আপন আলোয় মানবজমিন
মানবজমিনের পথচলা এবং আমার আক্ষেপ
ইলিয়াস হোসেন, লেখক, সাংবাদিক
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার
উপমহাদেশের প্রথম নান্দনিক ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন যে সময় বাজারে আসে, তখন থেকেই মূলত আমার নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া শুরু। সেটা ১৯৯৭ সালের কথা। এর বছর দুয়েকের মাথায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পাই। হলে ওঠার পর দেখি সেখানে মানবজমিন সত্যিই হটকেক, পড়ার সুযোগ পাওয়া যায় না। তখনতো আর আজকের মতো হাতে হাতে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই সাংবাদিকতার নেশা পেয়ে বসে আমাকে। তখন মনে হতো, ইশ! মানবজমিনে কাজ করার সুযোগ পেতাম যদি! একবার আবেদনও করেছিলাম। সুযোগ হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই সাংবাদিকতায় ঢুকে পড়ি। তবে মানবজমিনে কাজ করার আকাক্সক্ষা কখনো কাটেনি। এর প্রধান সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান চৌধুরীর নিজ নামে লেখাগুলো পড়ে মুগ্ধ হতাম। এত ছোট বাক্যে বাংলাদেশের আর কোনো লেখক বা সম্পাদক লেখেন না বোধ হয়।
কর্মজীবনে আমি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বড় ৩টি কাগজে (পত্রিকায়) কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু মানবজমিন এবং জনাব মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ না পাওয়ার বেদনা দূর হয়নি কখনো।
বছর চারেক আগে সমকালের তৎকালীন সম্পাদক (প্রয়াত) গোলাম সারওয়ার ভাইয়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মতি ভাই বলেছিলেন, ’৮৬ ফুটবল বিশ্বকাপে মতি ভাইয়ের লেখা প্রতিবেদন তখন ইত্তেফাকে টানা একমাস লিড হয়েছিল। তখন মতি ভাই ছিলেন রিপোর্টার আর সারওয়ার ভাই বার্তা সম্পাদক। শুনে বিমোহিত হয়েছিলাম। সম্ভবত এটা একটা বিশ্ব রেকর্ড। কোনোকালে কোনো রিপোর্টার হয়তো এ রেকর্ড ভাঙতে পারবেন না।
সেই সময়কার ইত্তেফাক আর আজকের ইত্তেফাক এক নয়। তখন ইত্তেফাক ছিল দেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী দৈনিক।
ইরাক যুদ্ধে রণাঙ্গন থেকে মতি ভাইয়ের খবরের কথাও মনে পড়ছে।
মানবজমিনের স্লোগানটাও দারুণ- ‘কারও তাঁবেদাবি করে না।’ তাঁবেদারির এই যুগেও এমন স্লোগান ধারণও দুরূহ। বহু ঝঞ্ঝা আর ত্যাগ সয়েই মানবজমিন এ স্লোগানের তাৎপর্য বহন করে চলেছে। একবার মতি ভাই বলেছিলেন, সহকর্মীদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে আপস করে চলতে হয়। ক’জন সম্পাদকই বা এভাবে বলতে পারেন!
মতি ভাই তার কাগজে এবং তার টক শো উপস্থাপনায় প্রতিনিয়ত যে পরিমিতিবোধের পরিচয় দিয়ে চলেছেন তা অনুসরণীয়।
বড় বড় শিল্প গোষ্ঠীর বিপুল বিনিয়োগের পত্রিকার তুলনায় মানবজমিন হয়তো এখন কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে।, তাই বলে তার প্রভাব কম নয় মোটেই। দুনিয়ায় অনেক সংবাদমাধ্যম আছে, যেগুলো যতটা না আলোচিত তার চেয়ে বেশি বিতর্কিত। রুপার্ট মারডকের ফক্স নিউজ কিংবা তার মালিকানাধীন বৃটেনের ডেইলি সান এক্ষেত্রে ভালো দৃষ্টান্ত। এদেশেও এমন উদাহরণ কম নেই। এখানেও মাফিয়া গোষ্ঠীর গণমাধ্যমের দাপট বেশি।
প্রচারসংখ্যার দৌড়ে সামনের সারিতে না থাকলেও আমার মত বহু পাঠকের অন্তরজুড়ে মানবজমিন। দেশের বড় তিনটি কাগজে কাজ করার সুযোগ পেয়েও এখনো আমার মন অতৃপ্ত। মানবজমিনে কাজ করার সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ এখনো ভুলতে পারিনি। বৃহস্পতিবার গৌরবময় রজতজয়ন্তী উৎসব করেছে মানবজমিন। সুবর্ণ জয়ন্তীতে মানবজমিনকে অনন্য উচ্চতায় দেখবো, সেই প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন
আপন আলোয় মানবজমিন থেকে আরও পড়ুন
আপন আলোয় মানবজমিন সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]