ঢাকা, ১৭ জুন ২০২৪, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

যতক্ষণ জনগণ আমাদের সঙ্গে আমি পরোয়া করি না: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার
২৫ মে ২০২৪, শনিবারmzamin

ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আরও ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যারা মানুষের ক্ষতি করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবে এবং কাউকে রেহাই দেয়া হবে না। তিনি বলেন, জ্বালাও-পোড়াও ও অগ্নিসংযোগ যেন কেউ না করতে পারে। এটা যারা করবে তাদের কোনো ছাড় নেই। যতই মুরব্বি ধরুক আর যাই করুক এদের আমরা ছাড়বো না, এটা পরিষ্কার কথা। মানুষের ক্ষতি যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার রাতে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে একথা বলেন। তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতিবাজরা তার করে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে বিদেশে বসে রোজই আন্দোলন, সরকার উৎখাতসহ নানারকম হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। যতক্ষণ জনগণ আমাদের সঙ্গে, আমি পরোয়া করি না। তিনি বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ১৪ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটা আমাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে ও বুঝতে  হবে যে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কোনো কল্যাণ হবে না। এখানে আমাদের একটা জিনিস চিন্তা করতে হবে আমরা যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি তারা সুসংগঠিত হয়ে জনগণের  কাছে গিয়ে তাদের এই চেতনায় যুক্ত করতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস বিকৃতির চক্রান্ত মোকাবিলা করে সরকার জয় বাংলা স্লোগান আবার ফিরিয়ে এনেছে, জাতির পিতার ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্প্রচার নিষিদ্ধ ছিল তা এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে, অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে সেটাকে আর কেউ পিছিয়ে দিতে যেন না পারে। আর পারবেও না কারণ জনগণই আমাদের শক্তি। আওয়ামী লীগ সভাপতি উল্লেখ করেন, বিএনপি বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। সে সময়কার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি বিমান ঘাঁটি করতে দেয়ার প্রস্তাবও তার কাছে এসেছিল, তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং তার পুনঃনির্বাচিত হওয়ার ব্যবস্থা তারাই করবে। কিন্তু তখনও তিনি সেই নেতিবাচক উত্তরই দেন। যে ধরনের উত্তর ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ভারতে বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির বিষয়ে আমেরিকার প্রস্তাবে তিনি দিয়েছিলেন। ‘কোনো এক সাদা চামড়ার’ প্রস্তাবের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারও হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না।  ক্ষমতার দরকার নেই। যদি জনগণ চায় ক্ষমতায় আসবো, না হয় আসবো না। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। তিনি বলেন, এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য সবার জানা উচিত যে তার যে যুদ্ধ সেটা ঘরে বাইরে সব জায়গায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চক্রান্ত এখনো আছে। বে অব বেঙ্গলে একটা ঘাঁটি করবে। তার কারণ হচ্ছে বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। আর এই জায়গাটা নিয়ে কোনো রকম কারও দ্বন্দ্ব  নাই। কাজেই এই জায়গাটির উপরে সকলেরই নজর। সেটা আমি হতে দিচ্ছি না সেটাও আমার একটা অপরাধ।

 তিনি বলেন, যে কারণে আমাদের কিছু সমস্যায় সবসময় পড়তে হচ্ছে, পড়তে হবে আমি জানি। কিন্তু আমি এটাকে পাত্তা দেই না, সোজা কথা। দেশের মানুষ আমার শক্তি এই মানুষ যদি ঠিক থাকে, আমরা আছি। দেশটার যে উন্নতি হচ্ছে এটাও অনেকের পছন্দ নয়। এমনকি আমরা যে খাদ্য উৎপাদন করি বড় এক দেশ বলে ফেললো এত খাদ্য উৎপাদনের দরকার কি, আমাদের তো আছে আমরা দিতে পারি। জাতির পিতা যে বলেছিলেন তার মাটি ও মানুষ আছে তা দিয়ে স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলবেন এবং সে পদক্ষেপও নিয়েছিলেন সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করবো এবং এই দেশে কোনো মানুষ আর ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। সেভাবেই আমরা দেশটাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি যেখানে বাধা দেয়ার একটা প্রচেষ্টা রয়েছে, যোগ করেন তিনি।  সরকারের করে দেয়া অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ নিয়ে তার বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করায় দেশে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের ঢালাও এবং মিথ্যা সমালোচনার পরও কোনো কোনো চ্যানেলের টক শো’তে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে না দেয়ার অভিযোগেরও তিনি সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আরও যে সমস্যাটা হবে সেটি হচ্ছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে মানুষকে হেয়প্রতিপন্ন করা। সেটাও করা হচ্ছে এবং সেটিকে নজরদারিতে আনার জন্যই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। শুধু আমাদের দেশ নয় উন্নত দেশগুলোও এখন এই ব্যাপারে চিন্তিত এবং এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ও খুঁজছে দেশগুলো। 

এ সময় তিনি কোভিড-১৯ পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, মূল্যস্ফীতি সমস্যাটা বড় আকারে দেখা দিয়েছে এবং কেবল বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশও এর ভুক্তভোগী। তিনি সংবাদে প্রচারিত সাম্প্রতিক একটি অর্থনৈতিক রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলেন, আমেরিকাতেও মূল্যস্ফীতি একটি বিরাট সমস্যা। অনেক দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, আমাদেরও। কোভিড-১৯ এর সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ এবং মানুষের চলাচল সীমিত থাকায় এবং বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী রেমিট্যান্স আসায় দেশের রিজার্ভ বেড়েছিল। কিন্তু সবকিছু চালুর পর আবার ব্যয় বেড়েছে। তিনি বলেন, খরচ হবেই কিন্তু আমাদের যদি আপৎকালীন সময়ের জন্য খাদ্য মজুতটা থাকে তাহলে রিজার্ভ নিয়ে খুব একটা চিন্তার কোনো ব্যাপার নেই। যথেষ্ট উৎপাদন হচ্ছে, উৎপাদনে কোনো অভাব নেই। বোরো ধানও ভালো হয়েছে, হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ। সেভাবেই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দেশটা যেন সচল থাকে এবং এগিয়ে যেতে পারে।

 দেশে বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে নানারকম খেলা চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আলুর কোল্ড স্টোরেজে ডিম নিয়ে রাখা হচ্ছে। এরকম নানা ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে। এ সময় তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোয় দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এভাবে করতে পারলে আমাদের দেশে  খাবারের কোনো অভাব হবে না, আমরা বাইরেও পাঠাতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্জনগুলো ধরে রেখে আমাদের আরও সামনের দিকে এগোতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন এবং গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তিনি যে ফোরামেই যাচ্ছেন এর প্রতিবাদ করছেন এবং যুদ্ধ বন্ধের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। ‘আমাদের স্ট্যান্ডার্ডটা ঠিক থাকবে সবসময়। আমরা চাই না যে এ ধরনের ঘটনা ঘটুক। আমরা সবসময় সাধারণ ও নির্যাতিত মানুষের পাশে আছি। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সকলের সঙ্গে বন্ধত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এটা ধরে রেখেছি যার কোনো ব্যত্যয় ঘটছে না। এ সময় সম্প্রতি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে বাংলাদেশে শোক দিবস পালনের এবং মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ১০ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রচেষ্টার উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তথা সবকিছু মিলিয়ে একটা চাপ আছে অর্থনীতির ওপর। যা মোকাবিলায় সরকারের নানা পদক্ষেপেরও কথা উল্লেখ করেন তিনি।

পাঠকের মতামত

???

masud
২৫ মে ২০২৪, শনিবার, ২:১১ অপরাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status