আপন আলোয় মানবজমিন
‘এখনো মানবজমিনেই আছেন?’
মোহাম্মদ আবুল হোসেন, বিভাগীয় প্রধান, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার
মাঝে মধ্যেই একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। প্রশ্নটি হলো- আপনি এখনো মানবজমিনেই আছেন? প্রশ্নকর্তা আর কেউ নন। আমার পুরনো সহকর্মীদের কেউ কেউ। একজন, দু’জন নন। ঢাকা, তথা বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন মানবজমিনে আমার এবং আমাদের অসংখ্য সহকর্মী। তাদের অনেকেই আলোচনায় আছেন। সাংবাদিকতার সামনের সারিতে আছেন। দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সূচনালগ্ন থেকে এর সঙ্গে আছি। নানা ঘটন-অঘটনের মধ্যদিয়ে এই পত্রিকা এখন পরিণত যৌবনে। পঁচিশ বছর বয়স পূর্ণ করেছে। এই দীর্ঘ সময় এই একটি পত্রিকায়ই পড়ে আছি। অন্যদের মতো আমি এবং হাতেগোনা কয়েকজন সহকর্মী চাকরিক্ষেত্র বদল করিনি। এটা নিয়েই পুরনো সহকর্মীদের বিস্ময়ভরা প্রশ্ন। তাদেরকে ওই প্রশ্নের উত্তর কখনো দিই নি। আমার কাছে বড় সত্য হলো- একজন মানুষ, দু’জন মানুষ, তিন জন মানুষ, চার জন মানুষের...ভালোবাসা। সর্বোপরি প্রতিটি সময়ে সহকর্মীদের ভালোবাসা। পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কে এম বাবর আশরাফুল হক, টেকনিক্যাল সম্পাদক ড. মেহযেব রহমান চৌধুরীসহ সবার ভালোবাসা আমাকে বা আমার মতো অনেককে বেঁধে রেখেছে। বিশেষ করে প্রধান সম্পাদকের ভালোবাসা দিন দিন আমার অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করছে। তার কাছ থেকে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ সাংবাদিকতা শিখছি। গর্বিত হই বাংলাদেশের বহুল আলোচিত সেই ‘ক্যাসেট কেলেঙ্কারি’র সাংবাদিক, দেশে বিদেশে আলোচিত সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করে। তার সাহচর্য্য বটবৃক্ষের ছায়া দেয়। তিনি পথ দেখান। এমন একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কাজ করার আনন্দ অন্যরকম।
গর্ব হয় এ জন্য যে, মানবজমিনকে টক্কর দিতে বাজারে একাধিক ট্যাবলয়েড পত্রিকা এসেছিল। তারা টিকে থাকতে পারেনি। তাদের পেছনে বড় অর্থের যোগানদাতা ছিলেন। তবু তারা হোঁচট খেয়ে পথ থেকে সরে গেছে। মানবজমিন টিকে আছে তার সমহিমায়। মাথা উঁচু করে। তাই দেশে, বিদেশে সমান জনপ্রিয় এই পত্রিকা। এর আকার, আকৃতি ট্যাবলয়েড এবং ছোট হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা এ পত্রিকাকে বলেন- ‘কুঞ্চে মরিচে ঝাল বেশি’। কুঞ্চে মরিচ বলতে গ্রামে ছোট্ট ছোট্ট এক জাতের মরিচকে বোঝায়। আসলেই মানবজমিন তেমনই। আকার ছোট হলেও এর ঝাল বেশি। যে রিপোর্ট মানবজমিন পরিবেশন করে, তা প্রকাশ করতে অনেকেই সাহস দেখাতে চান না। নির্ভয়ে অকুতোভয়ে সত্য বলার জন্য এ পত্রিকায়ই আছি।
দৈনিক মানবজমিনকে চাকরিক্ষেত্র মনে হয় না। মনে হয়, নিজের পত্রিকা। নিজের প্রতিষ্ঠান। এখানে আপনমনে, নিভৃতে কাজ করে যেতে পারি। ঘরে ফিরে যেমন আমার সংসার, অফিসটাও যেন তাই। সহকর্মীদের সঙ্গে কাজের ফাঁকে ফাঁকে দুষ্টুমি। গল্প। পারিবারিক এক আবহ। এরই মধ্যে ‘ বাংলারজমিন’ ডেস্কে কাজ করে চিনেছি ঢাকার বাইরের সহকর্মী সাংবাদিক ভাইদের। তারা মনে রাখেন, সুখে-দুঃখে ফোন করেন। এতে মনটা ভরে ওঠে। ‘বাংলারজমিন’ থেকে ‘মানবজমিন ডেস্ক’ সামলাতে এসে আরও ভালো লাগছে। প্রতিটি ক্ষণ আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি- সবকিছু সামনে চলে আসে সবার আগে।
ত্রিকোণমিতির জটিল অঙ্ক, রিয়েল এনালাইসিস, কমপ্লেক্স এনালাইসিস, হাইড্রোলজি, গসের সূত্র, কন্টরস থিওরাম, ওহমের সূত্র, কুলম্বের সূত্র, বয়েলস ল’, স্নেইলস ল’- পড়া এই আমার সাংবাদিক হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন। না হয়, হয়তো হতে পারতাম অন্যকিছু। স্কুলজীবন থেকে লেখার অভ্যাস পথ বাঁকা করে দিয়েছে। তাই সংবাদে বেশি আনন্দ উপভোগ করি। কারণ, এখানে জাতির কাছে দায়বদ্ধতা আছে। মানুষের সুখ-দুঃখের কথা আছে। সমাজ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্র, মানুষ- সবাইকে নিয়ে ভাবার জায়গা। সেই জায়গায় মানবজমিন ‘কারও তাঁবেদারি করে না’। নির্দ্বিধায় লিখে যেতে চাই মানুষের জীবনকাব্য।