ওয়াশিং প্ল্যান্ট সুবিধাও বাস্তবায়ন হয়েছে। দেশবন্ধু টেক্সটাইলস তার পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরির মাাধ্যমে মনোনিবেশ করেছে যা পরিবেশগত সমস্যা নিরসন ও জ্বালানি উৎকর্ষ বৃদ্ধি করছে।

পাঠকের মতামত

আলহামদুলিল্লাহ দেশবন্ধু গ্রুপ আরো এগিয়ে যাক , সারাদেশে মানুষের নির্ভরযোগ্য কর্ম সংস্থান হোক।

Md Rubel HS
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন

আমরা গর্বিত, এমন এক কোম্পানীতে চাকুরী করে। আমরা সকলে দোয়া করি, আল্লাহ যেন আমাদের এই কোম্পানী (দেশবন্ধু টেক্সাটাইল মিলস লিমিটেড) কে বাংলাদেশের ভিতর এক নাম্বার কোম্পানীতে পরিণত করেন এবং এই অভাবী ও মঙ্গা উত্তর অঞ্চল এর মানুষের ভাগ্যের আরও পরিবর্তন আনেন। এবং সেই সাথে মানবজমিন এর অর্থনৈতিক রিপোর্টার সহ মানবজমিন ও এর সাথে জরিত সকলে উন্নতি কামনা করছি।

মোঃ টুটুল ইসলাম
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

I'm Proud

Moshiar
২১ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবার, ৮:০৬ পূর্বাহ্ন

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Bangladesh Army

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status