বিশ্বজমিন
নতুন ভোরের অপেক্ষায় ভেনিজুয়েলার জনগণ, এবারও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয়
মানবজমিন ডেস্ক
(৮ মাস আগে) ২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ৫:২২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা এক ঐতিহাসিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। দেশটিতে স্থানীয় সময় রোববার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা। ধারণা করা হচ্ছে ২৫ বছর ধরে চলা সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান হতে পারে এবারের নির্বাচনে। যদি দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সেখানে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি করেন, তাহলে ভোটের পরবর্তী দিনের প্রভাত হবে ভেনিজুয়েলার জন্য এক ঐতিহাসিক সকাল। এবারের নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে লড়াই করছেন ৬১ বছর বয়সী মাদুরো। এক্ষেত্রে তার শক্ত প্রতিপক্ষ হচ্ছে বিরোধী দলীয় নেতা এবং একজন সেরা কূটনীতিক এডমান্ডো গঞ্জালেজ। মতামত জরিপের তথ্য বলছে এবার ৭৪ বছর বয়সী অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ গঞ্জালেজের কাছে পরাজিত হতে পারেন টানা দুইবার ক্ষমতায় থাকা মাদুরো। এবারের নির্বাচন যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তাহলে ভূমিধস পরাজয় হতে পারে মাদুরোর। কিন্তু সর্বশেষ যে অবস্থার কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেশটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় ঘনীভূত হয়েছে।
অনলাইন দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে মাদুরো নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে ফলাফল নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে পারেন। যদিও গঞ্জালেজের পক্ষে ভোট বেশি পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে এই নির্বাচনকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি স্বেচ্ছাচারী হিসাবে বর্ণনা করেছেন পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ। যদি মাদুরো তার পূর্বসূরি হুগো শ্যাভেজের পথে হাঁটেন তাহলে এবারও দেশটির নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। কেননা শ্যাভেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তিনি দেশটিতে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার উত্তরসূরী হিসেবে সেই শাসন বহাল রেখেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাদুরো। তিনি শ্যাভেজের মৃত্যুর পর থেকেই ক্ষমতায় রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগও রয়েছে।
এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আটক করে মাদুরোর প্রশাসন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের ভোটারদের হুমকি-ধামকির ঘটনাও ঘটেছে। মাদুরের এমন কার্যকলাপে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এনজিও ইলেক্টোরাল ট্রান্সপারেন্সির পরামর্শদাতা জেসুস কাস্তেলানোস। তিনি বলেছেন, একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের মধ্যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। যদিও বিরোধী দল এবং পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদুরো। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় দেশটিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন। ইতোমধ্যেই প্রায় দেশীয় ৭০০ ভলানটিয়ার অর্গানাইজেশন ভোটের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে। কিন্তু সেখানে কোনো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নেই বলে অভিযোগ করেছে বিরোধী পক্ষ। যদিও জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনুমোদন দেয়া হয়েছে তবে তা খুবই সীমিত। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের কোনো পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দেননি মাদুরো। এছাড়া লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ মাদুরো সরকারকে সমর্থন করে না। এক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের প্রশাসন ভেনিজুয়েলায় পর্যবেক্ষক পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার দেশটিতে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ২০১৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ লাখ বাসিন্দা দেশ ত্যাগ করেছেন। যার ফলে এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।