ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

আবু সাঈদ নিহতের এফআইআরে পুলিশের গুলির উল্লেখ নেই

জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে
২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবারmzamin

কোটা আন্দোলনে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় এফআইআরে পুলিশের গুলির উল্লেখ নেই। শিক্ষার্থীরা বলছে, সাঈদকে খুব সামনে থেকে পুলিশ গুলি করে। এ দৃশ্য সকল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এফআইআরে তার উল্লেখ না করে পুলিশ নিজেকে কলঙ্কিত করে চলেছে । যেখানে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ গুলি করেছে, সেখানে আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় অন্যদের গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। সাধারণ ছাত্ররা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ মারা গেলেও এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সুস্পষ্ট মামলা হয়নি। উল্টো নিজেদের দোষ ঢেকে পুলিশ দায়ী করেছে আন্দোলনকারীদের। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন প্রকাশ্যে বুকে গুলির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারা বিশ্ব দেখেছে। তাছাড়া, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না, ভিডিও দেখলে তার প্রমাণ মিলবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি বলেন, গত ১৬ই জুলাই দুপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন আবু সাঈদ।

বিজ্ঞাপন
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। মিছিলের সামনে থেকে তিনি নেতৃত্ব দেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। আবু সাঈদ একা দাঁড়িয়ে তা মোকাবিলার চেষ্টা করেন। বুক উঁচিয়ে দেয়া আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। রংপুর মেডিকেলে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিলে আবু সাঈদের লাশ নিয়ে বেরোবির দিকে আসা-যাওয়ার পথে কাচারিবাজার  এলাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাশ পুলিশ ছিনিয়ে নেয়। 

এদিকে কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের মৃত্যুর ১১ দিনেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি। আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনকারীদের ছোড়া গুলিতে হয়েছে পুলিশ মামলায় উল্লেখ করায় বিভিন্ন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আবু সাঈদ হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্বজন ও সচেনতনরা। 
গত ১৬ই জুলাই কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ মামলা করেছেন। গত ১৭ই জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায় তাজহাট থানায় এ মামলা করেন। মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয় ‘বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়। তখন সহপাঠীরা তাকে ধরাধরি করে জরুরি চিকিৎসার জন্য বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত ছাত্রের নাম আবু সাঈদ (২৩)। পিতা-মকবুল হোসেন, সাং-জাফরপাড়া বাবনপুর, থানা-পীরগঞ্জ, জেলা রংপুর বলে মেডিকেল সূত্রে জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে সংঘর্ষ ও আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৮ই জুলাই বেরোবি উপাচার্যের নির্দেশে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিউর রহমানকে আহ্বায়ক, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমানকে সদস্য সচিব ও  রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. বিজয় মোহনকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করাসহ এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু আজ অবধি সেই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ড. শফিকুর রহমান বলেন, তদন্তের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুতই প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হবে। অপরদিকে ১৭ই জুলাই একই ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সায়ফুজ্জামান ফারুকীকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। সেই কমিটি ১১ দিনেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সায়ফুজ্জামান ফারুকী বলেন, আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় যেই দোষী হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্তের কাজ শেষের দিকে। রোববার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) মানবজমিনকে বলেন, পুলিশ ওইদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ছররা গুলি করেছে। যদি কেউ ১৫ থেকে ২০ গজের ভেতরে থাকে, তবে ছররা গুলি তার শরীরে বসন্ত গুটির মতো আঘাত হানবে। তবে মারা যাবে না। ১৬ই জুলাই পুলিশ আবু সাঈদের থেকে প্রায় ৭০ গজ দূরে ছিল। তাই পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। আবু সাঈদের মাথার পেছনে একটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা সেটি খতিয়ে দেখছি।

পাঠকের মতামত

এফ আই আর কি সঠিক জানি না । কিন্ত ধারণা করছি পুলিশের কোন রিপোর্ট। তারা কি তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিবে ? এটা সহজ বোধ্য। আল্লাহ আলীমুল গইব, সর্বজ্ঞানী সর্ব দ্রষ্টা ।

Kazi
২৯ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

আল্লাহ যদি কাউকে ধ্বংস করে দেয় মনে হয় তাদের মুখ থেকে এরকম মিথ্যা কথা বাহির হয়।

ফারুক আহমেদ
২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ১১:২১ অপরাহ্ন

আল্লাহ যদি কাউকে ধ্বংস করে দেয় মনে হয় তাদের মুখ থেকে এরকম মিথ্যা কথা বাহির হয়।

ফারুক আহমেদ
২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ১১:২১ অপরাহ্ন

আবু সাঈদ নিহতের এফআইআরে পুলিশের গুলির উল্লেখ নেই পুরোপুরি মিথ্যায় সাজানো,আসিতেছে দিন শুধিতে হবে ঋণ!

রেজাউল
২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ৩:৫১ অপরাহ্ন

এভাবে কি পার পাওয়া যায়?

দয়াল মাসুদ
২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ৩:১৬ অপরাহ্ন

পুলিশের উপর থেকে মানুষের আস্থা বিশ্বাস একেবারেই উঠে গেছে।

Md iqbal hossain
২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ১:১৪ অপরাহ্ন

যে কোনো ভাবে একটা গল্প বলে দিলেই হল। আমাদের আবার তা বিশ্বাস করতে হবে। তারা আবার জোর করে প্রচার করবে তারাই জনগণের বন্ধু।

Faruk Hossain
২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন

শাক দিয়ে মাছ ডাকার চেষ্টা হাজার বার করলেও পারা যাবেনা।

জামিল আহমদ
২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

আমরা হয়তো এটা শুনতে পাবো যে বীর আবু সাইদ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে।

Shahidul
২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

!!!!!!!

MD REZAUL KARIM
২৮ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ৭:২৭ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status