দেশ বিদেশ
জুলাই-আগস্টে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নের রেকর্ড
স্টাফ রিপোর্টার
৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবারচলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ ব্যয় হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা, যা মোট এডিপি বরাদ্দের ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বুধবার বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। যেখানে এডিপি বাস্তবায়নের এই হার এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন বলে জানানো হয়েছে। আইএমইডি’র ওয়েবসাইটে ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে কোনো অর্থবছরই এডিপি বাস্তবায়ন হার ৩ শতাংশের কম ছিল না। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ, এর আগের অর্থবছরে বাস্তবায়ন হার ছিল ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আইএমইডি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-আগস্ট মাসে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২৪১ কোটি টাকা, যা সরকারি তহবিলের বরাদ্দের ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগে কোনো অর্থবছরে জুলাই-আগস্ট মাসে এত কম অর্থ ব্যয় হয়নি। গত অর্থবছরের একই সময়ে টাকার অংকে ব্যয় হয়েছিল ৬ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা, যা ওই অর্থবছরের এডিপিতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দের ১ দশমিক ২৭ শতাংশ ছিল। অন্যদিকে বৈদেশিক সহায়তা খাতের বরাদ্দ থেকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ব্যয় হয়েছে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ বা ৩ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বৈদেশিক তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আইএমইডি’র তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া অনেক বড় মন্ত্রণালয় ও বিভাগও প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে পারেনি। এরমধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এডিপি ০.০১ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ০.২৩ শতাংশ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ০.৩৫ শতাংশ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ০.০১ শতাংশ, সেতু বিভাগ ০.২৩ শতাংশ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ০.০১ শতাংশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ০.৯৬ শতাংশ এবং শিল্প মন্ত্রণালয় ০.৫৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ বরাদ্দের ২.৪৭ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ৩. ১৬ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১.০৫ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১.৯৩ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ০.৬৫ শতাংশ এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ০.৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে আইএমইডি’র কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত প্রস্তুতিমূলক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মককর্তারা। এ কারণে অর্থবছরের শুরুতে এডিপি বাস্তবায়ন হার কম থাকে। এছাড়া জুলাই মাসজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলা ব্লকেড ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাবেও এডিপি বাস্তবায়নের হার কমেছে। একই পরিস্থিতি ছিল আগস্ট মাসেও। ৫ই আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। কিন্তু আগস্ট মাস জুড়ে প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা যায়। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। আবার বিদেশি অর্থায়নের কিছু প্রকল্পে বিদেশি কর্মী, ঠিকাদার প্রতিনিধি ও পরামর্শকরা প্রকল্প সাইট ছেড়ে চলে যায়। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। ওদিকে সরকার পাইপলাইনে থাকা প্রস্তাবিত প্রকল্পের পাশপাশি চলমান প্রকল্পও নতুন করে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে চলমান অনেক প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবও আটকে গেছে। সব মিলিয়ে এডিপি বাস্তবায়নও স্থবির হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।