দেশ বিদেশ
সিরাজগঞ্জে কোটা জালিয়াতি
৪৫ জনের বিরুদ্ধে পোস্ট অফিসে চাকরি নেয়ার অভিযোগ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবারসিরাজগঞ্জে তথ্য জালিয়াতি করে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে পোস্ট অফিসে চাকরি নেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সিরাজগঞ্জ পোস্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আলহাজ মোহাম্মদ নাসিম ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে সংরক্ষিত কোটায় জেলার বাসিন্দাদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করে সিরাজগঞ্জের ৪৫ জনকে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে চাকরি দেন। এর মধ্যে বাবা-মা’র নাম ঠিক রেখে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার নয়াপাড়া পোস্ট অফিসের আওতাধীন শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের অন্তর্গত শিমুলবাড়ী গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের মৃত ইসহাক আলীর ছেলে আবুল কালাম আজাদকে চাকরি দেন।
গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার জেনারেল আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তথ্য গোপন করে চাকরিতে প্রবেশ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং চাকরি নীতিমালা বহির্ভূত। তবে তথ্য গোপন করে যারা চাকরি গ্রহণ করেছেন তাদের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের অবহিত করা হবে।
কোটা জালিয়াতিকারী এই আবুল কালাম আজাদ বর্তমান সিরাজগঞ্জ শহরের মুড়িপট্টি সাব-পোস্ট অফিসে সাব-পোস্টমাস্টার পদে চাকরি করছেন। চাকরি গ্রহণের সময় পোস্ট অফিসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জেলা কোটা শূন্য না থাকায় তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এর নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা আজাদ সুকৌশলে কুড়িগ্রাম জেলার উল্লিখিত ঠিকানা ব্যবহার করে ও সংশ্লিষ্ট ঠিকানাধীন শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র ও চারিত্রিক নাগরিক সনদ নিয়ে চাকরি গ্রহণ করেন এবং জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পোস্ট অফিসে তার স্বীয় কাজে যোগদান করেন।
পরবর্তীতে তিনি সেখান থেকে বদলি হয়ে বর্তমানে সিরাজগঞ্জ বাজার সাব-পোস্ট অফিসে সাব- পোস্টমাস্টার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, তিনি নিজে বংশানুক্রমে সক্রিয় আওয়ামী লীগ কর্মী ও তার ছোটভাই রাজু কাজিপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার সুবাদে সে সময় তথ্য গোপন করার সহায়তা প্রদানসহ চাকরির সকল বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন নাসিম।
এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোটা জালিয়াতি করে শুধু আমি চাকরি নেইনি, এভাবে সে সময় আমার মতো ৪৫ জনের চাকরি হয়েছে। সে সময় চাকরিতে সিরাজগঞ্জ জেলার কোটা শূন্য না থাকায় তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আমাকে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর কাছে পাঠান। পরে ওই চেয়ারম্যান মন্ত্রীর নির্দেশক্রমে শিমুলবাড়ী গ্রামকে আমার স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়ে প্রত্যয়নপত্র ও একটি চারিত্রিক নাগরিক সনদপত্র দেন। পরে ওই কাগজপত্র এনে মন্ত্রীর পিএস এর কাছে জমা দেয়ার পর মন্ত্রী আমাকে কুড়িগ্রাম জেলার কোটায় চাকরি দিয়েছেন। তবে এভাবে ওই সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী অন্য জেলার কোটায় এক মেমোতে আমার মতো সিরাজগঞ্জের ৪৫ জনকে চাকরি দিয়েছেন। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জ প্রধান পোস্ট অফিসে ইন্সপেক্টর শহর (আইপিও) গোলবার হোসেন অনন্ত, সহকারী পোস্টমাস্টার কামরুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম সোহেল, কামরুজ্জামান, চিত্তরঞ্জন তালুকদার, পোস্টাল অপারেটর দুলাল হোসেন, মাসুদ রানা মণ্ডল, পোস্টাল অপারেটর জাহিদুল ইসলাম সুজন, সেরাজুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ শহরের ভাসানী পোস্ট অফিসের সাব-পোস্টমাস্টার আব্দুর রাজ্জাক ভুঁইয়া, কালীবাড়ী পোস্ট অফিসের পোস্টাল অপারেটর কামরুজ্জামান তালুকদার, রায়গঞ্জের ধানগড়া পোস্টমাস্টার গিয়াস উদ্দিন, রাজশাহী পিএমজি অফিসে পোস্টাল অপারেটর ফিরোজ হোসেন, বগুড়া প্রধান ডাকঘরের পোস্টাল অপারেটর রায়হান ও ঢাকা এয়ারপোর্ট পোস্ট অফিসে রফিকুল ইসলামসহ দেশের বিভিন্ন পোস্ট অফিসে সিরাজগঞ্জের ৪৫ জন কর্মরত রয়েছেন।
এছাড়াও চাকরি নীতিমালা ভঙ্গ পূর্বক তথ্য গোপন করে তার দু’টি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। নিজ জেলার তথ্য গোপন করে অন্য জেলার কোটায় সরকারি চাকরি গ্রহণ এবং সেই জেলার প্রার্থীদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন দুদককে তদন্ত-পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের সচেতন নাগরিক সমাজ।
সিরাজগঞ্জ জেলা নাগরিক ফোরাম এর সভাপতি এএইচএম মহিবুল্লাহ মহিব বলেন, তথ্য গোপন জালিয়াতি ও তথ্য বিকৃত করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চাকরির শুরুতেই যারা অসততার আশ্রয় নেয়, তাদের অপরাধপ্রবণতা পরবর্তী সময়ে চাকরির ক্ষেত্রে বেশি দেখা দেয়। সরকারি চাকরিতে ঢোকার জন্য যিনি তথ্য গোপন বা বিকৃত করেছেন, যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।