ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঈদ আনন্দ ২০২৩

বাংলাদেশ, প্রিয় বাংলাদেশ

ফরিদুর রেজা সাগর

(১ বছর আগে) ২১ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ৬:৫৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

mzamin

বঙ্গবন্ধু ও আমাদের স্যাটেলাইট অগ্রযাত্রা
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার টেলিভিশন আর সিনেমার ব্যাপারে সবসময় উৎসাহী। বঙ্গবন্ধু নিজে সময় পেলে টেলিভিশন দেখতেন। রেকর্ডে গান শুনতেন। আলোচিত সিনেমাগুলো সময় পেলে দেখতেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ার পর টেলিভিশনে গান শোনেন। নিয়মিতভাবে দৈনিক পত্রিকা পড়েন। যখন বিমানে কোথাও যাত্রা করেন, সেই অবসরে বিমানে বসে বাংলাদেশের ফিল্ম দেখেন। বাংলাদেশ বিমানেও ফিল্ম দেখার ব্যবস্থা করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর শেখ রেহানার তো টেলিভিশন নিয়ে অসাধারণ স্মৃতি সঞ্চয় হয়ে আছে। 

বাংলাদেশ টেলিভিশনের বহু পুরোনো অনুষ্ঠান সম্পর্কে অনর্গল স্মৃতিচারণ করতে পারেন। তার স্মৃতিতে অনেক মজার মজার ব্যাপার আছে।

বিজ্ঞাপন
ডিআইটির ছোট্ট স্টুডিওতে ছোট্ট বুথে তখন খবর পড়া হতো। হঠাৎ করে স্টুডিওতে কোনো একটি বাতি অফ হয়ে গেলে সংবাদ পাঠক ও পাঠিকা বিড়ম্বনায় পড়ে যেতেন। নাচের অনুষ্ঠানে কারও গলার মালা খুলে কী বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সেইসব স্মৃতি শেখ রেহানার মনোজগতে এখনো জ্বলজ্বল করে। 
টেলিভিশন নিয়ে, টেলিভিশনের উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু অনেক বড় স্বপ্ন দেখতেন। পৃথিবীর বড় বড় ঘটনাগুলো কীভাবে সরাসরি দেখা যেতে পারে সেই স্বপ্ন সফল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এতে প্রয়োজন হলো আধুনিক প্রযুক্তি। বঙ্গবন্ধু দ্রুত সময়ে সে ব্যবস্থা করেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধু কলকাতা আসেন। তখন কলকাতায় টেলিভিশনের দুটো ইএনজি ভ্যান টিমের সঙ্গে যায়। সদ্য স্বাধীন দেশ। ব্রিজ, কালভার্ট ধ্বংসপ্রাপ্ত। রাস্তাঘাট ভঙাচোরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ। কষ্ট করে টিভি কর্মীরা কলকাতা পৌঁছান। ইএনজি অর্থাৎ ইলেকট্রনিক নিউজ গ্যাদারিং। ওবি ভ্যান অর্থাৎ আউটডোর ব্রডকাস্টিং। তখন থেকেই টেলিভিশনে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আউটডোর শুটিং শুরু হলো।

 

কিন্তু বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখার জন্য প্রয়োজন যে প্রযুক্তি সেটাও স্থাপিত হলো বঙ্গবন্ধুর আমলেই। বেতবুনিয়া ভূ উপগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমে তখন বিদেশি সংবাদের ফুটেজ সংগ্রহ করা হতো। বঙ্গবন্ধু তখন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এলেন। সংবাদ আইটেম ছাড়া দেশবাসী প্রথমবারের মতো সরাসরি দেখলো বিশ্বখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর বক্সিং। জর্জ ফোরম্যান, জো ফ্রেজিয়ার, কেন নর্টন প্রমুখ সেরা মুষ্টিযোদ্ধার সঙ্গে আলীর লড়াই বাংলাদেশ দেখলো সরাসরি। সাধারণ দর্শক অনুধাবন করতে পারলো ভূ-কেন্দ্রের গুরুত্ব। এই উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা বহু অনুষ্ঠান সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসম্ভব সুদূরপ্রয়াসী চিন্তাশীল ব্যক্তি। টেলিভিশনের উন্নয়ন মানে  যে দেশের উন্নয়ন এটা তিনি তখনই উপলব্ধি করেছিলেন। সরাসরি সম্প্রচারকে আরও সহজ করার জন্য জাপান সরকার উপহার দিলো দুটো ইএফপি ভ্যান। অর্থাৎ ইলেকট্রনিক ফিল্ম প্রডাকশন।
মনে পড়ে, বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনকালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ভাড়া করে আনা হয় এসএনজি নামের যন্ত্র। এটা দিয়ে আরও সহজে সরাসরি সম্প্রচার করা যায়। এরই মধ্যে বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রের নাম ব্যাকরণগত দিক থেকে ঠিক করা হয়েছে। 

 

 

দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতা লাভ করলো। প্রধানমন্ত্রী হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তার শাসনামলে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চালু হয়। ডিজিটাল ও এনালগ- প্রায় ৪০টির মতো টিভি চ্যানেল এর আত্মপ্রকাশ এবং সম্প্রচার শুরু হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসম্ভব দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব। তিনি যখন একের পর এক টেলিভিশনের অনুমতি দিচ্ছিলেন তখন অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর মতোই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনিই পরবর্তীকালে স্থাপন করলেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। স্যাটেলাইট স্থাপনে অনেকেই বিস্মিত হন। পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পা দিলো মহাকাশ জগতে। শুধু বাংলাদেশই নয় রাশিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন পর্যন্ত তাদের দরকার অনুযায়ী ১১ রকমের প্রায় ৪২০০ স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে চলছে।
বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের ভূ-কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এইজন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় ভূ-কেন্দ্র তৈরি করা হয়। জয়দেবপুরের ভূ-কেন্দ্রটি হলো মূল স্টেশন। আর বেতবুনিয়ায় স্টেশনটি দ্বিতীয় মাধ্যম ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে দুটি ভূ-উপগ্রহ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
শুধু দেশি সংস্থা নয় বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের আরও  কয়েকটি দেশের বিভিন্ন মিডিয়া সংস্থা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে ভাড়া নেয়া ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
হন্ডুরাস- ২টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল।
তুরস্ক-১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল।
ফিলিপাইন- ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল (আরও একটি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে)।
ঘানা ২ টিভি চ্যানেল (আরও একটি সম্প্রচারের অপেক্ষায়)।
ক্যামেরুন- ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল।
দক্ষিণ আফ্রিকা- ২টি অনলাইন ভিত্তিক টিভি চ্যানেল।
সকল বাংলাদেশি এবং বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা বাঙালির বুকের মধ্যে লালিত মহান পুরুষ বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা। তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে চলেছে শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে। 
সময়ের পথপরিক্রমায় আরও অনেক স্যাটেলাইট আমাদের উৎক্ষেপণ করা হবে সেই সুদিনের প্রত্যাশায়। বঙ্গবন্ধু আছেন প্রতিটা বাঙালির হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধু আছেন মহাকাশে।

 

স্বপ্নের সেতু
বিশাল প্রমত্তা নদী। এপার থেকে ওপার দেখা যায় না। নদীতে প্রবল স্রোতধারা। নৌকায় করে লোকজনেরা নদী পার হয়। এপারের মানুষ যায় ওপারে। ওপারের মানুষ আসে এপারে। ঘাটে ঘাটে নানা রকম ব্যবসা। পণ্য কিনে নদী পারাপার হয় গ্রামবাসী। এপারের ঘাটে একজন মাঝি আছেন। দারুণ সাহসী ও সংগ্রামী সেই মাঝি। একটা ছোট নৌকা আছে তার। তাই দিয়ে তিনি পারাপার করেন। যাত্রীরা মাঝির প্রতি দারুণ আস্থাশীল। 
এই সংগ্রামী মাঝি বুনো নদীকে ঠিকই বশ মানিয়ে তোলে। ঢেউয়ের চূড়ায় উঠে তার নৌকা দ্রুত বেগে ছুটে চলে। মাঝি আকাশের দিকে তাকিয়ে আন্দাজ করতে পারে কখন বৃষ্টি আসবে। কখন আকাশে মেঘ জমবে। কখন নদী উন্মত্ত হয়ে উঠবে। কখন বিপুল জলরাশির প্রবল বেগে নদীর পাড় লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে? কখন আনাড়ি মাঝির নৌকা ডুবে যাবে। অভিজ্ঞ মাঝি সব বুঝতে পারে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কেউ যখন নৌকা চালাতে চায় না তখনো সাহসী মাঝি অকুতোভয়ে নদী পাড়ি দেন। নদীর সঙ্গে লড়াই করে তিনি একটা জীবন অতিক্রম করেছেন। এক সন্তানের পিতা তিনি। তার সন্তান গঞ্জের স্কুলে লেখাপড়া করে। সামনে তার ম্যাট্রিক পরীক্ষা। পাস করে কোন পেশায় যাবে? ছেলে বলে, বাবা- আমিও তোমার মতো মাঝি হবো। শক্ত করে বৈঠা ধরবো নৌকার। যাত্রীদের নিরাপদে গন্তেব্যে পৌঁছে দেবো। 
বাবা ছেলের কথা শুনে মুচকি হাসি দেয়। ঘামে ভেজা গামছায় মুখ মুছতে মুছতে সাহসী মাঝি বলে, বাচ্চুর মা, অনেক খিদা লাগছে। জলদি খাওন দেও। বাচ্চুর মা মাটির সানকিতে পান্তা ভাত বেড়ে দেয়। মাঝি গোগ্রাসে গিলতে থাকে। বাচ্চুর মা হাতপাখা ঘোরাতে থাকে। তারপর প্রশ্ন করে
আইজকা রাইতেও নাকি আপনি নদীতে থাকবেন। ভোরবেলা ফিরবেন। কই যাবেন?
অদম্য মাঝি ভাতের গ্রাস মুখে নিতে নিতে বলে, একটা বরযাত্রীর দলকে তাদের গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে। বর বউ আমার নৌকা ছাড়া অন্য কোনো মাঝির নৌকায় চড়বে না। তাই আমারই যাওন লাগবো। হায়রে আমার মরণ।
বাচ্চুর মা ফুঁসে উঠলো। 

কিন্তু অদম্য মাঝি তখন চুপচাপ। তিনি তখন কোনো কথার জবাব দেন না। সে তখন আহার পর্ব সমাপ্ত করায় ব্যস্ত। বাচ্চুর মা বলতেই থাকে, তুমি না গেলে ঘাটে কি পারাপার হবে না?
অদম্য মাঝি জানে সে একজন আস্থার প্রতীক। সে খুব সাবধানে নৌকা চালায়। তার নৌকা কখনো কোনো বিপদে পড়ে না। ঝড়ের দিনেও সে নিরাপদে নৌকা ঘাটে পৌঁছায় অপর প্রান্তে। তার নৌকায় চড়ে এলাকার চেয়ারম্যান। গ্রামের মাতবর। গণ্যমান্য মানুষেরা।  কেউ হয়তো তাকে খুশি হয়ে বেশি ভাড়া দিতে চায়। কিন্তু মাঝি তখন বিনয়ের সঙ্গে বলে,
পয়সা বেশি নিবো কেন? যা প্রাপ্য আমাকে তাই দেবেন ভাই। 
এক সময় নদী পারাপারে ভাড়া ছিল ২ টাকা। আজ ৬ টাকা। 
পদ্মা নদীর সঙ্গে সেই মাঝির গভীর বন্ধুত্ব। নদীর প্রতিটা বাঁক তার চেনা। প্রতিটা ঋতুতে নদীর কেমন চেহারা হয় সে জানে। বর্ষায় প্রমত্ত পদ্মা। শীতে জীর্ণ নদী। হেমন্তে সুশীলা নারীর মতো। শান্ত ও সৌম্য। বসন্তে শীতল। ঢেউয়ের নাচানাচি নেই। বর্ষায় নদী যেন জেগে ওঠে। বর্ষার পদ্মাকে বড় ভালোবাসে অদম্য মাঝি। নদী তখন দীর্ঘ ও স্ফিত হয়ে ওঠে। ঢেউয়ের ঝলকে নাচতে থাকে পদ্মা। অস্থির ও চঞ্চল এক নদী। বড় ভালো লাগে। আরও কতো গল্প লুকিয়ে আছে এই নদীর সঙ্গে। একবার হারান মাস্টারের ছেলের ভয়ানক অসুখ। চোখ মুখ উল্টে আসছে। গোঙানির শব্দে সবাই আতঙ্কিত। বলা হলো ওপারের হাসপাতালে এখনই নিতে হবে। নইলে ওকে বাঁচানো যাবে না। 
সবাই খোঁজ করলো অদম্য মাঝি কই? তখন বিকাল। মাঝি ঘাটেই ছিল। আকাশ কালো করে মেঘ জমেছে। যেকোনো সময় ঝড় আসবে। এখন বৈশাখ মাস। সন্ধ্যা হলেই ঝড় বৃষ্টি আসবে। কিন্তু মাঝি বড় নির্ভীক। বললো, আমি এই কালো মেঘকে ভয় পাই না। ঝড় এলে আসুক। আমি ঝড়ের ভেতরেই আমার বাজানকে নিয়ে ওই পাড়ে যাবো। হারান মাস্টারের চোখ ছলছল করে উঠলো। সেই দুর্যোগময় আবহাওয়ার ভেতরেই শিশু সন্তানটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে। 
অদম্য মাঝির কতো যে আনন্দ।
আরও কতো কাহিনী। এই নদী বড় বেগবান। সে দুকূল ছাপিয়ে তীব্রগতিতে এগিয়ে চলে। একবার ভরা বর্ষার দিনে কবির মিয়া খুব কাতর স্বরে বললো,
আমার বউটারে গঞ্জের হাসপাতালে নিতে হইবো। নইলে বাঁচবো না ভাই।
চলো- তুমি ছাড়া কে নিয়া যাইবো আমগো ওই পাড়ে?
অদম্য মাঝি বিপদের সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখে। সাহস হারায় না। কবির মিয়ার বউকে পলিথিনে পেঁচিয়ে নৌকার ছইয়ের ভেতর শুইয়ে দিলো। তখন অবিশ্রান্ত বর্ষণ। ঘনঘোর বৃষ্টি। মাঝি নৌকা চালানো শুরু করলো দ্রুত বেগে। সে যাত্রায় সময় মতো নৌকা পৌঁছে যায় হাসপাতালে। সঠিক চিকিৎসায় কবির মিয়ার বউ বেঁচে উঠলো।
অদম্য মাঝিকে এসব স্মৃতি বড় আনন্দ দেয়। যখন ঘাটে লোকজন থাকে না তখন অদম্য মাঝি নদীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নদীর বুকে বয়ে চলে তিরতিরিয়ে ঢেউ। এই নদী যেন মা। মায়ের মতো সবাইকে জড়িয়ে রেখেছে। নদীকে বড় ভালোবাসে অদম্য মাঝি।


একদিন ভরা বর্ষায় নদী তীরে গিয়ে দেখে-অনেক মানুষের ভীড় ঘাটে বাঁধা শত শত নৌকা। নৌকাগুলো দাঁড়িয়ে আছে। সবাই মিলে একসঙ্গে পশ্চিম পাড়ে। ওখানে বিশাল মঞ্চ বানানো হয়েছে। লাল সবুজ কাপড়ে সাজানো হয়েছে মঞ্চের আশপাশ। 
সেই ঘাটে বড় এক স্টিমার এসে ভিড়লো। স্টিমার থেকে নামলেন একজন বড় নেতা। তিনি বক্তৃতা দিয়ে জানালেন এখানে তৈরি হবে বড় একটা সেতু। নদী পারাপারে অনেক সুবিধা হয়ে যাবে। নেতার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার পর দোয়া মাহফিল হলো। 
অদম্য মাঝির জীবন বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে তাদের দিন চলবে কীভাবে? ঘরে ফিরে মন খারাপ করে বসে রইলো মাঝি। বারবার জিজ্ঞেশ করলো বাচ্চুর মা। ও মাঝি- কি হইছে তোমার?
মাঝি তখন সব খুলে বললো। ঘাটে আর নৌকা চলবে না। আমরা খাবো কি? আমাদের দিন চলবে কি করে?
ছেলে তখন স্কুল থেকে বাসায় ফিরেছে। সেতু তৈরি হবে শুনে সে মহাখুশি। 
বাবাকে বললো,
আহা সুসংবাদ। সেতু থেকে দাঁড়িয়ে এবার পুরো নদীটাকে দেখা যাবে। আমরা হেঁটে এপার থেকে ওপারে চলে যাবো। আমাদের পরিশ্রম কমে যাবে।  সেতু হওয়া তো অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার বাবা। তোমাকে আর নৌকা চালানোর কাজ করতে হবে না। বাবা ছেলের মুখের দিকে অপলকে তাকিয়ে আছেন। এই সেতুর জন্য এপার ওপারের পার্থক্য ঘুচে যাবে। আমরা তখন অন্য কাজ করবো। এপার ওপারে ভ্যানগাড়িতে মাল বহন করবো। জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে সবকিছুতে উন্নতি হবে আমাদের। 
এই যেমন হারান মাঝির ছেলেকে বাঁচানো গেলো কতো কষ্ট করে। কবির চাচার বউও বাঁচলো কষ্ট করে। তখন আমরা সেতু দিয়ে দ্রুত চলে যেতে পারবো হাসপাতালে। ভালো হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা হবে তাই না?
অনেকে বেকার হয়ে যাবে কথাটা ভুল। আসলে সেতু তৈরি হলে সবার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হবে। আমাদের জীবন আরও সহজ হবে। 
মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ছেলে তখন বাবাÑমায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো শোনো, প্রায ৪ হাজার মানুষ কাজ করছে এই সেতু নির্মাণে। এই সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তর পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা খুলে যাবে।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে কিছু তথ্য দেয়া যাক। 
প্রায় ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু। প্রস্থ হচ্ছে ৭২ ফুট। দেশের সর্ববৃহৎ এই সেতু তৈরি হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে। এটাই আমাদের গর্ব। 
বাবাও ছেলের কথায় শান্তি পেলেন। তিনিও স্বপ্ন দেখতে লাগলেন, স্বপ্নের সেতু পদ্মা দিয়ে তিনিও নদী পারাপার করবেন। 
এই একটি সেতুর কারণে দেশের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। অদম্য মাঝি তখন নতুন স্বপ্নে বিভোর। 
পদ্মা সেতু শুধু একটা সেতু নয়Ñপুরো দেশের মানুষের সংযোগ স্থাপনের ভিত্তিভূমি। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেতু। বিশ্ববাসী বিস্ময়ের সঙ্গে অবলোকন করবে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সেতু স্থাপন করেছে। কোনো ধার কর্জ নয়, নিজেদের টাকায় এটা স্থাপন করা হয়েছে। আমরা যদি একসাথে কাজ করি। আমরা যদি ৭১ এর চেতনায় সামনে এগিয়ে যাইÑতবে নিশ্চয়ই আরও অনেক বড় বড় কাজ করতে পারবো। বিশ্ববাসী দেখবে আমাদের দেশপ্রেম অনেক তীব্র। আমরা একত্রিত হয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু বানিয়ে ফেলতে পারি। ছেলের মুখে এসব কথা শুনে অদম্য মাঝি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। মায়ের চোখ ছলোছল। তার চোখে ভাসতে থাকে ১৯৭১ এর স্মৃতি। আমরা সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। একসাথে যুদ্ধ করেছিলাম। আমরা বাঙালিরা একত্রিত হলে অনেক বড় কাজ করে ফেলবো। তারই ধারাবাহিকতায় তৈরি হয়েছে পদ্মাসেতু। বিশ্ববাসী অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখবে- বাংলাদেশের মানুষ বিদেশি সাহায্য নির্ভর না হয়ে কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মাসেতু তার প্রমাণ। এই সেতু আমাদের ভালোবাসার প্রতীক। আমাদের সাহস ও কর্মনিষ্ঠার প্রতীক। আমাদের দেশপ্রেমের প্রতীক। 
পদ্মাসেতু নির্মিত হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। দেশি বিদেশি নানা রকম বাধা বিঘ্নকে অতিক্রম করে আমরা জয় করেছি বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী পদ্মাকে। পদ্মার বুকে সগৌরবে দাঁড়িয়েছে ৬.১৫ কিলোমিটারের এই দীর্ঘ সেতু। যেটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাকে সংযুক্ত করবে সহজ যোগাযোগের মাধ্যমে। বাংলাদেশের ৫০ বছরে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হওয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই পদ্মা সেতু। যার একমাত্র কৃতিত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার। 
পদ্মা নদীকে আমরা জয় করেছি। বলতেই পারি, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় পদ্মা সেতু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের আরও অনেক স্বপ্ন সফল হবে সেই প্রত্যাশায়।  
 

ঈদ আনন্দ ২০২৩ থেকে আরও পড়ুন

   

ঈদ আনন্দ ২০২৩ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status