দেশ বিদেশ
প্রি-পেইড মিটার রিচার্জে দীর্ঘ সারি
স্টাফ রিপোর্টার
২৫ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবারদেশে টানা প্রায় এক সপ্তাহ ইন্টারনেটসেবা বন্ধ রয়েছে। এতে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। রিচার্জ করতে না পারায় অনেকের সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে জরুরি ব্যালান্স নিতে তারা ছুটছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির অফিসে। গতকাল রাজধানীর বিদ্যুৎ অফিসগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) লিমিটেডের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের সামনে সকাল থেকেই দীর্ঘ সারি। এই সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ষাটোর্ধ মো. আফরুজ্জামান। তিনি রিচার্জ করার জন্য টানা ৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ডেসকো’র এই গ্রাহক বলেন, আমার বাসায় সকাল ৯টায় হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর সকাল ১০টায় ডেসকোতে রিচার্জ করতে এসেছি। তবে বিকাল সাড়ে তিনটায়ও আমি রিচার্জ করতে পারিনি। গরমে বাসার মানুষ অনেক কষ্ট করছে। রেশমা খাতুন নামের আরেক গ্রাহক বলেন, রাতে মিটারে ব্যালান্স শেষ হয়ে যায়। গরমের মধ্যে সারা রাত অন্ধকারে কাটাতে হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ডেসকো’র অফিসে এসে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।
ডেসকো অফিসের সামনে টানা তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রুবি খাতুন বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেছে। ইন্টারনেটের কারণে নিজেরা কার্ডে রিচার্জ করতে পারছি না। এজন্য ডেসকোতে এসেছি রিচার্জ করতে। কিন্তু অনেক দীর্ঘ লাইন। বিকাল সাড়ে ৩টায়ও রিচার্জ করতে পারিনি। কথা হয় মইন নামে ডেসকোর আরেক গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বাসায় দেড়টার সময় বিদ্যুৎ চলে গেছে। এরপর আমি রিচার্জ করতে এসেছি। কিন্তু বিকাল ৩টার পর থেকে আর রিচার্জ করা যাচ্ছে না, তবে লোন দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে টাকা রিচার্জ করা হলে এই টাকা কেটে নিবে।
জুনায়েদ ইকবাল নামের এক গ্রাহক বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিন কার্ড রিচার্জ করতে পারিনি। এজন্য এই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কার্ড রিচার্জ করতে হচ্ছে। রাতে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ফ্রিজের জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জনগণের ভোগান্তি কমাতে সরকারের উচিত দ্রুত ইন্টারনেট সেবা চালু করা।
এদিকে কার্ড রিচার্জের চাপে বিদ্যুৎ বিল দিতে এসে অনেককে ফিরে যেতে হয়েছে। তাদেরই একজন সাইফুল ইসলাম। তিনি আগারগাঁওয়ে অবস্থিত সংসদ সচিবালয়ের কোয়ার্টারের সিকিউরিটি। সেখানকার এক গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে এসেছিলেন। সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি আজ তিনবার বিদ্যুৎ বিল দিতে এসেছি। প্রতিবারই ভিড়ের কারণে ফিরে গেছি। ডেসকো থেকে অন্যদিন আসতে বলা হয়েছে। এজন্য এখন ফিরে যাচ্ছি।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের মোট গ্রাহকসংখ্যা প্রায় চার কোটি ৫১ লাখ। এর মধ্যে ৫০ লাখের বেশি গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে শুরু হওয়া সংঘাতের কারণে গত শুক্রবার বন্ধ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। যদিও আরও কয়েকদিন আগে থেকেই বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট সেবাও। মঙ্গলবার রাত থেকে দেশের কিছু জায়গায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। যদিও ইন্টারনেটের কার্যকারিতা ছিল না বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা। এ বিষয়ে গতকাল ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে বুধবার রাতে সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হতে পারে। তবে আপাতত চালু হচ্ছে না মোবাইল ইন্টারনেট। আমরা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে টেলিকম অপারেটরদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসবো। তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর আগামী রোববার বা সোমবার মোবাইল ইন্টারনেট চালু করা হবে।