অর্থ-বাণিজ্য
পি কে হালদারের সহযোগী থেকে কারখানা উদ্ধার
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১ জুন ২০২৪, শনিবারদীর্ঘ ১২ বছর পর জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বেঙ্গল ফাইন সিরামিকস লিমিটেড। কোম্পানিটিতে রক্ষক হিসেবে এসেছিলেন বহুল আলোচিত অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিশ্বজিৎ কুমার রায়। প্রায় এক যুগ ধরে তিনি কোম্পানির মূল উদ্যোক্তা পরিচালকদের কোম্পানি থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত করে সবকিছু নিজের কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। বিশ্বজিৎ কুমার রায় যেসব শর্তে কোম্পানিটির মালিকানায় যুক্ত হয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল কোম্পানির সকল দায়-দেনা মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু গত এক যুগেও তিনি সেটা করেননি, যা শর্তের খেলাপ। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট দায় ৯৫ কোটি টাকারও বেশি দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অগোচরে কারখানার উৎপাদন ও বিপণন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সংক্রান্ত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বিএসইসি বা স্টক এক্সচেঞ্জকে দেননি, যা তালিকাভুক্তি নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
২০০৭ সাল থেকেই আর্থিক সংকটে ধুঁকতে থাকে বেঙ্গল ফাইন সিরামিকস কোম্পানিটি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে আসেন পিকে হালদার ও বিশ্বজিৎ কুমার রায়। ২০১২ সালে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বিশ্বজিত কুমার রায়ের সঙ্গে কোম্পানির সকল দায়-দেনা পরিশোধের শর্তে উদ্যোক্তা পরিচালকগণের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং বিশ্বজিত কুমার রায় কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সাবেক চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ খানের মেয়ে ফারজানা রুবাইয়াৎ খান, যিনি কোম্পানিটির একজন উদ্যোক্তা পরিচালক, তিনি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসিতে অভিযোগ দেন। সেইসঙ্গে কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের আবেদন করলে বিএসইসি তার আবেদন মঞ্জুর করে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা পরিচালক ফারজানা রুবাইয়াৎ খান বলেন, বিএসইসি বোর্ড পুনর্গঠন করে। পুনর্গঠিত বোর্ডের স্বতন্ত্র পরিচালকগণ ও বিশ্বজিত কুমার রায় গংদের সব দায়-দেনা পরিশোধ করার জন্য তিন মাস সময় বেঁধে দেন এবং বারবার উদ্যোক্তা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু বিশ্বজিত কুমার রায় গংরা সেই বেঁধে দেয়া সময়েও কোনো দায়-দেনা পরিশোধ করেনি। বিশ্বজিৎ কুমার রায় গণমাধ্যমকে বলেন, ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি। ২০১২ সালে তিনি প্রতিটি শেয়ার ৭৫ টাকা দামে কিনেছেন। তবে বিভিন্ন জটিলতার কারণে এখনো তার বেনিফিশিয়ারি ওনার (বিও) অ্যাকাউন্টে শেয়ারগুলো হস্তান্তর করা হয়নি।
কোম্পানির সুপারভাইজার মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, বিএসইসি’র সহযোগিতায় মূল মালিক পক্ষ কোম্পানিটি নতুন ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেছে। প্রশাসনের সহায়তায় এখন প্রকৃত মালিকের হাতে গেছে কোম্পানিটি। বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, বেঙ্গল ফাইন সিরামিক কোম্পানির প্রকৃত মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিএসইসি আইনের মধ্য থেকেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে।