দেশ বিদেশ
আশুলিয়ায় বন্ধের দিনেও পোশাক কারখানায় কাজে শ্রমিকরা
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে
৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার
আশুলিয়ায় বন্ধের দিনও প্রায় দেড় শতাধিক কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন মালিক পক্ষ। মূলত গত কয়েকদিনের টানা শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই গতকাল কারখানাগুলো চালু রাখা হয়। সকাল থেকেই কারখানাগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রবেশ করে কাজে যোগ দিয়েছেন পোশাক শ্রমিকরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারসহ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যৌথ বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, দেশের সবচেয়ে শ্রমিকঘন শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ১ হাজার ৮৬৩টি কারখানায় কাজ করেন ৯ লাখ ৮০ হাজার শ্রমিক। কঠোর নিরপত্তার মধ্যদিয়ে ছুটির দিনেও কাজ করতে পেড়ে আনন্দিত শ্রমিকরা। চালু কারখানাগুলোর মালিকরা জানান, গত কয়েকদিন শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এজন্য সময় মতো অর্ডার সরবরাহ করার লক্ষ্যে ঘাটতি পুষিয়ে নিতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পণ্য রপ্তানির চাপ সামাল দিতে এবং বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মালিক-শ্রমিক উভয়ের সম্মতিতেই আমরা ছুটির দিনে কারখানা খোলা রেখেছি। শ্রমিকরা জানান, কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর জন্যই আমরা গ্রাম থেকে শহরে এসেছি। শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারলে যথা সময়ে বেতন পাবো এবং পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবো। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে কারখানা বন্ধ থাকায় কাজ করতে পারিনি। এতে করে মালিকের পাশাপাশি আমাদেরও ক্ষতি হয়েছে। আমরা বেতন কম পেলে সংসার খরচেও টাকা কম পড়বে। বর্তমানে সব জিনিসের দাম বাড়তি হওয়ায় কোনো রকমে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। তাই ছুটির দিনেও কারখানা খোলা রাখায় আমাদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আশুলিয়ার রাইজিং গ্রুপের অ্যাক্টিভ কম্পোজিট মিলস লিমিটেড কারখানার ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, প্রায় ১২ বছর ধরে প্রতিবছর একটি হট আইটেমের বিপুল পরিমাণ অর্ডার পেতাম আমরা। কিন্তু সম্প্রতি শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সেটি আমাদের হাতছাড়া হয়ে বাইরের দেশে চলে গেছে। টানা আন্দোলনের কারণে বায়াররা আমাদের অর্ডার দেয়া কমিয়ে দিয়েছেন। শ্রমিকদের যে ১৮ দফা দাবি ছিল সেগুলো বিজিএমইএ, শ্রমিক সংগঠন ও সরকার আলোচনার মাধ্যমে মেনে নিয়েছে। তারপরও অযৌক্তিক কিছু দাবির কারণে বর্তমানে মালিক-শ্রমিকের যে সেতুবন্ধন ছিল সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু শ্রমিক রয়েছে যারা আমাদের মানে না, তাদের নেতাদেরও মানে না। তারা কথায় কথায় কাজ বন্ধ করে দেয়া, যা উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর। আমার মনে হয় কোনো শ্রমিক ইউনিয়ন বা শ্রমিক সংগঠনের ইন্ধনের কারণেই এমন আন্দোলনের ঘটনা ঘটছে। তিনি আরও বলেন, সত্যিকার অর্থে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় আমাদের দেশে বিদেশি ক্রেতারা যে অর্ডার দিয়ে থাকে। কিন্তু শ্রমিকরা যদি ঘন ঘন অযৌক্তিক দাবি করেন সেগুলো মানতে গেলে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এখন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলে বিদেশি অর্ডার কমে যাবে। তখন অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাবে এবং বেকারত্বে সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সম্প্রতি চলমান আন্দোলনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ যৌথ বাহিনীর ওপর যে আক্রমন হয়েছে এটি যে শ্রমিকরা করেছে সেটি আমি কখনও বিশ্বাস করি না। আমার মনে হয় এখানে অন্য কোনো বহিরাগত উস্কানি রয়েছে। তাই আমি প্রশাসনকে বলবো এই বিষয়গুলো যাতে ভালোভাবে তদন্ত করে সত্যিকারের দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনে গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষা করতে হবে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, শুক্রবার ছুটির দিনেও আশুলিয়ায় প্রায় দেড় শতাধিক কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে কর্তৃপক্ষ। মূলত শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর অর্ডার সময়মতো ডেলিভারি দেয়ার জন্যই মালিক-শ্রমিক উভয়ের সম্মতিতেই কারখানাগুলো চালু রয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমাদের পক্ষ থেকে চালু থাকা কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, আর্মড পুলিশ, এপিবিএন, বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর টহলও অব্যাহত রয়েছে।