আপন আলোয় মানবজমিন
মানবজমিন, আমার দাঁড়ানোর ভূমি
টুটুল রহমান, সম্পাদক, অপরূপ বাংলা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার
২০০৬ সালের কথা! মানবজমিনে কাজ শুরু করাটা আমার জন্য খুবই একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা। তখন দৈনিক সংবাদে বগুড়ার অফিসে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করি। চুক্তিভিত্তিক। এক বছরের চুক্তি যখন শেষ হলে চুক্তি নবায়ন হবে কিনা জানি না। এদিকে ঢাকার জীবনও খুব টানছে। পড়াশুনা শেষ। বগুড়ায় পড়ে থেকে লাভ কী। ঠিক তখই এপ্রিল মাসে বিজ্ঞাপনটি দেখতে পাই। জীবনবৃত্তান্ত পাঠালাম। মানবজমিন থেকে ডাক পেলাম।
প্রধান সম্পাদকের রুমেই ভাইভা হচ্ছে। আবার বুক কাঁপছে। এত বড় সম্পাদকের সামনে দাঁড়াবো। কী রেখে কী বলি। সংশয় কাটছে না। ডাক দিলো রুমে। সুবাসিত রুম। বুক সেলফে পরিপাটি করে রাখা নানান ধরনের দেশি-বিদেশি বই। ভরকে গেলাম আরও বেশি। মফস্বল থেকে এসেছি। ইংরেজি খুব একটা জানি না। শেষে যদি ইংরেজিতে প্রশ্ন শুরু করেন?
যা ভয় করেছিলাম! ইংরেজি দিয়েই প্রশ্ন করলেন? আপনি অনুবাদ অংশটা দেননি কেন? মতিউর রহমান চৌধুরীর প্রশ্ন।
-জ্বি আমি ইংরেজি খুব একটা ভালো জানি না। ভুল লেখার চেয়ে না লেখাই ভালো মনে করেছি।
মতিউর রহমান চৌধুরী বললেন, গুড। সবার দিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে বললেন, দেখছেন বুদ্ধিমান ছেলে ভুল লেখার চেয়ে না লেখাই ভালো মনে করেছে।
তারপরের প্রশ্ন-
সংবাদ ছাড়ছেন কেন?
-জ্বি আমি ঢাকায় বড় কোনো সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করতে চাই। আপনি অনেক বড় সম্পাদক। আপনার সঙ্গে কাজ করবো।
কোনো উত্তর দিলেন না।
পরের প্রশ্ন মতি ভাইয়ের-
বলুন তো মানবজমিনের সম্পাদক কে?
আমি বললাম, প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী।
মতি ভাই বললেন, আমি তো প্রধান সম্পাদকের নাম জানতে চাইনি। বললেন যে?
উত্তর দিলাম- মানবজমিনের নামটা এলে মতিউর রহমান চৌধুরীর নামটা আগে আসবে।
আর কোনো প্রশ্ন হলো না। মতি ভাই তার স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, আপনি আগামী মাসেই জয়েন করবেন। আমি ঢাকায় দাঁড়ানোর ভূমি পেলাম।
পহেলা মে শ্রমিক দিবসে অফিস বন্ধ থাকায় আমাকে জয়েন করতে হয়েছিল ২রা মে। চিফ রিপোর্টার ছিলেন সারোয়ার হোসেন। প্রচুর খাটতে হয়েছে। দুটো, তিনটা সংবাদ সম্মেলন। সরজমিন রিপোর্ট করতে হয়েছে। এসব নিয়ে সারোয়ার ভাইয়ের সঙ্গে কতো মনোমালিন্য হয়েছে। তর্ক হয়েছে। এত বছর পর এসে বুঝতে পারি সাংবাদিকতার আঁতুড় ঘর মানবজমিনে যারা কাজ শুরু করবে, তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কিছু দিনের মধ্যে পেলাম রয়টার্সের সিরাজুল ইসলাম কাদির ভাইকে। অসাধারণ মানুষ। নিপাট ভদ্রলোক। বিট অর্থনীতি হওয়ায় নানা জায়গায় পাঠাতেন। ঘর্মাক্ত শরীরে লিখতে বসলে পিঠে হাত দিয়ে বলতেন, এত এসাইনমেন্ট করাই বলে আমার ওপর খুব রাগ হও, তাই না? বোকা ছেলে কেন পাঠাই জানো, অর্থনীতিটাকে তুমি যাতে বুঝতে পারো। অর্থনীতির শব্দগুলোকে যেন আয়ত্ত করতে পারো।
অনেকদিন দেখেছি রিপোর্ট লিখছি, মতি ভাই চুপিচুপি পিছনে এসে দাঁড়িয়ে লেখার ভুলভাল ধরিয়ে দিচ্ছেন। এত বড় সম্পাদক অথচ কোনো দূরত্ব নেই রিপোর্টারদের সঙ্গে। বন্ধুসুলভ মতি ভাই সবার সুখ-দুঃখের খবর রাখেন। অসংখ্য ঘটন-অঘটন আছে আমার মানবজমিনে। তবে শিখেছি প্রচুর। যা স্মৃতির মণিকোঠায় সযত্নে তুলে রাখা আছে। লিখবো একদিন। জয়তু মানবজমিন। দীর্ঘজীবী হোক।
পাঠকের মতামত
পরিবেশ দূষণের ফলে অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম গুলো মানুষের বিশ্বাস হারিয়েছে বেশ আগেই তাই অনলাইনে যখন পত্রিকা পড়ি তখন শুরুটা করি মানবজমিন দিয়ে। যতদিন সঠিক পথে থাকবে ততদিন পাশে থাকব। শুভ কামনা নিরন্তর প্রিয় মনিবজমিন।