দেশ বিদেশ
সরকারের নতজানু নীতির কারণে বিএসএফ আশকারা পাচ্ছে: রিজভী
স্টাফ রিপোর্টার
২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবারআওয়ামী লীগ সরকারের নতজানু নীতির কারণে বিএসএফ আশকারা পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিএসএফের নরহত্যার দায় দখলদার আওয়ামী সরকারের উপরেও বর্তায়। তাদের নতজানু নীতির কারণে বিএসএফ আশকারা পাচ্ছে। গত সোমবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে হাসান মিয়া নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছে। সীমান্তে রক্তের দাগ যেন শুকাচ্ছেই না। বাংলাদেশি মানুষের রক্তে সীমান্ত সবসময়ই ভেজা থাকছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ যেন নির্যাতন আর মৃত্যুর নির্মম খড়গ। তাদের মনে নিত্য জেগে রয়েছে কেবল হত্যার উল্লাস।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দখলদার আওয়ামী সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দিয়ে নিজস্ব সেনাদল গঠন করে নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত চালাচ্ছে সাঁড়াশি অভিযান। কিন্তু ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন দখলদার আওয়ামী সরকার বিএসএফের বর্গীর ভূমিকার বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দ করতে পারেনি। আমি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক সোমবার নিহত হাসান মিয়াসহ প্রতিনিয়ত বাংলাদেশি মানুষের নির্বিচারে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। সোমবার কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হাসান মিয়ার আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং তার পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়। প্রচলিত ফৌজদারি, দেওয়ানিসহ সকল আইন প্রধানমন্ত্রীর সংস্করণ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হয়। ৭ই জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পর বাংলাদেশের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে উঠেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দেশের বিরোধী দলের প্রধান নেতারাসহ লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর ওপর নেমে আসা জেল-জুলুম, অত্যাচার আর অবিচারের প্রকটতা দেখে বিশ্ব সম্প্রদায় বিচলিত হলেও তাতে প্রধানমন্ত্রীর কোনো যায় আসে না। তার সকল অপকর্মের দায় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্যই যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করা হয়েছে তা আজ দেশ-বিদেশে সর্বজনবিদিত। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টেও সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বাংলাদেশের গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, কারা নির্যাতনসহ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছেÑঅবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বর্তমান ডামি সরকারের ‘অভিন্ন হৃদয় বড় বন্ধু’ হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। মনে হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দিয়ে দিয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিএসএফ কর্তৃক বধ্যভূমি বানানো হলেও আওয়ামী নিপীড়ক সরকারকে নিশ্চুপ থাকতে হয়। হিউম্যান স্প্রিটশূন্য বিএসএফের রক্তপিপাসু ভূমিকায় সারা জাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উৎকণ্ঠিত।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল করেছে বিএনপি। মিছিলটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে বিজয় নগরে গিয়ে শেষ হয়। এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন রুহুল কবির রিজভী। এতে বিএনপি’র বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।