ঢাকা, ৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

টেকসই বর্জ্য ফেব্রিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে বিনিয়োগ করবে এনভয় টেক্সটাইল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(৩ সপ্তাহ আগে) ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৭:৪০ অপরাহ্ন

বিশ্বের প্রথম লিড প্ল্যাটিনাম সনদপ্রাপ্ত ডেনিম টেক্সটাইল মিল এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেড এবার বর্জ্য কাপড়কে পুনঃব্যবহার করে সুতা তৈরির রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন এই প্রকল্পটি আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করবে বলে আশা করছেন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার রাজধারীর পশ্চিম পান্থপথে কোম্পানির কর্পোরেট অফিসে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন বর্জ্য ফেব্রিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্টটি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় এনভয় টেক্সটাইলসের বর্তমান কারখানা প্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হবে।
এনভয় টেক্সটাইলসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, প্রকৌশলী কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রকল্পটির জন্য মোট বিনিয়োগের পরিমাণ অনুমান করা হয়েছে ২৩.৭০ কোটি টাকা, যার অর্থায়ন কাঠামোতে থাকবে ৭০ শতাংশ ঋণ এবং ৩০ শতাংশ নিজস্ব নিয়োগ থাকবে। তিনি বলেন, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন প্রকল্পের নির্মাণ শুরু করার পরিকল্পনা করছি এবং একই সময়ে তুরস্ক থেকে যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলবো। আমরা ইতিমধ্যে তুরস্কে বেশ কয়েকটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় কারখানা পরিদর্শন করেছি। আশা করি, এই অর্থবছরের শেষ নাগাদ প্ল্যান্টটি সম্পূর্ণরূপে চালু হবে, যা আমাদের উৎপাদন ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে এবং আমাদের ক্রেতাদের ক্রমবর্ধমান স্থায়িত্বের চাহিদা পূরণ করবে বলে মনে করেন তিনি।

এনভয় টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, এই প্ল্যান্টটি তাদের কারখানায় সৃষ্ট বর্জ্য কাপড় (প্রাক-শিল্প) এবং ভোক্তার সৃষ্ট (পরবর্তী) বর্জ্য কাপড়কে প্রক্রিয়াজাত করে উচ্চমানের পুনর্ব্যবহারযোগ্য সুতায় রূপান্তর করবে। একবার প্ল্যান্টটি চালু হয়ে গেলে, এটি কোম্পানিকে বাহ্যিকভাবে উৎপাদিত বর্জ্য কাপড়কে পুনর্ব্যবহারযোগ্য সুতায় প্রতিস্থাপন করবে। তানভীর বলেন, এই উদ্যোগ যে কেবল প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করবে তা নয় বরং পরিবেশগতভাবে টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য আমাদের ক্রেতাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে। নতুন প্ল্যান্টটি থেকে টেক্সটাইল মিলের অতিরিক্ত রাজস্ব আয় বার্ষিক প্রায় ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে আশা করছেন তিনি।

কোম্পানির সেক্রেটারি এম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অনুকূল বাজার পরিস্থিতির অধীনে প্রকল্পটি বার্ষিক মুনাফায় প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা উপার্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা কোম্পানির মূল আয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। এই উদ্যোগটি আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার উদ্দেশ্য পূরণ করার সঙ্গে সঙ্গে লাভজনকতা বাড়ানোর জন্য আমাদের কৌশলগত প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বর্জ্য কাপড়কে পুনঃব্যবহার করে সুতা তৈরির রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে বিনিয়োগকে একটি কৌশলগত উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করে কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি শুধুমাত্র কোম্পানির পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদন অনুশীলনকেই উন্নত করে না বরং আরও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানি বাজারে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, প্ল্যান্টটি সম্পূর্ণরূপে চালু হয়ে গেলে, এটি তাদের ডেনিম ফ্যাব্রিক রপ্তানিতে গজ প্রতি ৫ থেকে ৮ সেন্ট মুনাফা যোগ করতে সহায়তা করবে। তিনি জানান, নতুন প্রকল্পটি প্রতিদিন আনুমানিক ১২ টন বর্জ্য কাপড়কে প্রক্রিয়া করার সক্ষমতা নিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে, যা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৯৮ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য সুতায় রূপান্তরিত হবে।

বর্তমানে এনভয় টেক্সটাইল নিয়মিত ডেনিম কাপড় উৎপাদনের জন্য আমদানি করা নতুন তুলা ব্যবহার করার পাশাপাশি সুতা উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ৪ টন পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সুতাও ব্যবহার করে থাকে। তবে নতুন এই প্ল্যান্টটি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিটি আমদানিকৃত নতুন তুলা ব্যবহার করার পশাপাশি বর্জ্য কাপড়কে প্রক্রিয়াজাত করে উচ্চমানের পুনর্ব্যবহারযোগ্য সুতায় রূপান্তর করবে, যা প্রতিষ্ঠানটির এর টেকসই পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকারকে আরও সমুন্নত করবে।

এনভয় টেক্সটাইলের বর্তমানে প্রতিমাসে ১৩০ টন বর্জ্য সুতা প্রক্রিয়াকরণের জন্য গ্লোবাল রিসাইকেল স্ট্যান্ডার্ড (জিআরএস) এবং রিসাইকেল ক্লেম স্ট্যান্ডার্ড (আরসিএস) সার্টিফিকেশন রয়েছে। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের পর, প্রতিমাসে কোম্পানিটির আনুমানিক ৩৫০ টন বর্জ্য কাপড় প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এনভয় টেক্সটাইলসের মাসে প্রায় ৪৫ লাখ গজ ডেনিম কাপড় উৎপাদনের সক্ষমতা আছে, যার বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কারখানাটি প্রায় ৬০ কোটি টাকা লাভ করেছে, যাতে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক বৃদ্ধি ৪৩.৪৫ শতাংশ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০শে জুন পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার প্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ৫১.৯৩ টাকা ছিল, যা এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৩০শে জুনে ছিল ৩৮.৫৮ টাকা। এছাড়া একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ৩.৫৮ টাকায় পৌঁছেছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১.৯৫ টাকা।
 

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status