ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

মার্কেট-ব্যাংকে নেই গ্রাহক, উদ্বেগে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে ব্যাংক খোলা রাখা হলেও গ্রাহকদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। আন্দোলনকে ঘিরে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিপণিবিতান ও বিক্রয়কেন্দ্রের বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। রাজধানী জুড়ে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ব্যাংগুলোতেও গ্রাহক সংখ্যা কম লক্ষ্য করা গেছে। ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার অনেক কাউন্টার ছিল ফাঁকা। যারা ব্যাংকে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই টাকা উত্তোলনের জন্য এসেছেন। রোববার রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন ও ফকিরাপুল এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা এখনো বিপর্যস্তও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া কারফিউ পরিস্থিতির মধ্যে সন্ধ্যার পর দোকান খোলা রাখা যাচ্ছে না। এ কারণেও বেচাকেনা একপ্রকার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তারা জানান, চলমান পরিস্থিতিতে গত ২ দিনে (শুক্র ও শনিবার) বেচাকেনা একেবারেই কম হয়েছে। আর রোববার রাজধানীতে বিপণিবিতান ও বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ছিল।

ব্যাংকে গ্রাহক নেই: এদিকে আন্দোলন ভবিষ্যতে ভয়াবহ আকার ধারণ করে কিনা এমন ভীতিও কাজ করছে অনেকের মধ্যে। এজন্য গত রাত থেকেই গ্রাহকদের ব্যাংকের এটিএম এবং এজেন্ট পয়েন্টগুলো থেকে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা তুলতে দেখা গেছে। রোববারও কিছু এটিএম বুথে নেটওয়ার্ক জটিলতা ও টাকা শেষ হওয়ায় বিভিন্ন বুথে দৌড়ঝাঁপ করেছেন গ্রাহকরা। সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা ছিল। অন্যান্য দিন শুরু থেকেই গ্রাহকদের ভিড় থাকে। তবে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গ্রাহকদের তেমন দেখা যায়নি ব্যাংকের শাখায়। টাকা জমার গ্রাহক ছিল হাতেগোনা কয়েকজন। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছে, অতি জরুরি কাজ ছাড়া আজ কেউ ব্যাংকে আসছেন না। বেশির ভাগ এসেছেন নগদ অর্থ তুলতে। এটিএম বুথ চালু থাকায় অবশ্য শাখা থেকে নগদ টাকা তোলার চাহিদা কম। বড় অঙ্কের লেনদেন ছাড়া শাখায় আসার প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এমএফএসসহ সব সেবাই চালু আছে। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, অনেকের মাঝেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ফলে যেকোনো সময়ের চেয়ে শাখায় গ্রাহক উপস্থিতি কম। 

দিনের শুরুতেই অন্তত ৫০ জনের বেশি গ্রাহক থাকলেও আজ মাত্র ১২-১৩ জন ছিলেন। কী হচ্ছে, কোন দিকে যাচ্ছে পরিবেশ ইত্যাদি। এ কারণে গ্রাহকের উপস্থিতি কিছুটা কম রয়েছে। একই কথা জানান সোনালী ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের দিলকুশা শাখার কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, স্বাভাবিক সময়ে চলবে ব্যাংক, আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। লেনদেনের স্বার্থে ব্যাংকগুলোর বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশনা আগে থেকেই দেয়া আছে। তিনি বলেন, তবে যদি অস্বাভাবিক লেনদেন হয় সে ক্ষেত্রে তো সমস্যা হবে। আর নেটওয়ার্ক জটিলতার বিষয়টি ব্যাংকগুলোর নিজস্ব বিষয়। কোনো ব্যাংকের লেনদেনসহ যাবতীয় অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর ভোল্টসহ সব শাখা-উপশাখায় নিরাপত্তা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

উদ্বেগে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন: উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রোববার দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। ঢালাও দরপতন হওয়ায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া ৯৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। ডিএসইতে লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১০০ পয়েন্টের ওপরে। অন্য শেয়ার বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় রয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। ফলে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে বাজারটিতেও। সেইসঙ্গে ক্রেতা সংকটে ছিল লেনদেন খরা। রোববার নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে শুরুতেই দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠান। এতে শুরুতেই সূচকের বড় পতন হয়। সেই ক্রেতা সংকট দেখা দেয় সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের। লেনদেনের পুরো সময় জুড়ে এ অবস্থা বিরাজ করে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৯৪ শতাংশ বা ৩৭২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। বিপরীতে দাম বেড়েছে ৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১০৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৪৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৫২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৩৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৯৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৭৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৪টির এবং ১১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৩৮ কোটি ৭ লাখ টাকা।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status