বিশ্বজমিন
অবশেষে স্বীকার করলেন নেতানিয়াহু, তবে বাঁকাভাবে
মানবজমিন ডেস্ক
(৯ মাস আগে) ৩ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:২১ অপরাহ্ন
ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) স্টাফদের হত্যার পর বিশ্বজুড়ে যখন তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, তখন স্বীকার করতে বাধ্য হলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে তিনি স্বীকার করলেন বাঁকা ভাষায়। বললেন, গাজায় ডব্লিউসিকে’র স্টাফদেরকে ইচ্ছে করে হত্যা করেনি তার বাহিনী। তার বাহিনী অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু কেন, কি পরিস্থিতিতে ‘অনিচ্ছাকৃত’ভাবে এই হামলা চালানো হলো তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। ওদিকে ফুটিজে দেখা গেছে, যে তিনটি গাড়িতে করে এসব স্টাফ যাচ্ছিলেন তাতে পরিষ্কারভাবে ইংরেজিতে লেখা আছে ‘ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন’।
এটি একটি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা। এটা জানার পরও কিভাবে অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের ওপর হামলা হয়েছে! এ প্রশ্ন বিশ্ববাসীর। অনিচ্ছাকৃত অর্থ কি? সেনারা অস্ত্র হাতে নিয়ে বসে ছিলেন, তাদের অজ্ঞাতে আপনাআপনি গুলি বা বোমা বেরিয়ে গেছে? নেতানিয়াহুকে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বনেতারা বার বার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি গণহত্যায় মেতে উঠেছেন। ভাবখানা এমন, তিনিই চালান বিশ্ব। কে কি বললো, তাতে তার কিছু এসে যায় না। কিন্তু আসে যায়। এখন ইসরাইলের ভিতরে যখন তার পদত্যাগ দাবি জোরালো হয়েছে, তাকে ব্যর্থ নেতা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে, আগাম নির্বাচন দাবি করা হচ্ছে, তখন তিনি বুঝতে পেরেছেন ডালমে কুচ কালা হ্যায়। অমনি মঙ্গলবার সরলবাক্য বলে দিলেন, গাজায় বিমান হামলায় ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে’ সাতজন ত্রাণকর্মীকে হত্যা করেছে তার বাহিনী। জেরুজালেমে হার্নিয়া অপারেশন শেষে হাসপাতাল ত্যাগ করার সময় তিনি বলেন, যুদ্ধ চলছে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করবো। সরকারগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। আর যাতে এ ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে আমরা সবকিছুই করবো।
উল্লেখ্য, সাইপ্রাস থেকে সমুদ্রপথে আসা খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে ডব্লিউবিকে’র কর্মীদের ওপর নৃশংস বোমা হামলা চালায় ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ৭ জন কর্মী নিহত হন। এর মধ্যে আছেন মার্কিনি, বৃটিশ, কানাডিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, ফিলিস্তিনি, পোলিশ নাগরিক। ৭ জন ত্রাণকর্মীকে হত্যার পর বিশ্ব সোচ্চার হলো, নিন্দায় মুখর হলো, আর তাতে হুঁশ ফিরল (!) নেতানিয়াহুর। তাহলে যে প্রায় ৩৩ হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছেন তিনি, তার জন্যও তো বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা, দেশ উদ্বেগ, নিন্দা, সমালোচনা করে চলেছে- তাতে কেন হুঁশ ফেরে না নেতানিয়াহুর? তাদেরকেও কি তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছেন! জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়েছে।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজে’তে তার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলমান। কিন্তু কোনো কিছুর কি তোয়াক্কা করছেন তিনি!
ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ডানিয়েল হাগারি এর আগে বলেছেন, তিনি ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা সেলিব্রেটি শেফ হোসে আঁন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট মেকানিজম এই হামলার তদন্ত করবে। তদন্ত রিপোর্ট স্বচ্ছতার সঙ্গে শেয়ার করা হবে। ইসরাইলের চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ হারজি হ্যালেভি ব্যক্তিগতভাবে মঙ্গলবার রাত থেকে তদন্ত পর্যালোচনা করার কথা। এখানে উল্লেখ্য, জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সি বার বার সতর্ক করেছে যে, গাজার উত্তরাঞ্চল দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত হচ্ছে। একে তারা মনুষ্যসৃষ্ট সংকট বলে আখ্যায়িত করেছে।
পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়েছে অথছ তাঁর চেয়ে অনেক বেশী অপরাধ করার পরও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের কোন অভযোগই দায়ের করে নাই আন্তর্জাতিক আদালত! এতেই বুঝা যায় ঘটনা কি ?