দেশ বিদেশ
মাদক-কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ‘অলআউট অ্যাকশন’: র্যাব ডিজি
স্টাফ রিপোর্টার
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বুধবারমাদক ও কিশোর গ্যাং-এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন। বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ হচ্ছে মাদকের একটি ট্রানজিট রোড। এর থেকে যদি বাঁচতে হয় তবে আমাদের সম্মিলিতভাবে মাদকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া মাদক-কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ‘অল আউট অ্যাকশন’-এ যাবে র্যাব। গতকাল দুপুরে জাতীয় শহীদ মিনারে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের নিরাপত্তা সংক্রান্ত মতবিনিময় শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এম খুরশীদ হোসেন বলেন, আমাদের মূল কাজ হচ্ছে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। সমাজ ব্যবস্থা যেন সুন্দরভাবে পরিচালনা হতে পারে, সমাজের মানুষ যেন কোনো প্রকার হুমকির মধ্যে না থাকেন সেটি নিশ্চিত করা। আপনারা জানেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে এই কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার খুব বেড়ে গিয়েছিল, যেখানে র্যাব অভিযান পরিচালনা করে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের কেউ না কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা আছেন। আমরা চেষ্টা করছি কিশোর গ্যাং সমূলে কীভাবে বিনাশ করা যায়, পাশাপাশি যারা এদের পরিচালনা করছে আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় আনবো। মাদকের বিষয়ে কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিটিং হয়েছে। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সকল বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
মাদকের বিষয়টি এমন হয়েছে যে, শুধু পুলিশ-র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দিয়ে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো মাদক নিয়ন্ত্রণে অনেক বেআইনি পদক্ষেপও নিয়েছে। কিন্তু আমরা সেই পথে যাচ্ছি না, আইনের মধ্যে থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। তিনি বলেন, দেশে যখন জঙ্গি উত্থান হয়েছিল, আমরা তখন দলমত নির্বিশেষে সামাজিকভাবে এর মোকাবিলা করলাম তখন কিন্তু জঙ্গি নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। সেভাবে মাদকও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এক সময় বাংলাদেশে মাদক আসতো স্থলপথে। তখন বেশি প্রচলন ছিল ফেনসিডিল ও হেরোইনের। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে যখন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হলো তারপরে কিন্তু বাংলাদেশে ফেনসিডিল আসা বন্ধ হয়েছে। কারণ তখন ভারতের বর্ডার এলাকাগুলোতে ফেনসিডিলের কারখানা ছিল। এরপরেই বাংলাদেশে ফেনসিডিলের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। স্থলপথে রাজশাহীর চারঘাট, বাগমারা এলাকা দিয়ে গোদাগাড়ীর ওদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর ও কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গা দিয়ে মাদকগুলো আসতো। এখন শুধুমাত্র ফেনসিডিল নয় অনেক বিপজ্জনক মাদক বাংলাদেশে আসছে বিভিন্ন স্থলপথ-বর্ডার এলাকা এবং জলপথ ও আকাশপথেও আসছে।
ডিজি বলেন, আমরা যদি জাপানের দিকে দেখি, সেখানে শিশুদের প্রথম দুই বছর কোনো পাঠ্য বইয়ের শিক্ষা পড়ানো হয় না। তাদেরকে সেখানে শিখানো হয় আচার-আচরণ। দুই বছর পর তাদের পাঠ্য বইয়ে পড়াগুলোকে শেখানো হয়। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে মাদকের কুফল কিশোর গ্যাংয়ের কুফল নিয়ে আলোচনা করা হয়, বা ক্লাস নেয়া হয় তাহলে যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যাবে। অতীতেও আমি এ বিষয়গুলো দেখেছি। তাই সর্বোপরি সবাই সব জায়গা থেকে মাদক এবং কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ সময় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের লেখা ‘মাদকের সাতসতেরো: বাংলাদেশের বাস্তবতা ও সমাধানসূত্র’ এবং কিশোর গ্যাং: ‘কীভাবে এলো, কীভাবে রুখবো’ শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন র্যাব ডিজি। কিশোর গ্যাং ও মাদক প্রতিরোধের বিষয়ে লেখা দুটি নিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি এ ধরনের বই কিশোরদের কাছে পৌঁছে দেয়া যেতে পারে।
পাঠ্য বইয়ে মাদকের কুফল, কিশোর গ্যাংয়ের কুফলের বিষয়গুলো তুলে ধরা হলে অপরাধ কমে যাবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে র্যাব ডিজি বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো ধরনের হুমকি নেই। তবে আমরা সার্বক্ষণিক যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ও যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে ঢাকাসহ সারা দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে র্যাবের সাদা পোশাকধারী সদস্যরা গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রয়োজনীয় সুইপিং করবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের স্পেশাল ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। র্যাবের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হবে। তিনি বলেন, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ইভটিজিং প্রতিরোধে সতর্ক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভার্চ্যুয়াল জগতে উস্কানিমূলক ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো রোধে র্যাবের সাইবার ইউনিট অনলাইনে নজরদারি অব্যাহত রাখবে। র্যাব সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে সারা দেশের ব্যাটালিয়নগুলোতে মনিটরিং করা হবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সাতটি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। যা ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কাজ করবে। নিরাপত্তার বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে র্যাবের।