ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

নতুন তরতাজা দেশ গড়তে ব্যবসায়ীদের সহায়তা চাইলেন ড. ইউনূস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(১ মাস আগে) ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৭:২১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

mzamin

অতীতের পচা দেশ থেকে নতুন তরতাজা দেশ গড়তে ব্যবসায়ীদের কাছে সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংলাপের সময় তিনি এ সহায়তা চান।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসিবি) বাংলাদেশ এবং ১৫টি জাতীয় বাণিজ্য সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংলাপে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, এফআইসিসিআই, বিএবি, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের মতো সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এতে সম্প্রতি বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার চিত্র তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।

শ্রমিক, শিল্প মালিক এবং সরকারকে এক টিম হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমার একটা আশা, যতদিন থাকি, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ককে একটা সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাব। শ্রমিক, মালিক, সরকার একসঙ্গে টিম হয়ে এটা করবে। ব্যবসা করা একটা সংগ্রাম, এ সংগ্রামটা আমরা সহজ করবো। তিনি বলেন, যতটুকু সময় আমরা সরকারে আছি, ততটুকু সময়েই টিম হিসেবে কাজ করব। সবাই মিলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান প্রথাগত আন্দোলন ছিল না। তারা এটা জেনেই রাস্তায় নেমেছিল যে, না-ও ফিরতে পারে বাড়িতে। প্রাণের বিনিময়ে তারা লক্ষ্য অর্জন করেছে। নতুন বাংলাদেশের জন্য তরুণদের লড়াইয়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা এ সুযোগ না করে দিলে জাতিকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করা যেত না। তাই আমাদের সুস্থ্য-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে হবে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘এ সুযোগ জাতির জীবনে বারবার আসে না। অতীত আর টানবে না আপনাকে। নতুনভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এটা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। আর হারালে জাতির আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবো না।

আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের তার পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর নাসির হোসেন। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে রপ্তানিখাত দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের অসৎ চর্চা এবং আর্থিক অনিয়মের কারণে দেশের অর্থনীতি আজ হুমকির মুখে পড়েছে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সেই সব অসাধু ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনিব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোরালো আবেদন জানানো যাচ্ছে।

দেশের সিংহভাগ বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা যারা সৎভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন, তাদেরকে নিরাপদে ও আস্থার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য একটি ব্যবসা অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়ে আইসিসিবি এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে এক নম্বর অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানান।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময় থেকেই দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই সুযোগে কিছু দুষ্কৃতকারী দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যার একটি বড় প্রভাব পড়ছে রপ্তানিসহ সব শিল্প-কারখানাগুলোর উপর। শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন বহিরাগতদের উসকানিতে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। এমনকি শ্রমিক সংগঠনগুলোও এই কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় বলে বিবৃতি দিচ্ছে। এ সব দুষ্কৃতকারীরা ব্যবসায়িক স্থাপনা, শিল্প- কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালাচ্ছে।

দুষ্কৃতিকারীদের হামলার কারণে এযাবৎ প্রায় আনুমানিক ১০০টির অধিক কারখানায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং অবস্থা বেগতিক দেখে ২০০-এর অধিক কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে আনুমানিক ৫ হাজার কোটি টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্প পুলিশের সীমিত উপস্থিতি, থানা পুলিশের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অর্থনৈতিক সক্ষমতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান হ্রাস করবে। তাই অবিলম্বে সকল শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর অধিকতর উপস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করার জন্য জোরালোভাবে আবেদন জানানো হয়।

আইসিসিবি বলেছে, তৈরি পোশাক, ঔষধ, খাদ্য ও কৃষি নামাজ আদা, চামড়া ও পাদুকা শিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, পাটজাতদ্রব্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে প্রায় ৭ কোটি জনবলের কর্মসংস্থান রয়েছে। অস্থিরতার কারণে শিল্প কারখানার চাকা চলমান রাখা না গেলে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য কর্মহীন হয়ে যেতে পারে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। যে সব এলাকায় যৌথবাহিনীর উপস্থিতি দেখতে পাওয়া গেছে সেখানে সার্বিক পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এ পদক্ষেপ পুরো শিল্পাঞ্চলে প্রসারিত হলে অচিরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস।

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status