অর্থ-বাণিজ্য
দেউলিয়া হওয়ার পথে ১০ ব্যাংক: গভর্নর
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(৩ সপ্তাহ আগে) ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৯:২৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ২:৪৬ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ভেতরে ভেতরে অনেক ব্যাংক দেউলিয়ার পথে। কমপক্ষে ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার মতো খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। তবে সরকার এসব ব্যাংক বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন গভর্নর।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি না কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে, তবে এটাও ঠিক অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে আছে। ১০টার মতো ব্যাংকের অবস্থা এমন। সরকার এসব ব্যাংক বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এরপর ক্রমান্বয়ে সব ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা পরীক্ষা করা হবে; এরপর প্রয়োজনে মার্জ করা হবে। তবুও গ্রাহকের আমানত ঝুঁকিতে ফেলা হবে না। গভর্নর ১০ ব্যাংকের কথা বললেও সেগুলোর নাম উল্লেখ করেননি।
ব্যাংক খাতের অবস্থা যাই হোক গ্রাহকদের কোনো ক্ষতি হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য আমানত ইন্সুরেন্স ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। ব্যাংক খাতের ৯৫ শতাংশ গ্রাহকের স্বার্থ নিশ্চিত হবে। বিশ্বের কোনো দেশই ব্যাংকিং খাতের আমানতের ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দেয় না। আমরাও ৯৫ শতাংশ গ্যারান্টি দিচ্ছি।’
ব্যাংক খাত সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠনের কাজ অনেকটাই এগিয়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করতে পারব। ব্যাংকগুলোর ফরেন্সিক প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করবে এডিবি। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর ‘স্বাস্থ্য যাচাই’ করে সে আলোকে কাজ করবে টাস্কাফোর্স। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর লেনদেন দৈনিক ভিত্তিতে যাচাই করা হচ্ছে; রেগুলার ক্যাশফ্লো মনিটরিং করা হচ্ছে।
ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৫ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। কিন্তু বিতরণ হচ্ছে না। তার মানে পদ্ধতিগত ক্রটি আছে। কঠিন শর্ত দিয়ে ঋণ বিতরণ হবে না। নমনীয় নীতি দরকার। আমরা চেষ্টা করব যাতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ পায়। এ খাতে এডিবি অর্থ সহায়তা করতে আগ্রহী।
এক প্রশ্নে আহসান মনসুর বলেন, প্রভাবশালীদের জন্য যেসব পলিসি করা হয়েছে, তা রিভিউ করা হবে। রিভিউ করার পর যদি দেখা যায় ১০ বা ২০ জন লোকের জন্য করা হয়েছে; তাহলে তা বাতিল করা হবে।
“ব্যাংক খাতের পরিবারতন্ত্র রুখতে প্রয়োজনে আইন সংশোধ করতে হবে। তবে তা এখনই করা হচ্ছে না। শেষ দিকে করা হবে। কারণ আইন বারবার পরিবর্তন করা যায় না।”
ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক খাতের বাইরে ছিল। তাই সংকট দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে ৩০ হাজার কোটি টাকা ফেরত এসেছে। তাই পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ফলে টাকা উত্তোলনের যে সীমা ছিল, তা তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে যে ১০ ব্যাংকের সমস্যা রয়েছে; তাদের গ্রাহকদের আরও কিছু দিন ধৈর্য ধরতে হবে।
এক্সিম ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেয়ার বিষয়ে গভর্নর বলেন, এটা আগের প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। তাই দেয়া হয়েছে। এখন আর এভাবে তারল্য সহায়তা দেয়া হবে না। তবে ব্যাংকগুলো যাতে তারল্য সহায়তা পায়, সে জন্য আন্তঃব্যাংক থেকে ধার করার সুযোগ করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ওইসব ব্যাংকের গ্যারান্টার হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এস আলম গ্রুপের সম্পদ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, যারা এসব সম্পদ কিনবে তারা যেন নিজ দায়িত্বে কেনেন। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক দায়-দায়িত্ব নেবে না। এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যাংক খাত অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে; যা নিয়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতকারীর ৯৫ শতাংশেরই একাউন্ট নিরাপদ রয়েছে বলে দাবি করেছেন।
আহসান মনসুর বলেন, আমানতবিমা দ্বিগুণ করার কারণে ব্যাংক খাতের মোট আমানতকারীর ৯৫ শতাংশ অ্যাকাউন্ট নিরাপদ আছে। আমানতের বিপরীতে যে বিমা রাখতে হয়, তা আগে ছিল ১ লাখ; সেটা এখন থেকে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে জনমনে যাতে শঙ্কা তৈরি না হয়, সে বিষয়ে গভর্নর বলেন, ”আমানতকারীদের আস্থা ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে এটি ছিল ১ লাখ, এখন ২ লাখ করা হয়েছে।
good job
১০ ব্যাংকের নাম উল্লেখ করেন