ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আপন আলোয় মানবজমিন

কাজ না করেও পেলাম বেতন

গাজী আসাদুজ্জামান, বিভাগীয় প্রধান, সম্পাদনা বিভাগ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার
mzamin

তৎকালীন বাংলাবাজার পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী চেয়েছিলেন পাঠকের হাতে ব্যতিক্রমী একটি পত্রিকা তুলে দিতে। সেই লক্ষ্যে তিনি দেশের বাঘা বাঘা সাংবাদিকদের নিয়ে শুরু করেন কাজ। সূচনালগ্নে ‘পত্রিকা জগতে’ আলোড়ন সৃষ্টি করে। ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। এক পর্যায়ে আর্থিক টানাপড়েনের কারণে বাংলাবাজার পত্রিকাটি তিনি কসকো গ্রুপের কর্ণধার জাকারিয়া সাহেবের কাছে বিক্রি করে দেন। দিনক্ষণটি মনে করতে পারছি না। যতদূর মনে পড়ছে ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হবে। বাংলাবাজার পত্রিকায় নিয়োগ পেয়েছি। পত্রিকায় আমার কর্মকাল সবেমাত্র দুই দিন শেষ হয়েছে। তিন দিনের দিন এক অঘটন ঘটে গেল।

বিজ্ঞাপন
বাংলাবাজার পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী আমাদের সেকশনে এসে রাগান্বিত স্বরে বললেন, এই প্রুফটি কে দেখেছে? আমি বললাম- এটা আমি দেখেছি। তিনি রাগান্বিত স্বরে বললেন আপনি জানেন না এখানে ‘আঃ লীগ’ যায় না? ‘আওয়ামী লীগ’ যাবে। তাঁর এই রাগান্বিত চেহারা দেখে সেদিন মনে মনে ভাবলাম আমার চাকরিটা বুঝি এবার আর থাকছে না। এক রকম ধরেই নিয়েছিলাম কাল হয়তো বলে দিবেন আপনাকে আর আসতে হবে না। কিন্তু না, ঘটনা সেদিকে যায়নি।
আমাদের মানবজমিনের সম্পাদনা সহকারী বিভাগের এক সময়ের সদস্য মরহুম মুকুল তালুকদার বলতেন- আমি নাকি মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে যমের মতো ভয় পাই।

কথাটি যে নেহায়েত অসত্য নয়- এটা হলফ করে বলা যায়। সত্যি বলতে কী- আমি মতি ভাইকে সত্যিই ভয় পাই। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমি ভয়ে ভয়ে থাকি। জড়সড় হয়ে পড়ি। গলার স্বর আড়ষ্ট হয়ে পড়ে। গলা থেকে শব্দ বের হতে চায় না। কথা গুলিয়ে যায়। যা বলতে যাবো তার রাশ টেনে ধরি। কি বলতে কি বলে ফেলবো। তাই হ্যাঁ-না’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি। টুকটাক দু’একটা শব্দের মধ্যে কথা সেরে দ্রুত চলে আসি। এ জন্য আমাকে আমার বিভাগের  সহকর্মীদের কথা শুনতে হয়। সহকর্মীরা বলেন আপনি প্রধান সম্পাদককে একটা লোকের কথা বলতে পারেন না, এই যে স্বল্প লোকের কারণে আমাদের প্রতিদিন প্রেসার নিয়ে কাজ করতে হয়। এটা ব্রেনের কাজ। এত প্রেসার নিয়ে কাজ করা যায় না। যদিও আমি প্রেসার নিয়ে কাজ করি। কিন্তু আমার ব্যাপার আলাদা, অন্যদের সঙ্গে তুলনা হয় না। 
মাঝে মাঝে ভাবি যার সঙ্গে কথা বলতে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকি, কথা গলার মধ্যে আটকে যায়। জড়সড় হয়ে থাকি- তার সঙ্গে তিন দশক কী করে একই ছাতার নিচে কাটিয়ে দিলাম। এটা কী করে সম্ভব হয়েছে। কী এমন ম্যাজিক কাজ করেছে। বলতে দ্বিধা নেই, এটা সম্ভব হয়েছে তাঁর ভালোবাসার কারণেই। তাঁর স্নেহ  ও ভালোবাসার কমতি ছিল না বিধায় আমি তাঁর প্রতিষ্ঠানে ত্রিশ বছর পার করতে পেরেছি।

এখানে একটি ঘটনার উল্লেখ না করলেই নয়। ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে যখন বাংলাবাজার পত্রিকায় ৭ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়, তখন আমি এই পত্রিকার ডেপুটি ইউনিট চিফ আর মুজাহিদ আনসারী ইউনিট চিফ। সাংবাদিক কর্মচারীদের আন্দোলন তখন তুঙ্গে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বাংলাবাজার পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী আমাদের চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে তাঁর পদ ত্যাগ করে চলে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে তার পথ অনুসরণ করে গুটিকয় সাংবাদিক কর্মচারী বাদে বেশির ভাগ সাংবাদিক কর্মচারী মতি ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসেন। এই যে চলে আসা এটা তাঁকে ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। আর তাঁর যে আমাদের চাকরিচ্যুতির কারণে চলে আসা এটা আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসারই প্রকাশ।

বাংলাবাজার থেকে চলে এসে আমরা হারিনি। তাঁর ভালোবাসার টানে চলে এসে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হইনি। কাজ না করেও মাসের শেষে বেতন পেয়েছি। তিনি তাঁর ছাতার নিচে আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। সাপ্তাহিক মানবজমিন এক সময় এশিয়ার মধ্যে প্রথম ট্যাবলয়েড পত্রিকার সম্মান পেয়ে দৈনিকে রূপান্তরিত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে তাঁরই কল্যাণে। 
আগামীর মানবজমিন সুন্দর হউক, সফল হউক সেই প্রত্যাশায় রইলাম। পরিশেষে মানবজমিনের এই রজতজয়ন্তীর দিনে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী ও টেকনিক্যাল সম্পাদক মেহযেব রহমান চৌধুরীর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। মানবজমিন দীর্ঘজীবী হউক, জয়তু মানবজমিন।

আপন আলোয় মানবজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

আপন আলোয় মানবজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status