ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আপন আলোয় মানবজমিন

আমার আছে জল

সুমন রহমান, শিল্প সম্পাদক, মানবজমিন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখি। চুল আঁচড়াই, দাড়ি কামাই, কখনো নিজেকে ভালো করে  দেখি, 
ফিসফিস করে নিজেকে জিজ্ঞাসা করি, ‘কেমন আছো সুমন রহমান?’ 
মনের ভেতর থেকে প্রশান্ত উত্তর-
আয়নার ভেতরের মানুষটি অকপটে বলে ওঠে-
এই বেশ ভালো আছি। 
বিত্তবৈভবের ঝঞ্ঝাট নেই। ভাত মাছ খাই, দখিন হাওয়ায় রিকশায় চলি। 
মন চাইলে রবীন্দ্র সরোবরে দীঘির তিরতিরে জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকি। 
আর যখন রাত গভীর হয়- ইজেলে ক্যানভাস, রঙ-তুলির আঁচড় কাটি এবং অবশ্যই শান্ত ভলিউমে বাজে পঙ্কজ মলিকের  রবীন্দ্র সংগীত।  
এই ছিমছাম জীবনটি দিয়েছে আমায় মানবজমিন। 
তাই মানবজমিনকে ভালোবেসে কাটিয়ে দিলাম একজীবন। 
প্রিয় সম্পাদক মতি ভাইয়ের সঙ্গেই কর্মজীবন শুরু। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার মাস্টার্সের ছাত্র।  বাংলাবাজার পত্রিকায় যোগ দিলাম। কলিগ হিসেবে  পেলাম শিল্পী উত্তম সেন এবং সহপাঠী অভিজিৎ চৌধুরীকে। তারুণ্যেভরা জীবন। চারদিকে  কেবলই মুগ্ধতা। বাংলাবাজারে পা রাখতেই দেখা পেলাম শক্তিমান নিউজ এডিটর আহমেদ ফারুক হাসানের।

বিজ্ঞাপন
অফিসে কাজ করছি, হঠাৎ  পেছন থেকে কান মলে চমকে দিলেন ফারুক ভাই। বললেন,  তুই এখানে? আমি বললাম- এইতো! এখানে জয়েন করেছি। ফারুক ভাই বললেন-  বেশ বেশ।
ফারুক ভাই আমার পূর্বপরিচিত। সূর্যসেন হলে তিনি আমার সেজো ভাইয়ের রুমমেট ছিলেন। বাংলাবাজারে আরও দেখা মিললো প্রিয়কবি  নির্মলেন্দু গুণ, জালাল আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম কাদির, শহীদুল আযম, শামীমুল হক,  ব্রাত্য রাইসু, রাজু আলাউদ্দিনসহ অনেক মেধাবী প্রিয় মুখের। আনন্দ বেদনায় এখানে কেটে গেল কয়েকটি বছর। 
এরপর প্রিয় মতি ভাইয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় মিশন মানবজমিন। মানবজমিন
প্রথমে সাপ্তাহিক ছিল। আমি  সেই সাপ্তাহিকেও কাজ করেছি। ওয়ালসো টাওয়ারের আন্ডারগ্রাউন্ডে। সে এক রোমাঞ্চকর দিন ছিল বটে। এরপর সেই সাপ্তাহিক মানবজমিন রূপ পেলো  দৈনিকে।   দৈনিক মানবজমিন। বাংলাদেশের প্রথম রঙিন ট্যাবলয়েড দৈনিক। প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী। এখানে কাজ করছি শিল্পনির্দেশক পদে। অভিজিৎ    চৌধুরী আমি এবং মাসুক  হেলাল। অফিস ওয়ালসো টাওয়ার, পরীবাগ।  নানা গবেষণা শেষে ভিন্নমাত্রার  মেকাপ, সাইজ  নিয়ে বাজারে হাজির মানবজমিন। বাংলাদেশে আলোড়ন তুললো  খুব অল্প সময়েই মানবজমিন। রবীন্দ্রনাথ শেষের কবিতায় বলেছেন- ‘আমরা যাবো সেই পথে, যে পথে যায়নিকো  কেউ সাহস করি।’ মতি ভাই ঠিক সেই সম্পাদক  যে সর্বদা নতুন চিন্তা, সাংবাদিকতায় নতুনমাত্রা এবং সত্য প্রকাশে চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মানবজমিন আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এই দীর্ঘ পঁচিশ বছরে আমি যেন মানবজমিন পারিবারের একজন হয়ে উঠেছি। মতি ভাইয়ের ভালবাসা, প্রিয় ভাবি মাহবুবা চৌধুরীর অপার স্নেহ পেয়ে আমি বিধুর হয়ে আছি।
আরেকটি অনুজ মুখ বড় প্রিয়। মেহযেব চৌধুরী মিশু। মতি ভাইয়ের একমাত্র ছেলে।  আমি যখন মানবজমিনে যুক্ত হই তখন মিশু নিতান্তই শিশু। স্কলাস্টিকার ছাত্র তখন সে।  সেই সময়ে মিশু কিছুদিন আমার কাছে চারুকলার পাঠ নিয়েছিল। তখনই তার মেধা  এবং ক্রিয়েটিভিটি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। আজ সে যুক্তরাজ্যে পড়াশুনা শেষ করে  সেখানকার একটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছে। এ বড় গৌরবের। মিশুর সবচে বড় গুণ অগ্রজদের প্রতি অসম্ভব  রেসপেক্ট। 
যা আজকের দিনে ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে আসছে। মিশু যখন বিলেত থেকে দেশে ফেরে, এবং মানবজমিন অফিসে আসে- ছোট বড় সবার জন্য  সে চকোলেট  নিয়ে আসবেই। সবার মাঝে চকোলেট বিলিয়ে তার যেন এক অন্যরকম আনন্দ । 
তাই চাকরি জীবনের এই শান্তিধাম  ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা কখনোই ভাবিনি। অনেকের সঙ্গে  দেখা হলে অবাক হয়ে বলেন, এখনো মানবজমিনে? আমি স্মিত হেসে বলি- কেন নয়?
কাজের এতো স্বাধীনতা, সহকর্মীদের এতো মমতা অন্যত্র আছে কী! ভালোবাসা এখানে জলের মতো থই থই।  
জল যেমন মানুষকে বাঁচায়, তৃষ্ণার্তকে প্রশান্ত করে। জলজ জীবনের মতো সজীব আর কী হতে পারে?  জল মানুষকে সারল্য শেখায়।
নদী হতে বলে। মানবজমিন আমার কাছে জলজ স্পর্শ। স্চ্ছব জলের স্পন্দন। তাই গৌরব করে সবাইকে বলি- ‘আমার আছে জল’ ।

আপন আলোয় মানবজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

আপন আলোয় মানবজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status