দেশ বিদেশ
৪০০ কোটি টাকার মালিক প্রধানমন্ত্রীর সেই পিয়নের অ্যাকাউন্ট জব্দ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৬ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবারপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একইসঙ্গে তাদের হিসাবের সব তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। বিএফআইইউ’র সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিএফআইইউ’র পক্ষ থেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহারের স্মার্ট কার্ড নম্বর, পিতামাতার নাম ও জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহারের ব্যক্তিগত ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ২৩ (১) (গ) ধারার আওতায় আগামী ৩০ দিন তাদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের হিসাবের সব তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ।
এর আগে রোববার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিজের বাসার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, এমন তথ্য জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই কে সেই পিয়ন, এ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করে গেছে পিয়ন, সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না! কী বলবো, এটাই বাস্তব। আমি জানতে পেরে তার কার্ড সিজ করেছি, তাকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছি। যা করার আমি ব্যবস্থা নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার পরিচয় নিয়ে কোনো ইঙ্গিত না দেয়া হলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র দাবি করছে, সেই পিয়ন হলেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহার খিল গ্রামের কেরানীবাড়ির মৃত রহমত উল্যাহর ছেলে। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালীর চাটখিল ও সোনাইমুড়ী আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। নির্বাচনী হলফনামায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও নোয়াখালী নিজ এলাকায় বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল সম্পদের তথ্য উঠে আসে।
নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তার কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তার রয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দু’টি দোকান, মিরপুরে সাততলা ভবন ও গ্রামের বাড়িতে একতলা দালান। স্ত্রীর নামে আটতলা ভবন রয়েছে, যার দর দেখানো হয় ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। মিরপুরে দু’টি ফ্ল্যাট, দাম দেখানো হয় মাত্র ৪৪ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ২ হাজার ৩৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার দর উল্লেখ করা হয়েছে ৭৬ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষিজমির পরিমাণ সাড়ে ৪ একর। মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। স্ত্রীর অকৃষি জমি আছে ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার। আছে আরও বহু সম্পদ।
তার অস্থাবর সম্পদ হিসাবে হাতে ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ এবং স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা আছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপিএস আছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, এফডিআর ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার। স্ত্রীর ব্যাংক স্থিতি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ও ডিপিএস ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বন্ড ঋণপত্র স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এ রকম কোম্পানির শেয়ার আছে ৫৮ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ২৫ লাখ টাকা।
জাহাঙ্গীরের সঞ্চয়পত্র আছে ৩ লাখ টাকার, স্ত্রীর নামে আছে আরও ৩ লাখ টাকার। স্ত্রীর একটি গাড়ি আছে, যার দাম হলফনামায় দেখানো হয়েছে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৭৫ তোলা স্বর্ণের দর দেখানো হয় ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর স্ত্রীর স্বর্ণ আছে ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকার। আসবাব ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ১০ লাখ ২৮ হাজার টাকার, স্ত্রীর নামে আছে ৯ লাখ টাকার। জাহাঙ্গীর একটি পিস্তল ব্যবহার করেন, যার দাম ১ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। অংশীদারি ফার্মে তার মূলধন আছে ৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। স্ত্রীর ব্যবসায় মূলধন আছে ৭৩ লাখ টাকার।
সব মিলিয়ে কৃষি খাতে তার বছরে আয় ৪ লাখ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে আয় ১১ লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে ৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং সঞ্চয়পত্রের আয় ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। চাকরি থেকে ভাতা দেখানো হয় বছরে ৬ লাখ টাকা এবং অন্য উৎস থেকে বছরে আয় আরও ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।