বিশ্বজমিন
কবে শেষ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ? জানালেন বিশেষজ্ঞরা
মানবজমিন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ২ জুলাই ২০২২, শনিবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৩০ পূর্বাহ্ন
হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নষ্ট হয়েছে। সামরিক ব্যয় আকাশ ছুঁয়েছে। শহরের পর শহর পরিণত হচ্ছে ধ্বংস স্তুপে। কিন্তু ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যেকার যুদ্ধ থামার কোনো নাম নেই।
চার মাস ধরে চলছে এ যুদ্ধ। সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টল্টেনবার্গ হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এই যুদ্ধ সহসাই থামছে না। এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত চলতে পারে এ যুদ্ধ। যদিও পশ্চিমা গোয়েন্দারা জানিয়েছে, আগামি কয়েক মাসের মধ্যেই রাশিয়ার সক্ষমতা হ্রাস পাবে। তবে রাশিয়া যুদ্ধে সফলতা পাচ্ছে। লুহানস্ক দখল প্রায় শেষ।
ন্যাটোর সাবেক লেফটেন্যান্ট-জেনারেল কন্সটানটিনোস লুকোপুলোস বলেন, কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হয়ে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনকে ঘিরে কৌশল সাজাচ্ছে। তারা এখন ধীরে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে এ অভিযান চালাচ্ছে। যখন এক পক্ষ যুদ্ধে এবং পরবর্তীতে আলোচনার টেবিলে এগিয়ে থাকে তখনই একটা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পথে থাকে। কখনো আবার দুই পক্ষই ব্যায়ের কথা ভেবে যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হয়। লুকোপুলোস মনে করেন, ব্যায়ের কথা ভেবেই দুই পক্ষ খুব তাড়াতাড়ি যুদ্ধ থামাবে। সেটা যদি না হয়, তাহলে রাতারাতি আর যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা নেই।
রাশিয়া ডনবাসে বড় সফলতা পাচ্ছে। যদিও এটা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির মেনে নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ এটি তাকে ইউক্রেনের ইতিহাসে এমন প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্থান দেবে, যিনি ইউক্রেনের বিশাল ভূখণ্ড হারিয়েছিলেন। এ নিয়ে এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্রাটেজি এন্ড সিকিউরিটি’ বিষয়ক প্রফেসর জেমি শিয়া বলেন, ইউক্রেন কোনোভাবেই এখন যুদ্ধ থামাতে পারবে না। কারণ তারা এরইমধ্যে রাশিয়ার কাছে দেশের পাঁচ ভাগের একভাগ হারিয়েছে। কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলো এখন রাশিয়ার অধীনে। ডনবাসের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা এবং বিশাল কৃষিভূমি রাশিয়া দখল করে নিয়েছে। এগুলো বাদ দিয়ে ইউক্রেন সামনের দিনগুলোতে ধুকতে থাকবে। তাই পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত থাকলে ইউক্রেন আরও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়। দেশটি বিশ্বাস করে, যথাযথ অস্ত্র পেলে তারা অনেক স্থানেই রুশদের হটিয়ে দিতে পারবে।
লুকোপুলোস যদিও বলছেন, যুদ্ধ দীর্ঘ হলে পশ্চিমাদের সামরিক সহায়তাও ক্ষীণ হয়ে আসতে পারে। কারণ পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে ভিন্ন অবস্থানে চলে যাচ্ছে। ফলে তাদের ঐক্য দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। পশ্চিমা অনেক দেশই এখন আলোচনার টেবিলে বসার প্রস্তাব দিচ্ছেন। জেমি শিয়ার মতে, এই যুদ্ধের এখন দুটি পরিনতি হতে পারে। প্রথমত, ইউক্রেন পশ্চিমা অস্ত্রের সাহায্য নিয়ে রাশিয়ার সেনাদের ইউক্রেন থেকে সরিয়ে দেবে। এরফলে পুতিন নিজ দেশে চাপের মধ্যে পড়বেন এবং সেখানে ক্ষমতার পরিবর্তনও আসতে পারে। তবে এটি যে বর্তমান বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব তাও উল্লেখ করেন এই গবেষক। তবে দ্বিতীয় যে পরিণতি হতে পারে তা হলো, যার দখলে যা আছে সেখানেই অবস্থান করে একটি অঘোষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া। রাশিয়া হয়তো তখন দখল করা স্থানগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে নেবে কিংবা তাদের জন্য নতুন স্ট্যাটাস সৃষ্টি করবে।
লুকোপুলোস বলছেন, এই যুদ্ধ বছরের পর বছর চলার সম্ভাবনা কম। রাশিয়া ও ইউক্রেন কারোরই বহুদিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। এখানে খুব সম্ভবত কোরিয়া যুদ্ধের মতো পরিণতি হতে যাচ্ছে। ১৯৫৩ সালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে যুদ্ধ থামিয়ে একটি সীমানা লাইন টেনে দিয়েছিল এবং একটি অস্ত্রমুক্ত এলাকা ঘোষণা করেছিল, ইউক্রেন-রাশিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হতে পারে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।