ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৪, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

দুর্বল ব্যাংক রক্ষা করতে গিয়ে অর্থনীতি ধ্বংস করা যাবে না- আহসান এইচ মনসুর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৩ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার

দুর্বল ব্যাংককে রক্ষা করতে গিয়ে অর্থনীতিকে ধ্বংস করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পিআরআইয়ের যৌথ আয়োজনে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনায় এ কথাগুলো বলেন তিনি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।
গুলশানের পুলিশ প্লাজায় মেট্রো চেম্বারের কার্যালয়ে বুধবার আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন মেট্রো চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার, মেট্রো চেম্বারের ট্যারিফ ও ট্যাক্সেশন কমিটির সদস্য আদিব এইচ খান। সঞ্চালনা করেন মেট্রো চেম্বারের সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, নীতি ধরে রাখতে হবে; সরে আসা যাবে না। নিজেদের কারণে তারল্য সংকটে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অর্থের জোগান দেয়া হচ্ছে। তার মানে, এক হাতে আটকে রাখছি; আরেক হাতে ছাড়ছি। তাহলে কিন্তু হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে এই তারল্য জোগান দেয়া বন্ধ করতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাজেটের আকার ছোট হলেও অর্থায়নে বিরাট সমস্যা রয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন
বড় সমস্যা হচ্ছে, ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে টাকা নিতেই হবে। আমাদের আপত্তির কিছু নাই। তবে ব্যাংকিং খাত তো সবল নয়। ব্যাংকিং খাতটা দুর্বল। চলতি অর্থবছর আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ। গত বছর তার চেয়ে কম হয়েছে। তার আগের বছর সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এবার যদি ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আমানত আসবে। সরকার যদি সেখান থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে নেয়, তাহলে ব্যক্তি খাতের জন্য থাকে ২০ শতাংশ। সরকার যদি একা ব্যাংক খাত থেকে ৮০ শতাংশ ঋণ নিয়ে নেয়, তাহলে সে দেশ চলতে পারে না।’ সরকারের উদ্দেশ্যে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আপনারা ব্যয় সংকোচনের চেষ্টা করছেন। সরকারি ব্যয় আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা ছেঁটে ফেলেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ ৯০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে আসেন। তাহলে ব্যক্তি খাত আরও ৮০-৯০ হাজার কোটি টাকা পাবে। এতে একটা ভারসাম্য আসবে।’
ব্যক্তি খাতের উদ্দেশ্যে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আপনারা শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হবেন না। আপনারা বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার ব্যবস্থা করুণ। আগে তো নিয়েছেন। ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল ব্যক্তি খাত। এখন সেটি কমে ১২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এটা যদি না বাড়াতে পারি, তাহলে দুটি সমস্যা থেকে যাবে। এক. ব্যক্তি খাতের ঋণের পরিমাণ কম হবে। দুই. দেশের আর্থিক হিসাব পজেটিভ করতে পারি তাহলে লেনদেন ভারসাম্যে সমস্যা সমাধান হবে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভটা ধীরে ধীরে বাড়বে। রিজার্ভ কমার মূল কারণ, আর্থিক হিসাব ঋণাত্মক হওয়া। যার বড় কারণ ব্যক্তি খাতের ঋণ পরিশোধ। ঋণ আরও নিতে হবে। এই কৌশলে গেলে লেনদেন ভারসাম্য ঠিক হবে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে পারবো। সরকার ও ব্যক্তি খাতের মধ্যে ঋণ ব্যবস্থাপনাও সামঞ্জস্য হবে। সামগ্রিকভাবে সেটি অর্থনীতির জন্য ভালো।’
ব্যাংক খাতের সংস্কার বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে বাজেটে কিছু নেই। কিন্তু সংস্কার করতেই হবে। অনেক দিন ধরে এটি বকেয়া রয়ে গেছে। সরকার ব্যাংক খাতকে বড় করতে পারছে না। অথচ ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছে। যদিও ভারত ১০ গুণ বেশি ঋণ করছে। কারণ, তাদের ব্যাংক খাত বড়। আমাদের ব্যাংক খাত ছোট। আমরা ব্যাংক খাতের ভঙ্গুর অবস্থা থেকে সরে আসতে না পারলে বেসরকারি খাত সেভাবে ঋণ সহায়তা পাবে না। সরকারও পাবে না। তাহলে আমরা যাবো কোথায়। শুধু বিদেশি ঋণের ওপর ভর করে তো চলতে পারবো না। তাই অবশ্যই ব্যাংক খাতে নজর দিতে হবে। পলিসি প্যারালাইসিস হলে চলবে না।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের একীভূতকরণ থমকে গেছে। আমাদের কিছু তো করতে হবে।’
 

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status