ঈদ আনন্দ ২০২৩
রাতের মালদ্বীপ জেগে ওঠে সাফারি ক্রুজে বার আর ডিজেতে
কাজল ঘোষ, মালদ্বীপ থেকে ফিরে
(২ বছর আগে) ২২ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার, ৮:৫৯ অপরাহ্ন

নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন সকলে। শিরোনামের মধ্যেই অন্যরকম ব্যাপার আছে। মালদ্বীপ শতভাগ মুসলিম দেশ। প্রায় ৪ লক্ষ জনসংখ্যার এই দেশটির পর্যটন খাত হচ্ছে তার আয়ের মূল উৎস। বছরজুড়ে ইউরোপিয়ানরা দলে দলে বিমানে চেপে প্রমোদবিহারে মত্ত থাকে দেশটির বিভিন্ন দ্বীপে। স্বল্প সময়ের এই যাত্রায় দূরের দ্বীপগুলোতে যাওয়া হয়নি। তবে মালে, হোলেমালে, ভিলুমালি আর মাফুশির গল্প শুনেছি। কিছু কিছু স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে।
আমার ভ্রমণকাল ছিল রমজান। স্বভাবতই এক ধরনের পবিত্রতা লক্ষ্য করেছি সর্বত্র। তবে দিনের বেলায় তীব্র গরম থাকায় শহরে লোক চলাচল একেবারেই কম মনে হয়েছে। সূর্য অস্তাচলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরব হয়ে ওঠে মালে, হোলেমালে।
তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, পর্যটকদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আছে বলে মনে হয়নি। ভেলেনা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, মালে, হোলেমালেতে স্বল্পবসনা হয়ে ইউরোপিয়ানদের ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। হিজাব পরে মুসলিম মেয়েরাই পর্যটকদের সেবা দিচ্ছে। দিনের বেলায় বিচে অনেকেই জলকেলি করছে। অনেক পর্যটক সূর্যস্নানে নিজেকে মেলে দিয়েছে উদারভাবে। তাতে কিছুই আসে যায় না স্থানীয় মালদিভিয়ানদের এমনটাই মনে হয়েছে। ২৯৮ বর্গ কিলেমিটারের স্থলভাগ থাকা এই দেশটি পুরোটাই নির্ভরশীল পর্যটকদের ওপর। সকল হোটেল-মোটেল আর বিপণিবিতানে চলছে ডলারে বিকিকিনি। বাংলাদেশের মুদ্রার চেয়ে ডলারের সঙ্গে তুলনা করলে সাতগুণ শক্তিশালী মালদ্বীপের অর্থনীতি। অথচ পুরোটাই নির্ভরশীল আমদানির ওপর।
করোনাকালে অল্প কিছুদিন নিষেধাজ্ঞা ছিল এই দ্বীপ রাষ্ট্রে। তবে দুনিয়ার বহুদেশের পর্যটকরা এখানে কোয়ারেন্টিনের জন্য নিরাপদ ভেবে ছুটে এসেছেন। ফলে তাদের পর্যটন খাতে আয় কমলেও একেবারে তলানিতে ঠেকেনি। দিনের সমুদ্র দর্শন শেষে রাতের মালদ্বীপে পর্যটকরা কি করে এ নিয়ে কৌতূহল ছিল শুরু থেকেই। প্রবাসী বাঙালি ভাই বেরাদরদের কাছে খোঁজ নিই আসলে কি হয়ে থাকে রাতের মালে, হোলেমালে বা অন্য দ্বীপগুলোতে।
সেই ঔৎসুক্য থেকে যাওয়ার সুযোগ হয় মেরিনা ক্রসরোড। এটি একটি দ্বীপকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো। পর্যটকরা পঞ্চাশ ডলারে অনলাইনে টিকিট বুক করে বেড়াতে যেতে পারেন। এই পঞ্চাশ ডলার শুধু সেখানে যাওয়ার জন্য। নির্ধারিত সময়ে মালের প্রান্তঃসীমা থেকে ক্রুজ করে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। নামার পর মনে হবে অন্য এক দুনিয়া। ভেতরে বিভিন্ন স্যুভেনির শপ। রয়েছে বার, রেস্টুরেন্ট। কোথাও হালকা মিউজিকের তালে ইউরোপিয়ান পর্যটকরা মাতোয়ারা। কোথাও বা প্রেয়সীকে সারপ্রাইজ দিচ্ছে তার প্রিয় মানুষ।
এর বাইরেও পর্যটকদের জন্য রয়েছে নানান রকমের সাফারি ক্রুজের ব্যবস্থা। যেখানে রয়েছে বেশকিছু ক্যাটাগরি। নানান রকম পানীয় হাতে মিউজিকের সুর আর তালে পর্যটকরা হারিয়ে যান অন্য দুনিয়ায়। অনেকে আবার ইয়ট নিয়েও চলে যান নীল সাগরের বুকে। দিনব্যাপী এ ধরনের সাফারি ক্রুজে থাকার জন্য ব্যয় হয় ২২০ থেকে ২৭৫ ডলার পর্যন্ত। পুরোদিনের খাওয়া দাওয়া এর মধ্যেই তবে ড্রিংকস এর জন্য বাড়তি ডলার গুনতে হবে। হান্ডুফালি, মায়না, প্রিন্স লুলুসা, সীগাল, প্রিন্ট ঊষা, সাউদার্ন ক্রুজ, মান্তা ক্রুজ, ব্ল্যাক মান্তা, ঈগল রে, ইনফিনিটি, তেমন কিছু সাফারি ক্রুজ। মালদ্বীপে এমন সাফারি বোটের সংখ্যা রয়েছে প্রায় তিনশো’র মতো। এগুলোর মালিকানা বেশিরভাগ মালদিভিয়ানরা হলেও রয়েছে মালয়েশিয়া, জাপানি ও অস্ট্রেলিয়ানরাও। ইউরোপিয়ান আমেরিকান পর্যটকরাই এ ধরনের সাফারি ক্রুজের বেশি গ্রাহক। ছোট ছোট ইয়টগুলো সাধারণত হানিমুন কাপলরা ভাড়ায় ব্যবহার করে। তবে এ ধরনের প্রমোদবিহার সুবিধা সম্পন্ন সাফারি ক্রুজে স্থানীয়দের জন্য রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।