ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ৮ বছর, তারপরও তিনি মুক্তিযোদ্ধা

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার
mzamin

জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মসাল ১৯৬৩ইং। সেই হিসেবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তার বয়স ৮ বছর। বয়স অনুসারে যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি শিশু বয়সী থাকলেও বর্তমানে কাগজে কলমে তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউপির বাসিন্দা মনোয়ার হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের মতে, দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকলেও বর্তমানে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু যুদ্ধকালীন শিশু বয়সী মনোয়ার কীভাবে মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লেখালেন? এমন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১২ সালে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন মনোয়ার। সে সময় জন্মসাল ১৯৬৩ থাকলেও ২০২১ সালে এসে জন্মসাল ১৯৫১ চেয়ে এনআইডির তথ্য পরিবর্তনের জন্য কমিশন বরাবর আবেদন করেন মনোয়ার। আবেদনের সময় দেয়া হলফনামায়ও পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয় প্রবাসী। পরবর্তীতে সেই আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য দায়িত্ব পড়ে “গ” ক্যাটাগরি তথা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার ওপর। 

কমিশনের সার্ভার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে তৎকালীন কর্মকর্তা তার স্ব-শরীরে উপস্থিতিতে শুনানির মাধ্যমে আববেদনটি মঞ্জুর করেন। ফলে ১৯৫১ জন্মসালের মাধ্যমে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার বয়স দাঁড়ায় ২০ বছর। আর নাগরিক সেবার এই সুযোগের অসৎ ব্যবহার করেন মনোয়ার। এদিকে ২০২১ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স বাড়ানোর পর ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক গেজেট ২৯৭১ ও মুক্তিযোদ্ধার নম্বর:০১১৫০০০৮৩৮৩  মূলে মনোয়ারকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করা হয়। গেজেটে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৮৫তম সভার আলোচ্যসূচি ০৫ সুপারিশ/সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেসামরিক গেজেট নিয়মিতকরণ করা হলো। এ ছাড়াও তাকে দেয়া সনদে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও ২০২১ এ এনআইডির তথ্য পরিবর্তনে প্রতীয়মান হয় যে, মনোয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বনে যান।  পরবর্তীতে মনোয়ারের এমন কর্মকাণ্ড নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিগোচর হলে ২০২৪-এর চলতি মাসে তার এনআইডি রোলব্যাক করেন কমিশন। ফলে বর্তমানে তার এনআইডিতে জন্মসাল ১৯৬৩ এবং সেই অনুসারে শিশু বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন মনোয়ার।

 অভিযোগ রয়েছে, সাতকানিয়া উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের এলএমজি ও আ’লীগ নেতার ছেলের সহায়তায় অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা বনে যান মনোয়ার। এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মনোয়ার প্রথমে এনআইডির তথ্য পরিবর্তনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এমন কিছুই হয়নি। কিন্তু প্রতিবেদকের হাতে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে এবং এনআইডি সংশোধনের পর মুক্তিযোদ্ধা হলেন কীভাবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। আমি জেনারেল ওসমানীর কাছ থেকে অস্ত্র জমা দিয়ে টোকেন নিয়েছি। কিন্তু আগে কেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম আসেনি এসব প্রশ্ন করলে সদুত্তর না দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। অন্যদিকে সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধা তলিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে বেশ কয়েকটি ধাপ পাড়ি দিতে হয়। যেমন, স্থানীয় কমান্ডার এবং নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে যাচাইকরণ, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার সেক্টরভিত্তিক অবস্থান, কমান্ডারের সুপারিশ ইত্যাদি। কিন্তু মনোয়ারের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকা কী ছিল, বা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছে, তার বিষয়ে সুপারিশ করেছেন কিনা? এসব বিষয়ে জানতে সাতকানিয়া উপজেলার তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এলএমজি আবু তাহেরকে একাধিকবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ২০২২-২৩ সালে অহরহ মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। যাদের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। এই ব্যক্তিও হয়তো সেই সুযোগটি ব্যবহার করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, যদি কারও বিষয়ে এমন অভিযোগ উঠে তাহলে আমরা প্রাথমিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেবো যেন তারা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করবো।

পাঠকের মতামত

গত ১৫ বছরে যারা মুক্তিযুদ্ধের সনদ পেয়েছেন অবিলম্বে প্রত্যেকের সনদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চেক করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীদের সনদ বাতিল সহ মোটা অংকের জরিমানার বিধান জারি করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির শত্রু এদের কে ধরিয়ে দিন।

বঙ্গবন্ধু সৈনিক
২৯ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:৪৯ পূর্বাহ্ন

Magura jelar sreepur upojelar boralidha grame besh koyekjon vuya freedom fighters ace.aktu kindly dekhen

Mizan
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ১০:৫৪ অপরাহ্ন

Magura jelar sreepur e bivinno grame ace.aktu khoz khobir nile ber hobe

Kamal
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ১০:৫২ অপরাহ্ন

তাহলে আমি কি ? আমার জন্ম ১৯৬২ তে ।

পাঠক
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৯:৪৮ অপরাহ্ন

এ রকম লক্ষ লক্ষ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দরকার। না হলে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন কিভাবে করবে মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র চেতনাধারী দল আওয়ামীলীগ।

কবির
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৯:২১ অপরাহ্ন

আসল মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে এখন নকল মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেশি।আসল মুক্তিযোদ্ধাদের দাপট কম কিন্তু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দাপট অনেক বেশি এদের দাপটে দেশে বসবাস করা মুশকিল। দেশে যেমন সব কিছুতে নকলে ছড়াছড়ি অনুরূপ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। দেশের জনগণ এই অবস্থা থেকে পরিবর্তন যায়।ইনশাআল্লাহ।

Sheikh Lokman hossai
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৬:৫৫ অপরাহ্ন

পতিত হাসিনা সরকার মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছে।

শামীম জাহাঙ্গীর
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৪:০৫ অপরাহ্ন

এমন অনেক লোক আছেন, যারা মুক্তিযোদ্ধর সনদ নিয়ে দেশের এবং সমাজের অনেক ক্ষতি করেছেন কিন্তু আমরা ভয়ে কছিু বলতে পারিনী।

মোঃ আনোয়ার হোসেন।
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ১২:২২ অপরাহ্ন

হতেই পারে। উনি যদি ছোট এই সুযোগ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করে থাকেন বা কেউ নিয়ে থাকে তাহলে উনিও মুক্তি যোদ্ধা

Jahid
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

তিনি আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধাদের মাত্র একজন, এ রকম বহুত আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা দেশে আনাচে কানাচে পড়ে আছে।

মোঃ আজিজুল হক
২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৮:১৩ পূর্বাহ্ন

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status