দেশ বিদেশ
বাজেট প্রত্যাখ্যান
২৫শে জুন থেকে আন্দোলনে নামবে গার্মেন্টস শ্রমিকরা
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ জুন ২০২৪, রবিবার
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজাটে শিল্প, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রতিরক্ষা প্রভৃতি খাতে বরাদ্দ থাকলেও শ্রমিকদের জন্য আলাদাভাবে তেমন কোনো বরাদ্দ নেই। বাজেটে উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা যতই বলা হোক না কেন, তাতে বৈষম্য ও অসমতা নিরসন হবে না। এই বাজেট ৬ কোটি খেটে খাওয়া শ্রমিকের অভাব-অনটন আরও বাড়াবে। তাই এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করে ২৫শে জুন থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি শিল্পাঞ্চলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত বাজেট-উত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতারা। একইসঙ্গে বাজেটে শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা চালু না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা ৬ কোটি শ্রমিকের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।
শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সরকারের অর্থ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে এবং জাতীয় সংসদে ৮ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। মাহবুবুর রহমান বলেছেন, সরকার শ্রমিকদের নাগরিক হিসেবে গণ্য করে না এবং ক্ষমতার রাজনীতির জন্য তাদের শুধুমাত্র ভোটার হিসেবে ব্যবহার করে। এই বাজেট ৬ কোটি শ্রমিকের অভাব-অনটন আরও বাড়াবে এবং তাদেরকে আরও দরিদ্র করে তুলবে। এই বাজেটে শ্রমিকদের প্রতি অবিচার হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং সকল শ্রমিক সংগঠন, গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক শক্তিকে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, জিডিপি’র উন্নয়নের সূচক ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ পোশাক শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড ৫ জন শ্রমিক পরিবারের জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। যা একজন শ্রমিকের মাসিক আয় মাত্র ২৫০০ টাকা দাঁড়ায়। এই বৈষম্যমূলক আয় নির্ধারণ শ্রমিকদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। তিনি বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষের নিজস্ব আবাসন নেই এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সম্পদ ও খাদ্য বৈষম্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক পরিবারগুলো দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। শ্রমিক পরিবারগুলো জেলখানার কয়েদিদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছে।
সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বছরে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা শ্রমিকদের পকেট থেকে লুটে নিচ্ছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই সরকার কালোটাকা (অপ্রদর্শিত আয়) ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ বা সাদা করার সুযোগ দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। এ জন্যই পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীরের মতো আরও কয়েক হাজার দুর্নীতিবাজ দুর্নীতি করতে উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, সরকারি ১৪ লাখ কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য বেতন-ভাতার বরাদ্দ ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। অথচ শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর কোনো পদক্ষেপ নেই। বাজেটের এই টাকার অংক অথবা ১০ শতাংশ বরাদ্দ দিলে বাংলাদেশের গার্মেন্টসসহ ৬ কোটি শ্রমিকের স্বল্পমূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে শ্রমজীবী মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তার সুরক্ষা দেয়া সম্ভব। উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা যতই বলা হোক না কেন বৈষম্য অসমতা নিরসন হবে না। বাস্তবে এই বাজেট বানরের পিঠা বণ্টন গল্পের বিবরণ ছাড়া আর কিছুই না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই বাজেটে শ্রমিকদের জন্য কিছুই নাই। সেহেতু বাংলাদেশের ৬ কোটি শ্রমিক এই বাজেট প্রত্যাখান করছে। আগামী ২৫শে জুন থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি শিল্পাঞ্চলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, গ্রীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা আক্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক টিইউসির আইন বিষয়ক সম্পাদক কেএম মিন্টু প্রমুখ।