ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঈদ আনন্দ ২০২৩

ক্রিকেট মাঠের ‘কাজল মায়া’

ইশতিয়াক পারভেজ

(১ বছর আগে) ২৬ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার, ৬:২৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৮:৪২ অপরাহ্ন

mzamin

ফ্যাশন বলতে আমি ছোট থেকেই মনে করতাম যেটা আমার গায়ে ভালো লাগে সেটাতেই আমি সুন্দর। বড় কথা হলো ফ্যাশনের ড্রেস পরলেই হবে না। আমাকে যেটা মানাবে সেটাই আমি পরবো- এটাই কাজ করেছে আমার মধ্যে। এই ক্ষেত্রে আমার অন্যতম বন্ধু আয় না

 

‘জাহানারার যুদ্ধ-সাজ।’ কিছুদিন আগে একটি ছবি পোস্ট করেছে টুইটার। বাংলাদেশের জার্সি পরে আইলাইনারে টানা জাহানারা আলমের ভ্রমরকালো চোখের ছবি। ২৬ বছর বয়সী এই পেসারকে নিয়ে ক্যাপশনে তারা লিখেছে, কেউ বলতে পারবেন, সে কোন আইলাইনার ব্যবহার করে! যা ঘামকে কাঁচকলা দেখায়?’ বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা জাহানারাকে এভাবে দেখতেই অভ্যস্ত। টানা টানা চোখে গাঢ় করে কাজল মেখে মাঠে নামেন টাইগ্রেস এই নারী ক্রিকেটার। যতটা না তিনি ক্রিকেটার তার চেয়ে বেশি মাঠের ফ্যাশন আইকন। হ্যাঁ, তাকে ক্রিকেট মাঠের কাজল মায়া বললেও ভুল হবে না। যে মায়াতে তিনি বাংলাদেশই নয়, বিশে^র যে কোনো মাঠে খেলুককিনা হয়ে ওঠেন ভক্তদের ক্রাস! ক্রিকেট মাঠে তপ্ত গরম, রোদ কিংবা বৃষ্টি জাহানারা যে একই রকম।

বিজ্ঞাপন
জানিয়ে দিলেন তার সেই মায়াবতি থাকার রহস্যটাও। ‘আমি কিন্তু নিজে খুব সুন্দর না। কিন্তু আমি নিজেকে খুব ভালোবাসি আর এই কারণেই মাঠে ঘাম ঝরানো ক্রিকেট খেলেও নিজেকে অনেক অনেক সময় দেই। যাতে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে পারি। শুধু অন্যের চোখেই না, নিজের কাছে নিজেকে ভালো লাগাটাও অনেক বড় বিষয়।’ 

প্রশ্ন হচ্ছে- জাহানারা কি ছোটবেলা থেকেই এমন! নিজেই জানালেন না না- খুব ছোটবেলা থেকে আমি পোশাক ও ফ্যাশন সচেতন তা কিন্তু নই। যখন থেকে নিজের প্রতি ভালোবাসা বেড়েছে তখন থেকেই। এজন্য যে আমি খুব ব্র্যান্ডের জিনিস পরি তাও কিন্তু না। ফ্যাশন বলতে আমি ছোট থেকেই মনে করতাম যেটা আমার গায়ে ভালো লাগে সেটাতেই আমি সুন্দর। বড় কথা হলো ফ্যাশনের ড্রেস পরলেই হবে না। আমাকে যেটা মানাবে সেটাই আমি পরবো- এটাই কাজ করেছে আমার মধ্যে। এই ক্ষেত্রে আমার অন্যতম বন্ধু আয় না। যদি সেখানে দেখে মনে হয় ভালো লাগছে তবেই পরি সেই ড্রেসটা। 

 

যে ভাবে আলদা আমি
দেখেন ক্রিকেট খেললে কি পরিমাণ ব্যস্ত থাকতে হয় সেটি সবার জানা। কঠোর ট্রেনিং, মাঠে চড়া রোদে অনুশীলন। দ্রুত তৈরি হয়ে মাঠে নামা এই সব করে আসলে সাজা খুবই কঠিন বিষয়। তবে এই সবক্ষেত্রে আমি অন্যদের চেয়ে একটু আলদা। ক্রিকেটের পরে যতটা সময় পাই আমি নিজেকে দেয়ার চেষ্টা করি। কারণ আমার মনে হয়েছে আমার নিজের কাছে নিজের একটা ভালো লাগার বিষয় আছে। আর আমিতো নিজেকে পাবলিক ফিগার হিসেবে দাবি করতে পারি না। বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের প্রতিনিধি। তাই নিজের মধ্যে যদি নারী বিষয়টা না থাকে তাহলে কীভাবে হয়। তাই যতটা সময় পাই আমি আমার ফ্যাশন সাজ এই সব নিয়ে সময় কাটাতে পছন্দ করি। খুব ভালো লাগে আমার অন্যদের  চেয়ে আলাদা থাকতে। একটা উদাহরণ দিতে পারি আমার সঙ্গে যারা নারী ক্রিকেটার আছে তারা মাঠে খেলতে বা অনুশীলনে যেতে খুব বেশি সময় নেয় না। তারা ঘুম থেকে উঠে ১০ থেকে ১০ মিনিট সময় নেয়। এর মধ্যে তারা নিজেদের ফ্রেস করে রেডি হয়ে মাঠে যায়। কিন্তু আমার বিষয়টা ভিন্ন। আমার অনুশীলন থাক আর খেলা আমি ঘুম থেকে উঠে বা সেখানে যার আগে এক ঘণ্টা সময় হাতে রাখি। ফ্রেস হই, এরপর নিজেকে সাজাই তারপর বাইরে যাই। আমার মনে এই বিষয়টাও অন্যদের চেয়ে আমাকে আলদা করে। 

আমার যা প্রিয় আর অপ্রিয়
আমার প্রিয় পোশাক শাড়ি। আমি এই পোশাকটাকে দারুণ ভালোবাসি। শাড়ি পরতে আমার দারুণ ভালো লাগে। এছাড়াও উপহার পেতে ভালো লাগে। বিশেষ করে ঈদে। তবে উপহার যদি কোনো অপরিচিত কেউ দেয় সেটি ভালো লাগে না। আমি চাই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ যে সে আমাকে উপহার দিক। আমার আরেকটা প্রিয় বিষয় হলো- রান্না করা। বিশেষ করে ঈদে আমি আম্মুকে রান্নাতে হেল্প করি। আমার উপর দায়িত্ব থাকে কিছু আইটেম রান্না করার। বলতে পারেন সাজগোজের পাশাপাশি রান্নাটাও আমার বড় একটা শখের জায়গা। মাঝে মাঝে দেখবেন আমি কিন্তু আমার ঢাকার বাসায় টেবিলে অনেক রান্না করে তা সাজিয়ে ছবি পোস্ট করি। এছাড়াও ঘুরতে পছন্দ করি। আর সেটি ঈদের দিন হলেতো কথাই নেই। জানেন আমার কাছে ঈদ মানে এখনো সুন্দর পোশাক পরা, আত্মীয়দের বাসায় বেড়াতে যাওয়া। আর সালামি পেতেতো ভালোই লাগে এখনো। তবে বড় হয়েছি এখন সালামিতো দিতেই হয়। 

 

কেউ সুন্দর বললেই ভালো লাগে
কেউ যদি আমাকে সুন্দর বলে আমার অসম্ভব ভালো লাগে।  দেখুন আমি একজন মেয়ে হিসেবে কতটুকু সুন্দর আমি জানি না। তবে আমি নিজেকে ফিট ও সুন্দর রাখার চেষ্টা করি। ক্রিকেট খেলার জন্য আমাকে অনেক কিছু বাদ দিতে হয়। তবে আমি এর মাঝেও মেইনটেন করি ফিটনেসটা ধরে রাখি যেন আমার  বোলিং-ব্যাটিং করতে কষ্ট না হয়। ফিট থাকার পাশাপাশি আমি আমার ত্বকের প্রতি দারুণ যত্নশীল। আমার চুলের জন্যও আমি অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় করি। আর সুন্দর থাকার পর যখন এত কষ্ট করি তখন কেউ যদি সুন্দর বলে তখন সত্যি আমার অনেক অনেক ভালো লাগে। 

যা পেলে ভালো লাগে
ক্রিকেটার হিসেবে ব্যাট-বল উপহার হিসেবে পেলে কার না ভালো লাগে! যদি আমি এখনো এমন কোনো উপহার পাইনি। আমার এখন ব্যাটে স্পন্সর এসেছে ওরাই আমাকে ব্যাট দেয়। আর ব্যাট-বল নাকি মেকআপ- কোনটা পেলে খুশি হবে সেটি বললে বলা খুবই মুশকিল। এটা সত্যি আমার বাবা-মাও কখনো মেকআপ কিনে দেননি। তবে আমার নানু যতদিন বেঁচে ছিলেন তার কাছে আবদার করতাম লিপিস্টিক সহ নানা মেকআপ কিনে দিতেন। আমার খুবই ভালো লাগতো যখন তিনি আমাকে এগুলো দিতেন। তিনি ২০০৯-এ মারা যান। এরপর অবশ্য আমি নিজেই রোজগার করতে শুরু করি। এখনতো আমার মেকআপ কিনতে কোন মমস্যা হয় না। তবে ব্যাট-বল বা মেকআপ বা অন্য কোনাে উপহারের চেয়ে কেউ যদি আমাকে দোয়া করে সেটি আমার খুবই ভালো লাগে। 

কাজল আমার নারীর প্রতীক
আমার চোখে কাজল দিতে অনেক আগে থেকেই ভালো লাগে। ২০০৮ এর দিকের কথা আমি হালকা হালকা কাজল দিতাম। তবে ২০১৩ থেকে আমি গাঢ় করে কাজল দিতে শুরু করি। ২০১৭’র দিকে আন্তর্জতিকভাবে আমার চোখে কাজ নিয়ে খুব আলোচনা হয়। দারুণ দারুণ মন্তব্য পেতে শুরু করি। আমার খুব ভালো লাগে। সত্যি কথা বলতে কি এখন আমার মুখ না দেখেও আমাকে আমার ভক্তরা বা ক্রিকেট যারা ভালোবাসে তারা চিনতে পারে। আমার চোখ দেখেই বলে দিতে পারে এটা জাহানারা। আরেকটা বিষয় হলো- আমি যতই ক্রিকেট খেলি আমি কিন্তু একজন মেয়ে। যখন চোখে কাজল দিয়ে মাঠে ক্রিকেট খেলে এই কাজলই আমার নারীত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে। 

 

 

ঈদ আনন্দ ২০২৩ থেকে আরও পড়ুন

   

ঈদ আনন্দ ২০২৩ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status