আপন আলোয় মানবজমিন
একটি ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে সব সময়
মোরছালীন বাবলা , নির্বাহী পরিচালক, প্রতিদিনের বাংলাদেশ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার
বেশ দাপটের সঙ্গে জনকণ্ঠের নারায়ণগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করছি। ’৯৮ সালের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই দেখি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন। শিগগিরই বাজারে আসছে গুণী সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর সম্পাদনায় ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন। ট্যাবলয়েড পত্রিকা সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। জানতাম, বৃটেনে ট্যাবলয়েড পত্রিকার জনপ্রিয়তা অনেক। এক বড় ভাই সাংবাদিককে জিজ্ঞাসা করলাম ট্যাবলয়েড দৈনিক বলতে কী বুঝায়। তিনি বললেন, গতানুগতিক নিউজের বাইরে গিয়ে ভিন্ন মেজাজের নিউজগুলো প্রধানত ঠাঁই পেয়ে থাকে পত্রিকার পাতায়। একটু কৌতূহল আর আগ্রহ থেকে যোগাযোগ করলাম কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে অবস্থিত ওয়ালসো টাওয়ারে মানবজমিন অফিসে। বায়োডাটা জমা দিলাম। শামীম ভাই, কুদ্দুস ভাই, আবুল ভাই তখন বাংলার জমিন বিভাগে। তারা বললেন, নিউজ পাঠাতে। কিছুদিন নিউজ পাঠানোর পর নিয়োগ পেলাম মানবজমিনে। এ সময় শ্রদ্ধেয় প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ভাইয়ের সান্নিধ্য পেলাম। কিছুদিন কাজ করার পর নারায়ণগঞ্জ থেকে মতি ভাই স্টাফ রিপোর্টার করে ঢাকা অফিসে নিয়ে আসলেন আমাকে। সেই থেকে জাতীয় পর্যায়ে পথচলা শুরু আমার। কোনো নিউজ না বুঝলে মতি ভাই শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বুঝিয়ে দিতেন। বলতেন, ট্যাবলয়েড পত্রিকার নিউজ হবে সসি ধরনের। কিন্তু সসি শব্দটির অর্থ অনেক দিন বুঝি নাই। প্রধান প্রতিবেদক ফারাবী ভাইও খুব যত্নসহকারে একটি ভালো নিউজ তৈরিতে আমাকে দিনের পর দিন উৎসাহ যুগিয়েছেন। অপরাধ বিভাগে কাজ করতাম। সেভেন স্টার, থ্রিস্টার, তনাই মোল্লা, কালা জাহাঙ্গীর, কিলার আব্বাস, পিচ্চি জাহাঙ্গীর, টাইগার ফারুকসহ দাগি সন্ত্রাসীদের তখন দাপট ছিল রাজধানীজুড়ে। প্রতিদিনই এক বা একাধিক হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটতো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। একটি হত্যার ফলোআপ করতে গিয়ে দেখা যেতো আরেকটি বড় হত্যাকা- ঘটে গেছে। সকাল থেকে খেয়ে না খেয়ে ছুটতে হতো এসব খবরের পেছনে। মতি ভাই অথবা ফারাবী ভাই টেলিফোনে সবসময় খোঁজ খবর রাখতেন, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতেন। এ ছুটে চলায় কখনো ক্লান্তি কাজ করতো না। কারণ পরের দিন নিজ নামে বিশাল কাভারেজে ছাপা হতো এসব অপরাধের নিউজ। বার্তা সম্পাদক ছিলেন আহমেদ ফারুক হাসান। মানুষটি অনেক আগেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছেন। অসম্ভব রাগি হলেও ভালো একটি পত্রিকা পাঠকের হাতে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। মানবজমিনের শুরুটা হয়েছিল অনেক মেধাবীদের হাত ধরে। আজ বেশির ভাগ পত্রিকা কিংবা টিভি মিডিয়ায় ছড়িয়ে আছেন মতি ভাইয়ের হাতে গড়া সাংবাদিকরা। সাড়ে ৬ বছর কাজ করেছি পত্রিকাটিতে। এখনো সুযোগ পেলে মানবজমিনের পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখি। একটি ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে সব সময়।