ঢাকা, ৭ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

ফের প্রাণঘাতী সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার
mzamin

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিন আহমেদ (১৩)। পরিবারের সঙ্গেই রাজধানীর মুগদা এলাকায় থাকতো। তার বাবা মাসুম মিয়া এক সময় ব্যবসা করলেও এখন বেকার। মা গৃহবধূ। অভাব অনটনের সংসারে তারা পাঁচজন সদস্য। মা-বাবা ছাড়া দুই ভাই ও এক বোন। বড় ভাই এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরিবারে অর্থের জোগান দিতে তেজগাঁওয়ের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। আর ছোট বোন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মেধাবী শিক্ষার্থী মাহিনকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল।

বিজ্ঞাপন
চঞ্চল প্রকৃতির হলেও সবাই তাকে আদর করতেন। সবার মধ্যমণি ছিল মাহিন। বড় ছেলেকে বেশি লেখাপড়া করাতে পারেননি। তাই মাহিনকে উচ্চ শিক্ষিত করবেন এটাই ছিল পরিবারের স্বপ্ন। বড় হয়ে মাহিন পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু মাহিনের পরিবারের সব স্বপ্ন এখন উবে গেছে। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মাহিন এখন না ফেরার দেশে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বেপরোয়া ময়লার গাড়ি যেন মুহূর্তের ভেতরে একটি পরিবারের সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। ময়লার গাড়ির চালকের আসনে যে ছিল তার কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। সে চালকের সহকারী ছিল। ঘটনার পরপরই ওই হেলপার ও ঘাতক গাড়িকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে মুগদা থানায় মামলা করেছেন। মাহিনের পরিবারে এখন শোকের মাতম চলছে। পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝেও শোকের ছায়া। গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ময়লার গাড়ি মাহিনকে ধাক্কা দেয়। তাকে উদ্ধার করে নেয়া হয় মুগদা হাসপাতালে। সেখানে তার অবস্থার উন্নতি না হওয়াতে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

মাহিনের ফুপাতো ভাবী আইরিন আক্তার বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তার মায়ের সঙ্গে ইফতার করেছে মাহিন। ইফতার করে মাকে বলেছে সে খেলাধুলা করে চাচার বাসায় গিয়ে রাতে থাকবে। এই কথা শুনে মা তাকে প্রথমে বাধা দিয়ে চাচার বাসায় না যেতে বলেন। কিন্তু মাহিনের বায়না মা ফেলতে পারেননি। তখন মা তাকে বলেন কিছু সময় খেলাধুলা করে চাচার বাসায় যেন চলে যায়। মায়ের এই কথা শুনে বাসা থেকে বের হয়ে যায় মাহিন। পরে রাতে মুগদা হাসপাতাল থেকে তার মায়ের মোবাইলে ফোন করে এক চিকিৎসক বলেন, আপনার ছেলে গুরুতর আহত এখুনি হাসপাতালে আসতে হবে। তখন তার মা-বাবাসহ অন্যরা হাসপাতালে যান। ততক্ষণে মাহিনকে এম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) উদ্দেশ্যে নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। পরে ঢামেকেই তার মৃত্যু হয়। পানি খেতে চেয়েছিল তার মায়ের কাছে। কিন্তু পানি খাওয়ানোর আগেই চলে যায় না ফেরার দেশে। তিনি বলেন, মুগদা হাসপাতালে যাওয়ার পরও মাহিনের সব কথা মনে ছিল। পথচারীরা তাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল। পরে চিকিৎসকরা তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন তার বাড়ির কারও মোবাইল নম্বর বলতে পারবে কিনা। তখন মাহিন তার মায়ের মোবাইল নম্বর দিয়েছে। তার নাম, বয়সও বলেছে। 

তার ফুপাতো ভাই শাকিল বলেন, সিটি করপোরেশনের যে গাড়িতে মাহিনকে ধাক্কা দিয়েছে ওই গাড়ির চালকের আসনে ছিল হেলপার রুবেল। সে নেশাগ্রস্ত ছিল। নেশার ঘুরে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল। মাহিনের বাবা বাদী হয়ে মুগদা থানায় মামলা করেছেন। আসামিকে ঘটনার সময়ই আটক করেছে পুলিশ। মাহিনের মা জোছনা আক্তার বলেন, আমাকে বলেছে খেলাধুলা করে চাচার বাসায় গিয়ে রাতে থেকে সকালে বাসায় ফিরবে। আমি মানা করেছিলাম। কিন্তু তবুও গেল। আর ফিরলো না। তিনি বলেন, ময়লার গাড়ি বেপরোয়াভাবে চালাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, যে চালাচ্ছিল সে নেশাগ্রস্ত ছিল। 

মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুজ্জামান বলেন, মাহিন রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় সিটি করপোরেশনের গাড়িটি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতরভাবে আহত হয় মাহিন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই আমরা ঘাতক গাড়ি ও চালককে আটক করেছি। চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি সে আসলে হেলপার। নিহতের বাবা যে মামলা করেছেন ওই মামলায় আসামি হিসেবে তার নাম উল্লেখ করেছেন। আমরা তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠাবো। আর ঢামেকে মাহিনের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status