দেশ বিদেশ
সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে বিভক্তি
এম.এ রাজ্জাক, সুনামগঞ্জ থেকে
২৫ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে এ বিভক্তি দেখা দেয়। বিএনপিবিহীন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলার সব কটিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই বিজয়ী হন। তবে, এ নির্বাচনকে ঘিরে দূরত্ব তৈরি হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। এর জের ধরে সর্বশেষ গত রোববার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট এবং সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিন দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন। রোববার সকালে শহরের ঐতিহ্য জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু’র প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুটসহ সংগঠনের নেতারা। পরে রমিজ বিপণির কার্যালয়ের সামনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি।
অপরদিকে একই সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিনের নেতৃত্বে পৃথক স্থান শহরের হোসেন বখ্ত চত্বর থেকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আলফাত স্কয়ারে এসে সমাবেশে মিলিত হন নেতারা। সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক অ্যাড. বিমান কান্তি রায়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাড. চান মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু প্রমুখ। এর আগে শহরের হোসেন বখ্ত চত্বরে ৫০০ বন্যার্তদের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল ও খিচুড়ি বিতরণ করেন পলিন।
একই দিনে বিকালে শহরের জগৎজ্যোতি পাঠাগারে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভার আয়োজন করেন মুকুটের বলয়ের নেতারা। মুকুটের সভাপতিত্বে এবং সবুজ কান্তি দাস ও অ্যাড. কল্লোল তালুকদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম, যুবলীগ নেতা মঞ্জুর খন্দোকার, এহসান আহমদ উজ্জ্বল প্রমুখ। পরে আলোচনা সভা শেষে দলীয় নেতারা মিছিল করে আলফাত স্কয়ারে গিয়ে সমাবেশ করেন।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর মুকুট ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিনের সমালোচনা করেন। পলিনও গণমাধ্যমে এর পাল্টা জবাব দেন। এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে সদ্য বিজয়ী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম শামীম। তিনি মুকুট বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। মুকুট নির্বাচনকালীন সময়ে শামীমের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা করেন। এই উপজেলার সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা ইকবাল আল আজাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তার পক্ষে সরাসরি প্রচারণায় করেন পলিন। অপরদিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদ্য বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা যুবলীগের সভাপতি খায়রুল হুদা চপল। তিনি মুকুটের আপন ছোট ভাই। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি যুবলীগ নেতা ফজলে রাব্বী স্মরণ। এই উপজেলার পরাজিত প্রার্থী সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাড. মনিষ কান্তি দে মিন্টু’র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মিন্টুর সঙ্গে ভোটের আগের দিন পলিনের ছবি ভাইরাল হয়। ফেসবুক স্ট্যাটাসে পলিনের পক্ষ থেকে মিন্টুকে ভোটারদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান পলিন। এরপরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে পৃথক পৃথক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নেতারা সম্পৃক্ত হওয়ায় দূূরত্ব বাড়ে তাদের মধ্যে। এর জেরধরে ধর্মপাশা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন।
মুকুট এক আলোচনা সভায় বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঐক্যের কথা বলেন। কিন্তু তাদের কার্যকলাপ অনৈক্যের সৃষ্টি করে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে জেলা কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন কীভাবে? আমার ভাই প্রার্থী হওয়ায় তিনি এটা করেছেন।
পলিন অপর এক পৃথক সভায় বলেন, উপজেলা ভোট শেষ হতে না হতেই দলের সভাপতি যেভাবে মন্তব্য করেছেন, তাঁর পদ ও বয়সের সঙ্গে এসব কথা যায় না। দল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সকল মানুষের। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক দলীয় উর্ধ্বতনরা চেয়েছেন, আমিও সেভাবেই ভূমিকা রেখেছি। বিভক্তি আসলে দল দুর্বল হবে।