ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আপন আলোয় মানবজমিন

মানবজমিন বেঁচে থাকুক পরবর্তী সাংবাদিকতার জন্য

জামিউল আহসান শিপু, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, ইত্তেফাক
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

কাওরান বাজার। রাত ২টা কি আড়াইটা। কিচেন মার্কেটের সামনের রাস্তায় ৪/৫টা ট্রাক সামনে পিছনে লাগানো অবস্থায় দাঁড়ানো। প্রতিটি ট্রাকের ডালা উঁচু করে ভর্তি সবজির বস্তা। বস্তাগুলো খালাস করতে ব্রেকবিহীন রিকশাভ্যানের সিরিয়াল নিয়ে হাঁকডাক। মাথায় বজ্রপাতের মতো অবস্থা। কাঁচামরিচের বস্তা যদি হয়, তাহলে তো কথায় নেই। রিপোর্ট হাতে পেয়ে গেলাম। কিন্তু বিধিবাম। বস্তা ভর্তি পেঁপে।

বিজ্ঞাপন
কাঁচামরিচের বস্তা কই পাই? কাঁচামরিচের বস্তা কই পাই-এমন প্রশ্নে একজন বললেন যে ওয়াসা ভবনের সামনে যান। ওখানে রাজশাহী থেকে কাঁচামরিচের বস্তা ভর্তি ট্রাক এসেছে। গভীর রাতে কাওরান বাজারের ভীড় ঠেলে এগিয়ে গেলাম ওয়াসা ভবনের সামনে। পেয়ে গেলাম কাঁচামরিচের বস্তা ভর্তি ট্রাক। 
আজ ১৮ বছর আগের ২০০৪ সালের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের কোনো এক রাতের স্পট রিপোর্টিংয়ের চিত্র। সে সময় আমি কাজ করতাম আমার সাংবাদিকতার জীবনের প্রথম সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, শ্রদ্ধেয় মতি ভাই সম্পাদিত দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায়। আমি অবশ্য এই পত্রিকাটির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিলাম ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। অক্টোবর মাসের ১ তারিখে আমি ঢাকায় মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করি। আর যোগদানের ১ দিন বা ২ দিন পর প্রচ- বর্ষণে ঢাকা ডুবে যায়। ওই বছর সারা দেশে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষেতেই কাঁচামরিচ ও বেগুন পঁচে যায়। আর এ কারণে হঠাৎ করে কাঁচামরিচের কেজি হয় ৪০০ টাকা। আর বেগুনের কেজি হয় ৩০০ টাকা।
সবজির বাজারে এই দুই আইটেমের আকাশচুম্বি দাম নিয়ে সে সময় খবরের কাগজে রীতিমত শিরোনাম হয়েছিল। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান তো সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, বেগুনি না বানিয়ে ফেঁপেনি ( পেঁপে) বানাবেন। আসলে কৃষকের মাঠ থেকে বেগুন বা কাঁচামরিচ কতো টাকায় বিক্রি হওয়ার পর তা ঢাকায় কীভাবে দাম বেড়ে যায়- সে বিষয়টি সরজমিন করতেই মতি ভাই রাত জেগে কাওরান বাজারে অ্যাসাইনমেন্ট দেন। ওইদিন রাতে আমার সঙ্গে আশরাফুল হক রাজীব, নিজামুল হক বিপুল ও আফসার ভাইও ডিউটি করেছিলেন। 
যাই হোক, সারারাত জেগে রিপোর্ট সংগ্রহ করার পর সকাল ১১টায় মানবজমিন অফিসে গেলাম। রিপোর্ট লিখে জমা দিলাম চিফ রিপোর্টার সারোয়ার ভাইয়ের হাতে। পরদিন সকালে পত্রিকা খুলে দেখি ব্যানার লিড। কিভাবে কাঁচামরিচ ও বেগুনের দাম ঢাকায় ৫/৬ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেল। এরপর দুই সবজির দাম অর্ধেক নেমে গেল। 
মানবজমিন পত্রিকায় কাজ করে স্পট রিপোর্টিং যা শিখেছি, তা আজও এই পেশায় সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগছে। মাত্র দুই বছর মানবজমিনের কাজ করে অন্তত ঢাকা শহরের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে আমার যাওয়া হয়নি। তখনকার স্পট রিপোর্টিং ছিল এরকম যেকোনো একটি লাশ উদ্ধারের ঘটনার জন্য পরদিন ফলোআপ করতে স্পটে যেতে হতো। আর গৃহবধূ, কলেজছাত্রী, প্রেমিকা—এই ধরনের আত্মহত্যা বা ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার বা রহস্যজনক মৃত্যু- অবশ্যই ফলোআপ রিপোর্ট হিসাবে পরদিন স্পটে যাওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। এসব ফলোআপ স্টোরি করার কারণেই আজ সাংবাদিকতায় অনেক দূর এগিয়ে গেছি। অন্তত এটুকু বলা যেতে পারে, স্পটে গেলে রিপোর্টের ভিন্নমাত্রা যোগ হয়। 
তাই মানবজমিন পত্রিকাটি আমার সাংবাদিকতার উৎকর্ষে পাথেয়। নতুন কোনো তথ্য সংগ্রহের কৌশলটা মানবজমিনের মতি ভাইয়ের কাছ থেকে বেশি শিখেছি। একবার হলো কি, মতি ভাই চিফ রিপোর্টার সারোয়ার ভাইকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, একজন ক্রাইম রিপোর্টারকে ডাকুন। যথারীতি আমি হাজির হলাম। মতি ভাই বললেন, আপনাকে অ্যারেস্ট বা আটক হতে হবে পুলিশের কাছে। এরপর আপনি কারাগারে যাবেন। ৫/৭ দিন পর আমরা জামিন করে নিয়ে আসবো। আপনি কারাগারে কি দেখেছেন-তাই এসে লিখে দিবেন। মতি ভাইয়ের এই কথা শুনে তো আমার গলা শুকিয়ে যাবার অবস্থা। সারোয়ার ভাই বললেন, মতি ভাই পুলিশের কাছে আটক হওয়ার পর তাকে লাঠি দিয়ে যে টর্চার করবে-সেটার তো ধকল সিপু সামলাতে পারবে না। এই রিস্ক কে নেবে? তাই মতি ভাই এই পরিকল্পনা বাতিল করে দিলেন।
মানবজমিনে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে এরকম নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। যা এখনো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই মানবজমিন পরবর্তী সাংবাদিকতার জন্য বেঁচে থাকুক। এগিয়ে চলুক।

আপন আলোয় মানবজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

আপন আলোয় মানবজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status