ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঈদ আনন্দ ২০২৩

কূটনীতিকদের অন্য জীবন

তারিক চয়ন

(১ বছর আগে) ২৩ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

mzamin

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তিন বছরেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার ঠিক আগে সেটিই ছিল রাষ্ট্রদূতের দেয়া একমাত্র সাক্ষাৎকার যা দৈনিক মানবজমিনে দুই পর্বে ছাপা হয়েছিল। কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রদূত মিলারের জন্য সময়টা ছিল খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। কেননা, সাক্ষাৎকার গ্রহণের ঠিক আগের মাসে (২০২১ সালের ডিসেম্বর) মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর ৭ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে মিলারের বিদায়ী সাক্ষাৎ হলেও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি বিদায়ী সাক্ষাৎ পাননি। এর কারণ হিসেবে ‘করোনা পরিস্থিতি’কে দায়ী করা হলেও বাজারে নানা ধরনের কথা শোনা যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রদূতের বাসায় সাক্ষাৎকারের ফটোসেশন শেষে তিনি আমার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয়ে বেশ খোলামেলাভাবে আলোচনা করেন। বাংলাদেশে এত গণমাধ্যম এবং এত সাংবাদিক থাকতে কেন তিনি তার বিদায়ী সাক্ষাৎকারটি আমাকেই দিলেন তার কারণ জানালেন। আমার কন্যার খোঁজখবর নিলেন, নিজের সন্তানের বিষয়ে গল্প করলেন, আমাকে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের পতাকা খচিত কোটপিন উপহার দিয়ে নিজ হাতে তা পরিয়ে দিলেন। রাষ্ট্রদূত মিলারের সঙ্গে তার আগেও আমার বেশ কয়েকবার আলাপ হলেও ওইদিন তাকে অনেকটা ব্যতিক্রম মনে হচ্ছিল।

বিজ্ঞাপন
আবেগতাড়িত রাষ্ট্রদূত এক পর্যায়ে বললেন, ‘জানো তারিক, আমরা কূটনীতিকরা সারাদিন এত ব্যস্ত সময় কাটাই! এত এত কর্মসূচি থাকে! কিন্তু আমরাও তো মানুষ। আমাদেরও সাধারণ মানুষের মতো করে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে।’

বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে নিজ দায়িত্ব পালনকালে মিলার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি, দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে। শুধু মিলারই নন, নিকট অতীতে বাংলাদেশে দায়িত্বরত প্রায় সকল মার্কিন কূটনীতিককেই দেখেছি দেশের দূর-দূরান্তে ঘুরে বেড়াতে, স্থানীয় খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে, এদেশের সংস্কৃতিকে ধারণ করতে। ২০১১ সালের নভেম্বরে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে দেশের ৬৪ জেলা সফরের আগ্রহ ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন ড্যান ডাব্লিউ মজিনা। এমন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা একজন বিদেশি কূটনীতিকের পক্ষে অসম্ভব- অনেকেই তখন এমনটি মনে করলেও ঠিকই সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন মজিনা। তিন বছরেরও কম সময়ে তিনি ৬৪ জেলা সফর শেষ করেন! ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফেনীর মাটিতে পা রাখার মধ্যদিয়ে ৬৪ জেলা সফর পূর্ণ করা মজিনা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করছে এবং দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে সমান অবদান রাখছে। 

এত গেল সাবেক রাষ্ট্রদূতদের কথা। বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদূতও কম যান না! যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে বড় হয়েছেন পিটার হাস। বলা চলে, বাংলাদেশের মতোই এক সমতল ভূমি ওই জায়গাটা। চারপাশে ছিল শুধু সয়াবিন আর ভুট্টা ক্ষেত আর বাকি সব জায়গা ছিল একেবারেই সমতল। তাই, খুব স্বাভাবিকভাবেই তিনি পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। তবে, তার সে ঘুরে বেড়ানো কিছুটা অন্যরকম। বাংলাদেশে আসার কিছুদিন পর তিনি বলেছিলেন, ‘আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসগুলোর একটি হলো পর্বতারোহণ আর বাইরে প্রকৃতির মধ্যে ডুবে থাকা, ধীরে ধীরে এগুনো, চিন্তা করা আর নিজের চারপাশে কী ঘটছে সেটা দেখা। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি পথে ঘুরে বেড়াতে উন্মুখ হয়ে আছি। যেই কথা সেই কাজ, কিছুদিন আগে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান বলতে গেলে চষে বেড়িয়েছেন রাষ্ট্রদূত হাস। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন। জিভে জল আনা সব স্থানীয় সুস্বাদু খাবারের আস্বাদ গ্রহণ করেছেন। এসবের বাইরে বাংলাদেশের ফুচকা আর দইয়ের স্বাদেও মজেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাস। ফুচকা ভালো লাগার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি মুচকি হেসে বলেন, ‘এই ফুচকা জিনিসটা পুরোপুরি মুখে পুরে ফেলা যায়, তারপর মুখের ভেতর কুড়মুড়িয়ে ফেটে যায়। আর, মিষ্টি দই খেতে ভালো লাগে। কারণ দইয়ের মধ্যে মিষ্টি ও টকের মিশেল রয়েছে।’ 

 

বাংলাদেশের শিঙ্গাড়া এবং বিরিয়ানি খেতেও ভালোবাসেন পিটার হাস। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেও পছন্দ করেন। তাকে নাকি এটা বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে ঘুরে না বেড়ালে আপনি বাংলাদেশকে চিনতে পারবেন না। গত এক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে পিটার হাসের মনে হয়েছে, বাংলাদেশিরা দুটো জিনিস খুব পছন্দ করে: স্ন্যাকস এবং স্ন্যাপস, অর্থাৎ খেতে আর ছবি তুলতে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে কমপক্ষে একজন তার সঙ্গে সেলফি নেন নি। 

 

ওদিকে, বাংলাদেশের স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি স্থানীয় পোশাকেও দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রদূত হাসকে। এবারের রমজানে বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে তাকে বাংলাদেশের চিরাচরিত পায়জামা-পাঞ্জাবি পরতে দেখা গেছে। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে তাকে বেগুনি ভাজা শিখতে এবং ভাজতেও দেখা গেছে।
সে যাই হোক। বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্বে বাণিজ্য ও ভূ-রাজনীতির পাশাপাশি মানুষে মানুষে সম্পর্ককে দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয়ে থাকে। কানাডার কি কানাডা এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়েছিল ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসকে। জবাবে, ১৫ মাস আগে ঢাকায় পা রাখা হাইকমিশনার লিলি বলেন, ‘আমাদের সরকার এবং জনগণের মধ্যে ইতিমধ্যেই অনেক ধরনের যোগাযোগ রয়েছে। এটাই আমাদের বন্ধুত্বের ঐশ্বর্য। বাংলাদেশে কানাডিয়ান কূটনৈতিক মিশন হিসেবে আমরা এই সংযোগগুলোকে সত্যিকার অর্থেই মূল্যায়ন করি। উদাহরণস্বরূপ আমার কথা যদি বলি, আমি বাংলা নাচের পাঠ নিচ্ছি। আমরা কানাডিয়ান হাইকমিশনে নাচের ক্লাস করছি। আমাদের জন্য এটি বাংলা নাচ শেখার, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার, একে অপরকে জানার এবং সংযোগের উপায়গুলো অনুসন্ধান করার একটি উপায়।’ পিটার হাসের মতো লিলিকেও বাংলাদেশের স্থানীয় পোশাকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে দেখা গেছে। বাংলাদেশি স্টাইলে বেশ নিয়মিতভাবেই তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সালোয়ার কামিজ এবং শাড়িতে আবিষ্কার করা যায়। কিছুদিন আগেও তাকে লাল ব্লাউজের সঙ্গে নীল শাড়ি পরে হাইকমিশনের এক সাবেক সহকর্মীর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে সাভারে গিয়ে নাচে-গানে মেতে থাকতে দেখা গেছে। বাংলাদেশি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ নিতেও ভুলছেন না কানাডার হাইকমিশনার। গত বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকার মাটিতে পা রাখার পরই তাকে মিষ্টিমুখ করানো হয়েছিল। সে ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে হাইকমিশনার লিলি লিখেছিলেন, ঢাকায় এসে খুব ভালো লাগছে। খুব ভালো লাগছে একারণেও যে, বাংলাদেশের সুস্বাদু মিষ্টি দিয়ে আমাকে বরণ করা হয়েছে।

বৃটিশ হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর টম বার্জ ঢাকায় নিজের ব্যস্ত সব কর্মসূচির ফাঁকে অবসরে গিটার বাজাতে পছন্দ করেন। সেই ১৬ বছর বয়সে তার গিটার বাজানো শুরু। এখন তিনি ঢাকার গুলশান ৩ ব্যান্ডের একজন সদস্য। মগবাজার, গুলশান এবং বারিধারায় নিজ দলের সঙ্গে নিয়মিত মিউজিক চর্চা করেন টম। এত ব্যস্ততার মাঝে কীভাবে সময় বের করেন জানতে চাইলে টম বার্জ হেসে বলেন, ‘সময় বের করে নিতে হয়। গিটার বাজালে মন ফুরফুরে হয়। তাছাড়া, গৎবাঁধা রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা থেকেও একটু ফুরসত পাই।’
টম বার্জের মতোই ঢাকায় গান-বাজনায় মেতে থাকতে পছন্দ করেন আরও অনেক বিদেশি কূটনীতিক। অনেকে বাংলা ভাষা শেখার পাশাপাশি বাংলা গানও শিখে থাকেন। তবে, এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লিখতে হয় ঢাকা থেকে সদ্য বিদায়ী জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির নাম। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে হোটেল লা মেরিডিয়ানে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (বিডা) আয়োজিত এক সম্মেলনে  রাষ্ট্রদূতের মুখ থেকে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’-এর মতো কঠিন উচ্চারণের রবীন্দ্র সংগীত শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম। রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি তার আগ্রহের কথা ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘আমি প্রতিরাতেই রবীন্দ্রসংগীত শুনি। যদিও কিছু কিছু অর্থ বুঝি না, তবুও রবীন্দ্রসংগীত আমাকে টানে। রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে জাপানের ফোক গানের কি যেন একটা মিল আছে। আমি যেটা পছন্দ করি। আর দূতাবাসের কাজ খুব একঘেয়ে, সেখানে রবীন্দ্রসংগীতই আমাকে একটু শান্তি দেয়।’ বিডা’র অনুষ্ঠানের বছরখানেক পর গুলশানে হোটেল খাজানাতে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক-অ্যাবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ আয়োজনেও রাষ্ট্রদূতের কণ্ঠে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানটি শুনতে পাই। 

সেদিনের অনুষ্ঠানে বাঙালি সংস্কৃতির প্রশংসাও করেছিলেন তিনি। কেবল রবীন্দ্র সংগীতই নয়, অন্যান্য বাংলা সংগীতও যে তাকে টানে তার প্রমাণও আছে। দেশের প্রেক্ষাগৃহে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তি পেয়েছিল ‘হাওয়া’ নামের একটি সিনেমা। ওই সিনেমার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ শিরোনামের গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। নিজের বিদায় উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গায়িকা-অভিনেত্রী শাহতাজ মনিরা হাশেমের সঙ্গে ‘তুমি বন্ধু কালা পাখি, আমি যেন কি? বসন্তকালে তোমায় বলতে পারিনি। সাদা সাদা কালা কালা। রং জমেছে সাদা কালা।’- গেয়ে উপস্থিত অতিথিদের চমকে দিয়েছিলেন ইতো নাওকি। রাষ্ট্রদূতের কণ্ঠে বাংলায় গান শুনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন উপস্থিত অতিথিরা। তাছাড়া, গানটির ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঢাকাস্থ জাপানি দূতাবাসের ভেরিফাইড পেইজ (৯ই ডিসেম্বর) থেকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই ভিডিওতে ‘লাইক’ করেছেন। অন্যদিকে, ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৬১ লাখ বারেরও বেশি। বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিলেও জাপানের রাষ্ট্রদূত ওই গানটির কথা ভুলে যান নি। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে গানটির ভিউ যে ‘৬০ লাখ’ হয়েছে সেটি তিনি নিজেই তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে সবাইকে জানিয়ে দেন।

ঢাকার অনেক বিদেশি দূতাবাসের কূটনীতিকরাই বিকালে কিংবা ছুটির দিনে ফুটবল, টেবিল টেনিস, লন টেনিস ইত্যাদি খেলে থাকেন। কেউ কেউ বাংলাদেশে এসে ক্রিকেটেরও প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু, ঢাকায় এসে কেউ গলফ খেলার প্রেমে পড়ে যাবেন এমনটা নিশ্চয়ই আমাদের ভাবনার বাইরে! কিন্তু, ঠিক তাই হয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউনের সঙ্গে। বাংলাদেশে সময়-সুযোগ মিলে গেলেই গলফ খেলতে নেমে পড়েন তিনি। এ বিষয়ে একান্ত আলাপচারিতা তিনি শুরু করেন গলফের সঙ্গে নিজের প্রথম সম্পৃক্ত হওয়ার স্মৃতিচারণ করে। ৩২ বছর আগে যখন তিনি নিজের কূটনৈতিক কর্মজীবন শুরু করেন, তখন কোরিয়ান কূটনৈতিক সম্প্রদায়ে মনে করা হতো যে একজন সফল কূটনীতিক হতে হলে গলফ খেলতে পারা উচিত। তাই, ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে প্রথম বিদেশে দায়িত্ব পালনের জন্য হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে গেলে তিনি সেখানে গলফ শিখতে শুরু করেন। ওই সময়, দূতাবাসের এক সহকর্মীর কাছ থেকেই তিনি গলফের মৌলিক বিষয়গুলো শিখে নিয়েছিলেন। কিন্তু, বাংলাদেশ তো গলফ-এর জন্য বিখ্যাত কোনো স্থান নয়? এর জবাবে রাষ্ট্রদূত স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশে আসার আগে তিনি আশা করেন নি যে এদেশে মোটামুটি ভালোই গলফ খেলার পরিবেশ রয়েছে। অর্থাৎ এখানে মোটামুটি ভালো গলফ কোর্স (খেলার জায়গা) রয়েছে। তিনি বলেন, ‘গলফপ্রেমীদের জন্য বাংলাদেশ হতে পারে গুপ্তধন থাকার মতো একটা জায়গা। আমি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পাঁচটি গলফ কোর্সে গিয়েছি। সেগুলো হলো- কেজিসি (কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব), এজিসি (আর্মি গলফ ক্লাব), সাভার গলফ ক্লাব, চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব এবং চট্টগ্রামের কেইপিজেড। আর সবগুলোই ছিল আমার প্রত্যাশার চাইতেও বেশি কিছু। বিচিত্র সব দৃষ্টিনন্দন স্থানে মনোরম গলফ কোর্স দেখে দর্শনার্থীরা এগুলোর প্রশংসা করবেন।’ অনেক আগেই কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের সদস্য হয়েছেন বলেও রাষ্ট্রদূত লি নিশ্চিত করেন। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম গলফ-এর কোন দিকটা তিনি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন? ‘গলফের সৌন্দর্য হলো এটা প্রকৃতিতে খেলা হয় এবং প্রকৃতির সঙ্গেই খেলা হয়। বলতে গেলে গলফ হলো একমাত্র খেলা যা আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে উপভোগ করতে পারি। এটি সামাজিক উপাদানে ভরপুর এক খেলা এবং সেই সঙ্গে বিনোদনও। আমরা কেবল খেলাটাই উপভোগ করি না, এর মাধ্যমে আমাদের বন্ধু এবং সহকর্মীদের সঙ্গে মিশতেও পারি। আমরা গলফের মাধ্যমে জীবনকে চিনতে শিখি। জীবনকে শেখার জন্য গলফ একটা ক্লাসরুম।’
শুধু কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতই নন, ঢাকায় নিযুক্ত অনেক বিদেশি কূটনীতিকই অবসরে খেলাধুলায় মেতে ওঠেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে আমেরিকান ক্লাবে প্রায়ই ‘পিকল বল’ খেলতে দেখা যায়। 

 

কসোভোর রাষ্ট্রদূত গুনের উরেয়া নিজ দেশে ফুটবল এবং টেবিল টেনিস খেললেও ঢাকায় তিনি মাঝেমধ্যে টেবিল টেনিস খেলে থাকেন। সদ্য সাবেক বৃটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেল ফুটবলের বড় ভক্ত। তিনি নিয়মিতই ঢাকায় ফুটবল খেলতেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের কোনো ম্যাচই তিনি মিস করতে নারাজ। এ ছাড়া, সময়-সুযোগ মিললে ক্রিকেটের মাঠেও নেমে পড়তেন ভারপ্রাপ্ত বৃটিশ হাইকমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এই কূটনীতিক। বৃটিশ হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর টম বার্জও বিকালে সময় পেলে সহকর্মীদের সঙ্গে ফুটবলের মাঠে নেমে পড়েন। কিছুদিন আগেও মিরপুর স্টেডিয়ামে গিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এর কুমিল্লা বনাম সিলেট-এর পুরো ম্যাচ উপভোগ করেছেন।

 

তাছাড়া, প্রায় সব কূটনীতিকই টেলিভিশন এবং খবরের কাগজে চোখ বুলান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি হেসে পাল্টা প্রশ্ন করেন, কে এটা না করে বলুন? অনেক কূটনীতিক সুযোগ পেলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। তেমনই একজন হলেন সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডে। অবসরে কি করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ঘুরতে এবং নতুন নতুন জায়গা আবিষ্কার করতে আমার ভালো লাগে। সেদিনও একান্ত আলাপচারিতায় তিনি গল্প করছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘুরতে তার কতোটা ভালো লেগেছে। গত বছর ছিল সুইডেন-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সকে শাড়ি পরে রিকশাচালকের ভূমিকায়ও দেখা গেছে। নিয়মিতভাবে বাহারি ডিজাইনের সুন্দর সুন্দর সব লং ফ্রক পরলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই তাকে বাংলাদেশি স্টাইলে শাড়ি পরতে দেখা যায়। এই সেদিনও (২৩শে মার্চ) ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে ‘নর্ডিক ডে’ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি স্ট্রাপ পিটারসেনকে শাড়ি পরে বাঙালি মেয়েদের মতো খুব স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। 

ঈদ আনন্দ ২০২৩ থেকে আরও পড়ুন

   

ঈদ আনন্দ ২০২৩ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status